ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পূবাইলের ভাদুন গ্রামে চলছে ‘চাপাবাজ’

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৮ অক্টোবর ২০২০

পূবাইলের ভাদুন গ্রামে চলছে ‘চাপাবাজ’

গাজীপুর জেলার পূবাইলের ভাদুন গ্রাম। শান্ত, সুনিবীড় ছাঁয়াঘেরা সবুজ শ্যামল একটি এলাকা। সাধারণ মানুষের বসতি থাকলেও অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা পরিবেশ। ফসলের খেত, পুকুর, মাটির রাস্তা এক বেঁকে চলে গেছে বিভিন্ন দিকে।

পিচঢালা রাস্তাও আছে। শান্ত পরিবেশের কারণেই এখানে দ্রুত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সেখানকার সচেতন সমাজ চিন্তিত। তবে কিছুটা আনন্দিতও। কারণ মিডিয়ার তারকাদের পদভারে মুখরিত হয় এ জায়গাটিই।

টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে অল্প কিছুদূর এগোলেই ভাদুন গ্রাম। রাজধানীর কাছাকাছি হওয়ায় শহরতলীর মতো নতুন ধরনের বসতবাড়ি উঠছে। এ গ্রামেই একাধিক বাড়িতে শুটিং স্পট তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের নাটকের বেশিরভাগই এ এলাকার শুটিং বাড়িতে নির্মিত হয়।

তাছাড়া প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে এখানে শহরের নাটকের শুটিংও হয় মাঝে মধ্যে। এমন একটি এলাকায় সম্প্রতি যাওয়া হয় কয়েকজন চাপাবাজের খোঁজে। তারা নাকি গত কয়েকবছর ধরে চাপাবাজি করেই টিকে আছেন সেখানে এবং তাদের খেয়াল খুশি মতো চাপাবাজি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজটিও সুচারুভাবে করে যাচ্ছেন।

এলাকার লোকজনও তাদের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ। কিন্তু কেউই মুখে কিছু বলেন না। তারা যা করেন, সেগুলোই শুধু অবলোকন করে যান। পুরো ভাদুন গ্রামেই তারা পরিচিতি পেয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে এ চাপাবাজরা ভাদুন গ্রামে আস্তানা গেড়েছেন। পাঠক, বৈশাখী টিভিতে প্রচারচলতি ‘চাপাবাজ’ নামের ধারাবাহিক নাটকের শুটিং সেটে যেসব ঘটনা ঘটে সেগুলোরই কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে এতক্ষণ ধরে।

ঘড়িতে তখন সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিট। গ্রামের ভেতর যাওয়ার আগে বাজারে মূল সড়কের পাশে দেখা গেল মানুষের জটলা। কৌতূহলী মনে সেদিকে অগ্রসর হওয়ার আগেই ছোটখাটো একটি বাকবিতণ্ডা চোখে পড়ে। কয়েকজন মানুষ অভিনেতা ফারুক আহমেদের সঙ্গে ছবি তুলবেন। ফারুক আহমেদ হাসি মুখে তাদের ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও তারা নাছোড়বান্দা। অন্যদিকে অভিনেতা ও নির্মাতা হাসান জাহাঙ্গীর সেই পরিস্থিতিতে খুবই বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে ফারুক আহমেদকে উদ্ধার করার চেষ্টা শুরু করলে তাকেও ঘিরে ধরেন উৎসুক লোকজন।

প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকেন। ভেতরে প্রচণ্ড বিরক্তি তৈরি হলেও তা প্রকাশ না করে হাসি মুখেই পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন তারা দু’জন। ওদিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। ক্যামেরা নিয়ে চিত্রগ্রাহক অপেক্ষায় রাস্তার পাশে। একটু পরপর সারিবদ্ধভাবে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট পাশ ঘেঁষে চলে যাচ্ছে। উৎসুক লোকজনকে বুঝিয়ে নির্মাতা হাসান জাহাঙ্গীর ক্যামেরার সামনে পজিশন নেন। শুটিং শুরু হবে, ঠিক তখনই নামে ঝুম বৃষ্টি। পার্শ^বর্তী দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পান সবাই।

বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার মধ্যেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি চলে আসে। এমনিতেই মানুষের বিড়ম্বনার কারণে পরিকল্পনা মতো শুটিং করতে পারেননি নির্মাতা, তার মধ্যে বৃষ্টির বাগড়া। বাধ্য হয়ে ইউনিট রিয়ে রওনা দেন শুটিং বাড়িতে। এরই মধ্যে হারিয়ে যায় নির্মাতার মোবাইল ফোন। মন খারাপের মাঝেই নির্মাতার মুখে হাসি ফুটিয়ে একজন সেটা এগিয়ে দেয় তার দিকে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন হাসান জাহাঙ্গীর, ‘ভালো মানুষ এখনও আছে।’

দুপুরের বিরতির পর আবারও রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ‘চাপাবাজ’ নাটকের অভিনয়শিল্পীরা। ঘুরে ঘুরে চলতে থাকে নাটকটির শুটিং। এভাবে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। শুটিং হাউসে ফিরে যান নাটকের অভিনয়শিল্পীরা। নাটকটি বৈশাখী টিভিতে শনি, রবি ও সোমবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে প্রচার হচ্ছে।

এ নাটকের পরিচালক, অভিনেতা, নাট্যকার ও প্রযোজক হাসান জাহাঙ্গীর। নাটকটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে জনপ্রিয়তা নিয়ে একটি নাটকের প্রচার চলছে। এটি একটি গর্বের ও আনন্দের বিষয়। এ জন্য চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। এছাড়া এ নাটকে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত অন্তত একশরও বেশি অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন। দর্শকপ্রিয়তা ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যদি সম্মত থাকেন তাহলে নাটকটি আরও কিছুদিন চালিয়ে যেতে চাই।’

গাজীপুর কথা