ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ফাঁসি কার্যকরের পরও ১৫ বছর বেঁচে ছিলেন এই নারী

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১১ এপ্রিল ২০২০

ফাঁসি কার্যকরের পরও ১৫ বছর বেঁচে ছিলেন এই নারী

রহস্যময় এক নারী। খুনের দায়ে তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। যথারীতি তাকে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে ভাগ্যের কি চমক! বেঁচে যান মিথ্যা অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারী। এ যেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তারই এক খেলা। বলছি অ্যান গ্রিনের কথা। তিনি নিজের সন্তানকে খুনের দায়ে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হন অতঃপর কার্যকর করা হয় তার মৃত্যুদণ্ড।

অ্যান গ্রিনের প্রথম দিকের জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, ১৬২৭ সালে অক্সফোর্ডশায়ারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এরপর তার জীবন পাল্টে যায় যখন তিনি অ্যান স্যার থমাস রিডের দাসী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। অক্সফোর্ডশায়ারের ডানস ট্যুতে স্যার থমাসের বাড়িতেই থাকতেন অ্যান গ্রিন। স্যার থমাসের নাতি ছিলেন জেফরি রেড। যিনি অ্যানকে পছন্দ করতেন। 

এরপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে অ্যানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এরপর অজান্তেই অ্যান গ্রিন গর্ভধারণ করেন। তখন তার বয়স ২২ বছর। এর ছয় মাস পর অ্যান আকস্মিকভাবে সন্তান জন্ম দেয়। ভয় পেয়ে সেখানকার অন্যান্য দাসীরা অ্যানের সদ্যজাত শিশুকে পাশেই এক ছোট্ট আউটহাউজে মাটিচাপা দেয়। এর এক মাসের মধ্যেই শিশুর মাটিচাপা দেয়ার রহস্য ভেদ হয়ে যায়। জেনে যায় স্যার থমাসও।

 

এমনই এক আউটহাউজে অ্যানের সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল

এমনই এক আউটহাউজে অ্যানের সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল

১৬৫০ সালের ডিসেম্বরে অ্যান গ্রিনকে শিশু হত্যার অপরাধে আদালতে তোলা হয়। অক্সফোর্ডে তার বিচার চলে। মৃত শিশুর পোস্টমর্টেমের পর চিকিৎসকরা জানায়, শিশুটিকে জীবন্ত অবস্থায় মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আদালত অ্যানকে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। এরপর তাকে কারাগারে রাখা হয়। অবশেষে ১৪ ডিসেম্বর অ্যানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।

মৃত্যুদণ্ডের পরও যেভাবে বেঁচে যান অ্যান গ্রিন

মৃত্যুদণ্ডের দিন অ্যানকে নিয়ে তোলা হয় ফাঁসিকাষ্ঠে। ফাঁসি দেয়ার নিয়ম হলো যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধী মৃত্যুবরণ করবে না ততক্ষণ তাকে ঝুলিয়েই রাখতে হবে। অ্যানের ফাঁসি কার্যকরের সময়ও একই নিয়ম মানা হয়েছিল। তাকে প্রায় আধা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। অতঃপর তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ টের পেয়ে জল্লাদ ফাঁসির দড়ি কেটে দেয়।

একটি কফিনে ঢুকিয়ে অক্সফোর্ডের সার্জন উইলিয়াম পেট্টির হাতে তুলে দেয়া হয় অ্যানকে। অতঃপর সার্জন পেট্টি যখন অ্যানের দেহটি কফিন থেকে বের করে পোস্টমর্টেম করবেন ঠিক তখনই টের পেলেন তার শ্বাস চলছে। তবে অজ্ঞান হয়ে রয়েছে অ্যান। এরপর সার্জন ও তার অন্যান্য সহকর্মী অ্যানকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন।

 

মৃত্যুদণ্ডের প্রতীকী ছবি

মৃত্যুদণ্ডের প্রতীকী ছবি

অ্যান গ্রিনের পুনরায় জীবন ফিরে পান

প্রথমে তারা অ্যানের মুখে স্পিরিটজাতীয় কিছু ঢেলে দেন। এরপর অ্যানের কাশি হয়। তার আঙ্গুলগুলো শক্ত হয়ে বেঁকে গিয়েছিল সেগুলো টেনে সোজা করার প্রচেষ্টা চলছিল। ফাঁসি দেয়ার ফলে অ্যানের গলার ভেতরের ছোট ছোট টিস্যুগুলো ছিঁড়ে যায়। 

জ্ঞান ফেরার পর অ্যান আচমকাই রক্তিবমি করেন। তারপর সার্জনরা অ্যানের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন। একটি গরম বিছানায় অ্যানকে রেখে তার মাথা, ঘাড়ে এবং হাত ও পায়ের তালুতে তেল দিয়ে অনবরত ম্যাসেজ করা হয়। তার বুকে লাগানো হয় হিটিং প্লাস্টার। 

সার্জনদের প্রচেষ্টায় অতঃপর অ্যান তার জীবন ফিরে পায়। অল্প সময়ের মধ্যেই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। তাকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতিও দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই লোক জানাজানি হয়ে যায় যে অ্যান পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছেন। অনেক মানুষ তাকে দেখতে ভিড় করেন। এই সুযোগে সার্জন পেট্টি তাদের কাছ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। 

এই অর্থ দিয়েই যাতে অ্যানের খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা হয় সেই প্রচেষ্টা চালান পেট্টি। এরপর এই চিকিৎসকই অ্যানের জামিনের বিষয়ে আদালতে আবেদন জানান। অতঃপর অ্যান তার উপর আরোপিত মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পায়। পরবর্তীতে অ্যান বিবাহ করেন এবং তিনি তিন সন্তানের জননী হন। ১৬৬৫ সালে চতুর্থ সন্তান প্রসবকালে অ্যান মারা যান।

সূত্র: অ্যানসায়েন্টঅরিজিন

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন