ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাংলাদেশে এসে ম্যান্ডেলা বললেন, ‘আম কই?’

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১৮ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশে এসে ম্যান্ডেলা বললেন, ‘আম কই?’

বাংলাদেশে একবারই এসেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা। দিনটি ছিল ১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
তিনদিনের সেই সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি ছিলেন ঢাকায় তখনকার হোটেল শেরাটনে, যা বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে পরিচিত।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির তখন ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। ম্যান্ডেলার সঙ্গে তার হোটেল কক্ষে দেখা করতে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ জমির। হোটেল কক্ষে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক বিষয় নিয়ে মোহাম্মদ জমিরের সঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলার কথা হয়।

মোহাম্মদ জমির বলেন, আলাপে তিনি অনেক গুরুত্ব দিলেন। তার একটি হচ্ছে দারিদ্র বিমোচন। তিনি বললেন, দরিদ্র যারা আছে, তারা শুধু আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ভুগছে না, তাদের শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে হবে। আরো বললেন, যারা নিপীড়িত, তাদের সহযোগিতা দিতে হবে, যাতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

আলাপের এক পর্যায়ে মোহাম্মদ জমিরের কাছে আম খেতে চেয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। দুজনের আলাপচারিতা ছিল এরকম—

মেন্ডেলা: আমি শুনেছি আপনি আমের কথা বলেছিলেন এক জায়গায়। তো কই, আম কই?

জমির: এখন তো মার্চ মাস, আম হবে না। আপনি যদি মে বা জুন মাসে আসেন, তাহলে আম খাওয়াতে পারি। 

তখন মেন্ডেলা খুব হাসলেন। আবার বললেন, তাহলে এ মাসে আর আম পাওয়া যাবে না?

ওটাই ছিল ম্যান্ডেলার সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশের আম আর ম্যান্ডেলার খাওয়া হয়নি। ২৭ মার্চ নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আবার ফিরে যান।

একজন মেন্ডেলা

নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন আজ। ১৯১৮ সালের এই দিনে ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

নেলসন ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি উপনিবেশ-বিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

ম্যান্ডেলা ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন ও ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

মহাত্মা গান্ধির অহিংস দর্শন দ্বারা প্রথম জীবন থেকেই প্রভাবিত ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধির অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ খ্রস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেফতার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে। তবে মামলার শেষে সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন। 

বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কারণে ১৯৬২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তাকে রোবেন দীপে কারাবন্দি থাকতে হয়। ১৯৯০ এর ১১ ফেব্রুয়ারিতে কারামুক্ত হন তিনি। পরে শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ দূর করেন আফিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস- এএনসি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৩ সালে এ কিংবদন্তি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

২০১৩ সালে ৫ ডিসেম্বর বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়ে বিদায় নেন মানুষের সমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবনজুড়ে ত্যাগ স্বীকার করে যাওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশেও তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছিল।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন