পৃথিবীর বুকে সাতটি আশ্চর্য ছাড়াও এমন অনেক জিনিস আছে, যা নিয়ে মানুষের বিস্ময়ের শেষ নেই। এমনকি কিছু কিছু জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্যের সমাধান এখনো নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। এ রকম তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে পেরুর নাজকা লাইন।
মরুভূমি অঞ্চল এটি। এখানকার পাথরের গায়ে চিত্রিত আছে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি। বিশেষ করে পাহাড়ের ধারে একটি বিশাল প্রাচীন বিড়ালের নকশা আবিষ্কার করা হয়েছে। যা ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। হ্যাঁ এটি প্রথম পাওয়া কোনো চিত্র নয়। এর আগে বিভিন্ন সমস্য প্রত্নতাত্ত্বিক এবং গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন গুহা চিত্র। সেগুলো আদিকালের বিভিন্ন যুগকে তুলে ধরে আমাদের সামনে। তবে জাজাকায় পাওয়া এই চিত্রগুলো স্থান করে নিয়েছে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের তালিকায়। এরকম পাথরের গায়ে আঁকা চিত্রকে গবেষকদের ভাষায় বলা হয় জিওগ্লাইফ।
লম্বা লেজযুক্ত বানর
সম্প্রতি সেখানে বিশাল পাথরের গায়ে একটি বিড়ালের ছবি দেখা যায়। মাটি থেকে এত উঁচুতে কীভাবে খোদাই করে এই চিত্র আঁকা হয়েছে তাই গবেষকদের মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এর কুল কিনারা করতে তারা করছেন বিস্তর গবেষণা। এছাড়াও বানরের একটি চিত্রও আছে এখানে। ইউনস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট নাজাকার সাইটটি সংরক্ষণের কথা বলছেন। কেননা এখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনে দিন দিন এই চিত্রগুলো ক্ষয় হতে শুরু করেছে।
এমন আরো অনেক চিত্র পাওয়া যায় নাজাকা লাইনে
নাজকা লাইনের পেরুর প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক, জনি ইসলা এফ নিউজ এজেন্সিকে জানান,বিড়ালটি আসলে প্যারাকাস যুগের শেষ যুগের হতে পারে। সেটা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের সময়কাল। সেসময় এই বিড়ালের চিত্রটি আঁকা হয়েছিল বলে ধারণা তাদের। বিশাল এই এলাকা জুড়ে মাটি এবং পাথরের উপর খোদাই করা রয়েছে বিভিন্ন রকম ছবি ও নকশা।
মাছের চিত্র
পশু-পাখির ছবি ছাড়াও রয়েছে সরলরেখা ও জ্যামিতিক নকশা। মাটির উপরের এই বিশালাকার সব ভূচিত্রগুলোকেই বলে নাজকা লাইন। নাজকা লাইনে প্রায় ২,০০০ বছর পূর্বে নির্মিত ভূগর্ভে নকশাগুলো ইউনস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে রয়েছে। এখানে বিড়াল ছাড়াও অনেক লম্বা লেজের একটি বানরের চিত্র পাওয়া গেছে। যেটি লেজ ছিল গোল করে প্যাঁচানো।
একটি পাখির চিত্রও পাওয়া যায় এখানে
পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাজকা মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে এই নাজকা লাইন। প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা ও ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এটি। সর্বপ্রথম এই সাইটটি আবিষ্কার করেন লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক পল কোসোক। তিনিই প্রথম গুরুত্ব দিয়েছিলেন নাজাকার প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়গুলোর উপর। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে দক্ষিণ গোলার্ধে শীতের অস্থিরতায় লাইনগুলো রূপান্তরিত হয়েছিল। সেসময় পলের সঙ্গে ছিলেন একজন জার্মান গণিতবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক মারিয়া রেইচ।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট নাজকা লাইনগুলো ১৯২৭ সালে একাডেমিকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা প্রথম আবিষ্কার করা হয়েছিল। গত নভেম্বরে পেরু মরুভূমিতে প্রায় ২,১০০ বছর আগের ১৪০ টিও বেশি নাজকা লাইন উন্মোচিত হয়েছিল। যেগুলো গত ১৫ বছর ধরে গবেষকরা গবেষণা করে পেয়েছেন।
চিত্রগুলো নেয়া হয় স্যাটেলাইট, ড্রোন ফুটেজ এবং এআই স্ক্যানিং সিস্টেম ব্যবহার করে
এই চিত্রগুলো নেয়া হয় স্যাটেলাইট চিত্র, ড্রোন ফুটেজ এবং এআই স্ক্যানিং সিস্টেম ব্যবহার করে। পুরো গবেষণাটি করে জাপানের ইয়ামগাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রত্নতাত্ত্বিক।
তাদের আবিষ্কার করা চিত্রগুলোর মধ্যে আরো ছিল একটি পাখি, হিউম্যানয়েডস, একটি দুই-মাথাযুক্ত সাপ,তিমি। এগুলো দেখে খুব স্বাভাবিক মনে হলেও এবার বিড়ালের চিত্রটিই তাদের ভাবনার বিষয় হয়ে গেছে। কেননা এত উঁচুতে কীভাবে খোদাই করে আঁকা হয়েছিল এটি। আর কেনই বা বিড়ালের ছবি একতে গেল তারা। এই নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। খুব শীঘ্রই হয়তো জানা যাবে তা।
গাজীপুর কথা