মানুষ, সভ্যতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর ভাষা- গড়ে ওঠে প্রায় একসঙ্গে, বেড়ে ওঠা, নতুন পৃথিবী এরা একসঙ্গেই গড়ে তোলে। কোনো জাতির নিজস্ব পরিচয় বলতে ভাষা, সংস্কৃতি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। তবে দিন বদলায়, কালের আবর্তনে হারিয়ে যায় অনেককিছু আবার বদলেও যায়। তেমনি বদলায় ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। পৃথিবী থেকে অনেক ভাষা ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে, এখনো অনেক ভাষাই বিলুপ্তির পথে। আমরা এটাও জানি যে, প্রতি ১৫ দিনে একটি করে ভাষা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই হারানোর মাঝেও সেই প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছু ভাষা দাপটের সঙ্গে বহাল তবিয়তে রয়েছে। সেই প্রাচীনতম কিছু ভাষা নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের আলোচনা-
তামিল ভাষা
তামিল ভাষার উৎপত্তি সেই ৩০০-২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। এখন পর্যন্ত টিকে রয়েছে, এমন ভাষার মধ্যে এ উপমহাদেশের তামিল ভাষাটিই সবচেয়ে প্রাচীন। সারাবিশ্বের প্রাচীন ভাষার মধ্যেও এর অবস্থান শীর্ষে। প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত তামিল ভাষার ইতিহাস পাওয়া যায়। তবে বিশ্বাস করা হয় এ উৎপত্তি ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮ কোটি মানুষ তামিল ভাষায় কথা বলে।
গ্রিক ভাষা
প্রাচীন ভাষার মধ্যে গ্রিক ভাষা অন্যতম। উৎপত্তি ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। একটা সময় ছিল যখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদরা গ্রিক ভাষাতেই ভাবতেন, কথা বলতেন এবং লিখতেন। বর্তমানে গ্রিস এবং সাইপ্রাস নিবাসী প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলেন, লেখেন। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যতম সরকারি ভাষাও বটে।
সংস্কৃত ভাষা
সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। আমাদের পূর্বপুরুষরা আগে ভাবতেন, এই ভাষাতেই নাকি ঈশ্বররা কথা বলতেন। ভারতের এই প্রাচীনতম ভাষার উত্পত্তি প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সংখ্যায় যদিও কম, তবু এখনো বেশকিছু মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। সংস্কৃতের প্রভাব পশ্চিমি বহুভাষার ওপরেও রয়েছে
চীনা ভাষা
উৎপত্তি ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের শেখা প্রথম ভাষাই হলো চীনা ভাষা। পৃথিবীর প্রায় ১২০ কোটি মানুষ চীনা ভাষাকেই তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে বিবেচনা করেন। শাং সাম্রাজ্যের শেষের দিকে প্রায় ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই ভাষার উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।
হিব্রু ভাষা
উৎপত্তি ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। অনেকেই বিশ্বাস করেন গত পাঁচ হাজার বছর ধরে হিব্রু ভাষার ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই এর উপস্থিতির নিদর্শন পাওয়া যায়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৯০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন।
লাতিন ভাষা
উৎপত্তি ৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আজও এই ঐতিহ্যবাহী ভাষাটি তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। সংস্কৃতের মতোই লাতিন ভাষাও অন্যান্য ভাষার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। এমনকি রোমান সাম্রাজ্যে এর উপস্থিতির কথা জানা যায়। এখনো পোল্যান্ড এবং ভ্যাটিকান সিটিতে সরকারি ভাষা লাতিন এবং বিশ্বের কয়েক লাখ মানুষ এই ভাষা শেখেন।
আরবি ভাষা
আরবি যথেষ্ট পুরনো এবং সমৃদ্ধ ভাষা। এর উৎপত্তি ৪১২ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমানে সারাবিশ্বের প্রায় ২৯ কোটি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলেন। আরবি ভাষা বহু প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। তবে এই ভাষার প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় ৫১২ খ্রিস্টাব্দে। মধ্যপ্রাচ্যের বহুদেশ যেমন ইউএই, সৌদি আরব, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, ইসরায়েল, মিসর, জর্ডান, কুয়েত এবং ওমানের সরকারি ভাষা আরবি।
গাজীপুর কথা