ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ‘শেখ জামে মসজিদ’

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৮ মার্চ ২০২১

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ‘শেখ জামে মসজিদ’

উত্তর জনপদের নীলফামারী তৎকালীন সময় এই মহকুমা শহরটির কোন জৌলুস ছিল না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নীলফামারীর মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ আর জীবন সংগ্রামের কাহিনী এক বেদনাবিধুর মহাকাব্য। এই মহকুমা শহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন ১৯৭০ সালের ২৩ অক্টোবর। প্রয়াত নেতার জন্মশতবার্ষিকীতে বুধবার বাদ জোহর স্থানীয় ‘শেখ জামে মসজিদে’ জেলা প্রশাসনের পক্ষে অনুষ্ঠিত হলো মিলাদ ও দোয়া মহফিল। এতে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই এলাকার শত শত মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সেই দিনে উক্ত মসজিদে নামাজ আদায়সহ তার স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়।

নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুচিয়ার মোড় ফকির পাড়া গ্রামে ৫১ বছর আগে একটি মসজিদের বুনিয়াদ স্থাপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নাম অনুসারে ওই মসজিদের নামকরণ করা হয় ‘শেখ জামে মসজিদ’। সেখানে নামাজও আদায় করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান।

পশ্চিম কুচিয়ামোড় ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল শেখ (৭২) বলেন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের প্রচারে অংশ নিতে বঙ্গবন্ধু নীলফামারী এসেছিলেন। তখন আমার বয়স ছিল ১৪-১৫ বছর। গাড়ি থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু চারচালা কুঁড়েঘরে নামাজ আদায় করতে আসেন। তখন কাঁচা ঘরটিতে নামাজ আদায় করতেন অনেকে, কোন নাম ছিল না মসজিদের। খড়ের ঘর দেখে বঙ্গবন্ধু আমার চাচা উমর শেখের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার দল ক্ষমতায় এলে পাকা মসজিদ বানিয়ে দেবো। এরপরই মসজিদটির নতুন নাম রাখা হয় শেখ জামে মসজিদ। এরপর তিনি নীলফামারীতে জনসভায় লাখো জনতার মাঝে বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষ করে ডোমার হয়ে রংপুরে জনসভা শেষে জিপগাড়িতে ঢাকার উদ্দেশে চলে যান।

একই গ্রামের বাসিন্দা ওসমান গনি টুনু (৭২) বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক কাতারে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। নামাজ শেষে তিনি সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক ও মোলাকাত করে মসজিদের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সেদিনই সর্বসম্মতিক্রমে নামকরণ করা হয় শেখ জামে মসজিদ। এ সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, একদিন এই মসজিদটি পাকা মসজিদ গড়ে দেব। আজ সেই মসজিদটি পাকা করে গড়ে দিয়েছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হয়ে সেই সময় মসজিদ কমিটির কাছে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে মসজিদ কমিটি বাঁশের চাটাইয়ের মসজিদটি প্রথম ধাপে ইট সিমেন্ট দিয়ে ২০ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ হাত প্রস্থের একটি পাকা টিনশেড মসজিদ ঘর নির্মাণ করেছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অনুদানে এখন মডেল মসজিদে পরিণত হয়েছে। মসজিদটি বর্তমানে ৬৪ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয় এখানে। আগেই এর নামকরণ করা হয়েছিল শেখ জামে মসজিদ। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিমাখা শেখ জামে মসজিদটি নীলফামারীর ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এখন ইতিহাসের স্মারক।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন