ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৭ মার্চ ২০২০

প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প

‘একন বাঁশের দাম বেশি। আগের মতোন বাঁশ পাওয়া যায় না। বাঁশ যকন পাওয়া যায়, তকন কাম হয়। আর পাওয়া না গেলে কামও হয় না। হামরা গরিব মানুষ। কাম না থাকলে হামরা ভাত পামো কোনতে?’

কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌড়ী ইউনিয়নের বেলঘরিয়া গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের বিধবা পানো (৫০)। যিনি পেশায় একজন বাঁশ শিল্পের কারিগর।

নওগাঁ সদর থেকে পশ্চিমে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের হাট চকগৌড়ী এলাকার এই গ্রামে পানোর মতো এমন ঋষি সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০টি পরিবারের বসবাস। যাদের পরিবারগুলো টিকে আছে কেবল বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পের ওপর নির্ভর করে।

বাঁশ

এই সম্প্রদায়ের পুরুষদের প্রধান কাজ বাঁশ কিনে এনে সেগুলোকে মাপমতো কেটে বুননের উপযোগী করে দেওয়া। এরপর তৈরিকৃত ঝাঁকা-ডালি বাজারে বিক্রয় করা। আর বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরি করেন বাড়ির নারীরা।

বেলঘরিয়া গ্রামের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আওতাভুক্ত ঋষি সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলো বাঁশ দিয়ে খলই, ডুলি, চালা, কুলা, ডালি, ঝাঁকা, চালুন, টোপা, টুকরি, হাতপাখাসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে। বংশ পরম্পরায় কুটির শিল্পের এই পেশা ধরে রেখেছে পরিবারগুলা। এর মাধ্যমে পাওয়া অর্থ দিয়েই চলে পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা।

বর্তমানে পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক। এছাড়া ৭ থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সের প্রায় সকল মেয়েরা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির কাজে জড়িত।

এই গ্রামের প্রতীমা জানান, বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে যা কিছু লাগে সবই বাঁশ থেকে নেওয়া হয়। পরে স্থানীয় চকগৌরী, হাপানিয়া, নওহাটা, স্বরস্বত্তীপুরের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করা হয়। অনেকসময় পাইকাররা নিজে গ্রামে এসেও এগুলো কিনে নিয়ে যান।

তবে গ্রামের অপর বাসিন্দা আদরী বলেন, পাইকাররা যে দামে তাদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে নেন, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে সেগুলো খুচরা বাজারে বিক্রি করা যায়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও অর্থের প্রয়োজন আর ভালো বাজারের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে সেগুলো পাইকারি ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে হয়।

কুটিরশিল্পী শুশিল ঋষি, নিপেন ঋষি, মন্টু ঋষি ও রতন ঋষি জানান, প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে বর্তমানে নিভু নিভু এই বাঁশ শিল্প। প্লাস্টিকের কারণে এই শিল্পে ধস নামলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শত শত বছর আগের এই পেশাটি তারা ছাড়তে পারছেন না। যুগের পর যুগ তারা এই শিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কাজেই এই শিল্পকে ধরে রাখতে ভালো বাজার ব্যবস্থার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পী হিসেবে তাদের সরকারি সহায়তার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ জানান, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাদের সরকারিভাবে কোনোপ্রকার সহায়তা করার সুযোগ থাকলে তা অবশ্যই করা হবে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন