ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদের দিন ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণ!

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ২৩ মে ২০২০

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদের দিন ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণ!

আমাদের অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন আসে, ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন দিন ঈদ বা রোজা কেন হয়?
অনেকেই সৌদি আরব এর সাথে মিল রেখে একই দিনে সাওম (রোজা) পালন করেন এবং একই দিনে ঈদ উৎযাপন করেন।
কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক সময় রেখা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে সারা বিশ্বে একই দিনে সাওম (রোজা) পালন বা ঈদ উদযাপনে স্পষ্ট কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। যা শরীয়তের সাথেও সাংঘর্ষিক।

ভৌগোলিক কারণ:

১. দ্রাঘিমা রেখাঃ পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণে মোট ৩৬০ টা দ্রাঘিমা রেখা কল্পনা করা হয়। একটা দ্রাঘিমা রেখা থেকে পাশের দ্রাঘিমা রেখার মাঝে সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট। একই দ্রাঘিমাংশএ কোন সময় এর পার্থক্য নেই।
২. International Date Line (IDL) : আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা যা ১৮০° দ্রাঘিমাংশ এ অবস্থিত। যদিও একেবারে সরল রেখা না। অনেক ক্ষেত্রে স্থল ভাগ পাশ কাটিয়ে কল্পনা করা হইছে। এই বিষয়টা বুঝা খুবই জরুরি।
৩. দিন শুরু : কখন থেকে নতুন দিন বা তারিখ শুরু হবে। এইক্ষেত্রে international standard হইলো রাত ১২ টার পরে নতুন দিন শুরু। ইসলামিক হিজরি সন অনুযায়ী সুর্যাস্ত এর পর থেকে (মাগরিব এর ওয়াক্ত শুরু হইলে।
৪. সময় নির্ধারণ এর স্থান: আন্তর্জাতিক মান হচ্ছে গ্রিনিচ মান মন্দির যুক্তরাজ্যের লন্ডনে।

এখন ইসলামি হিজরি সনের ক্ষেত্রে উপরের ১ (দ্রাঘিমাংশ) ও ৪ (সময় নির্ধারণ এর স্থান) এর কোন ঝামেলা নাই।৷ কিন্তু পার্থক্য
IDL ( International Date Line) এবং দিনশুরু হিসাব নিয়ে। এর মাঝে প্রধান ঝামেলা হইলো IDL ( International Date Line)।

ইসলামি হিজরি সন হয় চন্দ্র মাসের হিসাবে। মানে নতুন চাদ দেখা গেলে নতুন মাস শুরু। এটি IDL ( International Date Line) মেনে চলে না বা চলা সম্ভব ও না। কেন এমন হয় তা ভাল ভাবে বুজতে হলে, আন্তর্জাতিক সময় রেখা সম্পর্কে আগে জানতে হবে।

Related image

আন্তর্জাতিক সময় রেখা কী এবং তার প্রয়োজনীয়তা:

এক কথায় বলতে গেলে পৃথিবী যেহেতু গোলাকার তাই তারিখ গণনা শুরুর জন্য একটা স্থান কল্পনা করা হয়। যা ১৮০° দ্রাঘিমাংশ কে ধরা হয়।
( বিস্তারিত : https://www.google.com.bd/amp/s/www.livescience.com/amp/44292-international-date-line-explained.html )

সময় রেখা স্থল ভাগ বাদ দিয়ে শুধু জলভাগের উপর দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হইছে যদিও তা কিছু দ্বীপের উপর দিয়ে গেছে।
IDL ( International Date Line) এর একটা বৈশিষ্ট্য হল কেউ এর পূর্ব দিক থেকে এই রেখা ক্রস করে পশ্চিমে গেলে তার ক্যালেন্ডার এর দিন গনণায় একদিন যোগ করতে হবে। মানে সে রবিবার ১০ জানুয়ারি যদি পূর্ব দিক থেকে এই লাইন ক্রস করে পশ্চিমে যায় তাহলে সে হিসাব করবে সোমবার ১১ তারিখ। পশ্চিম থেকে পূর্বে গেলে ঠিক উল্টা হবে অর্থাৎ একদিন বিয়োগ করতে হবে।

এখন এই তারিখ রেখা টা স্থল ভাগে কল্পনা না করার একটা সুবিধা হল আমাদের সাধারণ ভ্রমণের সময় এই নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। যেমন মনে করি আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটা বা IDL (International Date Line) গাবতলির উপর দিয়ে গেছে। আমার বাড়ি সাভার যা রেখার পশ্চিমে। অন্যদিকে আমার ভার্সিটি ঢাকায় যা রেখার পূর্বে। এখন আমি যদি রবিবার ১০ জানুয়ারি সকালে সাভার থেকে রওনা দেই ক্লাস করতে গাবতি (সময় রেখা) ক্রস করে ঢাকায় যখন পৌছাব তখন আমি আসলে শনিবার ৯ জানুয়ারি পাব (ভার্সিটির অফ ডে!!)।

এই ঝামেলা এড়ানোর জন্যই আন্তর্জাতিক সময় রেখা কল্পনা করা হয় ১৮০° দ্রাঘিমাংশে যার মেক্সিমাম জলভাগ এর উপর দিয়ে।

হিজরি ক্যালেন্ডার এর সাথে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার (আমরা যেই ইংলিশ ক্যালেন্ডার ফলো করি) এর মেইন সমস্যা IDL (International Date Line) এবং দিন শুরুর সময় হিসাব নিয়ে।

হিজরি সনের তারিখ হিসাব শুরুর জন্য একটা আন্তর্জাতিক সময় রেখা দরকার। কিন্তু এটি যেহেতু চাঁদ দেখার (নতুন চাঁদ) সাথে সম্পর্কিত তাই
IDL (International Date Line) এর সাথে হিজরি তারিখ হিসেবের সময় রেখার মিল নাই। চাঁদ পৃথিবীর চার পাশে একবার ঘুরতে সময় নেয় ২৯.৫ দিন প্রায়। পৃথিবীর আন্নিক গতির ফলে সব দেশের মানুষ একই দিনে চাঁদের একই দশায় দেখে।
(বিস্তারিত:https://astronomy.stackexchange.com/questions/20947/is-the-full-moon-full-everywhere-on-the-planet)

অবশ্য উত্তর গোলার্ধে মানুষ যা দেখে দক্ষিণ গোলার্ধে মানুষ দেখে তার মিরর রিফ্লেক্স (দর্পণ প্রতিবিম্ব) বা উল্টা।

একই দশায় একই দিনে দেখলেও ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ কেন? ভিন্ন দিনে চাঁদ দেখা যায় কেন?

নতুন চাঁদ যেই দেশে প্রথম দেখা যায় সেই দেশ বা স্থান থেকেই তারিখ হিসাব গণনা করতে হবে। মানে তারিখ গণনার ক্ষেত্রে হিজরি হিসাব আর আমাদের প্রচলিত আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার মিল নাই।

এখন মনে করি বাংলাদেশ সৌদি আরব এর মাঝামাঝি কোন এলাকায় প্রথম নতুন চাঁদ দেখা যায়। মানে সেই স্থান থেকেই তারিখ গণনা শুরু করতে হবে।৷ ছবিটার লাল মার্ক কল্পনা করি।

এইবার আগের IDL( International Date Line) এর থিওরি চিন্তা করি মানে কেউ যদি সৌদি থেকে বাংলাদেশ আসে মানে তারিখ রেখার পশ্চিম থেকে পূর্বে তাহলে তাকে এক দিন বিয়োগ করতে হবে। আর বাংলাদেশ থেকে সৌদি গেলে অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিম গেলে একদিন যোগ করতে হবে।

তাহলে ফাইনাল হিসাব দাড়ালো বাংলাদেশ আর সৌদি আরবে আসলে একই দিন ঈদ হইতেছে। অর্থাৎ সকাল ৭ টা সৌদি আরবে ঈদের নামাজ পড়তেছে সকাল ১১ টা বাংলাদেশ এ রোজা চলে আরো একদিন অপেক্ষা ঈদের জন্য।

সৌদির সাথে একই দিনে ঈদ উদযাপন এটা আসলে ভুল। যারা এই দাবি করে তারা আসলে বলতে পারে প্রচলিত তারিখ রেখার সাথে মিল রেখে একই দিনে ঈদ উদযাপন। সেই ক্ষেত্রে বলা যায় চন্দ্র মাসের হিসাব করে ইসলামিক standard ফলো করে কেনো আবার প্রচলিত আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার সাথে ঈদ মিলানো দরকার? তাও একই দিনে ঈদ হইতেছে না সম্পূর্ণ বিশ্বে।

এই বিষয়ে রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটা হাদিসঃ

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ رَمَضَانَ فَقَالَ لاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلاَلَ وَلاَ تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ

‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৬)

গাজীপুর কথা