ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ভাবিকে হত্যার পর লাশ ছিনতাই করল দেবর!

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভাবিকে হত্যার পর লাশ ছিনতাই করল দেবর!

জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছী ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদের বিরুদ্ধে তার ভাবি বিলকিস বানুকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি-১ আদালতে বিলকিস বানুর বড় বোন মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

ওই মামলায় ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদ ও তার স্ত্রী ফাতেমাকে আসামি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইকবাল বাহার মামলাটি আমলে নিয়ে জয়পুরহাট থানায় এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিলকিস বানু অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিন সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছিলেন। বিলকিস বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে বসত বাড়ির পাশে একখণ্ড জমি কেনেন। ওই জমি তার দেবর আবু বায়েজীদ এবং তার স্ত্রী ফাতেমা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশে প্রায় বিলকিস বানুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল।

অভিযোগে বলা হয়, আবু বায়েজীদ প্রভাবশালী হওয়ায় বিলকিসের স্বামীও তাকে কিছু বলতে পারত না। বিলকিস নিরুপায় হয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পর আবু বায়েজীদ ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিলকিসকে বেদম মারধর করেন। এতে বিলকিস অজ্ঞান হয়ে পড়লে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে বিলকিস মারা যান এবং লাশটি তার পরিবার নিয়ে আসে। 

মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, লাশে আঘাতের চিহ্ন দেখে জয়পুরহাট থানা পুলিশকে খবর দেয় তার পরিবার। তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ বিলকিসের পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। ময়নাতদন্ত শেষে বিলকিসের ইচ্ছা অনুয়ায়ী তাকে মায়ের বাড়ি ধামইরহাট নিয়ে যাওয়ার পথে বায়েজীদের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন তাদের পথরোধ করে এবং সঙ্গে থাকা লোকজনকে পিটিয়ে লাশ ছিনতাই করে নিজ এলাকায় দাফন সম্পন্ন করে। 

পরে থানায় খবর নিয়ে জানা যায়, আগের দেয়া অভিযোগটি মামলা রেকর্ড করা হয়নি। এ ব্যাপারে আবু বায়েজীদ এবং তার লোকজন বাদী মর্জিনা বেগমকে মোবাইলে হুমকি দেয় ও মামলা করলে তার মেয়েকে অপহরণেরও হুমকি দেয়। পরে বিলকিসের বড় বোন মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে জয়পুরহাট আদালতে মামলা করেন। 

মামলার বাদী মর্জিনা বেগম বলেন, প্রভাবশালী বায়েজীদের বিরুদ্ধে বিলকিস নিরাপত্তা চেয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭/১১৭ ধারায় মামলা করেন। প্রভাবশালী বায়েজীদ সুকৌশলে বিলকিসকে ভয়ভীতি ও প্রভাবিত করে  ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। পর দিন ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি বিলকিস বানু মারা যান। এরপর থানায় অভিযোগ করে বায়েজীদসহ তাদের আসামি করতে বললে পুলিশ আমাদের অসহযোগিতা করে। বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করা হয়। মামলার পর থেকে বায়েজীদ ও তার লোকজন আমাদের পরিবারকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং বিলকিসের ছেলেদের বায়েজীদ ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছে। 

এ ব্যাপারে একাধিকবার ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদকে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানাতে মামলার তথ্য নিতে গেলে, থানা চত্বরে তাকে দলবলসহ দেখা যায়। সেখানে তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি এসব সত্য নয় বলে দ্রুত সটকে পড়েন। 

জয়পুরহাট থানার ওসি শাহরিয়ার খান বলেন, আদালতের এজাহারটি এসেছে কি না তা দেখতে হবে। অবশ্যই আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাজীপুর কথা