ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পাপের শাস্তি হিসেবে শহরটি ভুমিকম্পে ডুবে যায় গভীর সমুদ্রে!

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০২০

পাপের শাস্তি হিসেবে শহরটি ভুমিকম্পে ডুবে যায় গভীর সমুদ্রে!

প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন, ধ্বংসাবশেষ সবার সামনে তুলে ধরতে প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তাদের মাধ্যমেই শত কিংবা হাজারো বছরের প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন নগর, প্রাসাদের নিদর্শন মাটির নীচ থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নতুনভাবে আবিষ্কৃত হচ্ছে। এমনই প্রাচীন সভ্যতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সাগরতল থেকেও উদ্ধার করা হয়েছে। 

কৃষি কাজের জন্য উর্বর ভূমি, পানি সেচের ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য প্রভৃতি আনুষাঙ্গিক বিষয়ের জন্য অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতা নদী কিংবা সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছিল। সেসব প্রাচীন সভ্যতার বেশিরভাগই সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। অনেক সভ্যতার নিদর্শনই প্রত্নতত্ত্ববিদরা গভীর সমুদ্রে পেয়েছেন আবার কোনোটির সন্ধান মেলেনি এখনো। উদ্ধারপ্রাপ্ত তেমনই কয়েকটি প্রাচীন নগর সম্পর্কে জেনে নিন-

 

পোর্ট রয়েল 

পোর্ট রয়েল 

পোর্ট রয়েল

ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র জ্যামাইকা। সেখানকার একটি ব্যস্ত বন্দর ছিল পোর্ট রয়েল। যেখানে একই নামে গড়ে উঠেছিল বিলাসবহুল শহর। পোর্ট রয়েল একসময় ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুষ্টু এবং পাপাচারের শহর’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৬৯২ সালে সাড়ে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে মুহুর্তেই বিলীন হয়ে যায় এ বন্দর। সেখানে বসবাসরত দুই হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। পুরো শহরটিই সাগরে তলিয়ে যায়। অনেকই বিশ্বাস করে হয়তো এটা পাপের শাস্তি। ধংসস্তুপটি সমুদ্রগর্ভের ৪০ ফুট নিচে চলে যায়। তবে সেখান থেকে এখনো অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হচ্ছে। 

ইওনাগুনি-জিমার পিরামিড, জাপান

 

ইওনাগুনি-জিমার পিরামিড

ইওনাগুনি-জিমার পিরামিড

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ আছে, জাপানের সাগরতলে ডুবে যাওয়া ইওনাগুনি-জিমার পিরামিড নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। এই পিরামিডটি মানুষের তৈরি না কি প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল তার কোনো সঠিক প্রমাণ নেই। ১৯৯৫ সালে একজন ডুবুরি জাপানের ওকিনাওয়া উপকূল থেকে পথ হারিয়ে সাঁতরে সমুদ্রের গভীরে চলে যান। এরপর অনেকক্ষণ চেষ্টা করে উপরে ভেসে উঠতে সক্ষম হন তিনি। তবে ওঠার আগে পানির নিচে তিনি অদ্ভুত আকৃতি দেখতে পেয়েছিলেন।

এরপর থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে স্থানটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তখন থেকেই একদল গবষকের মত পিরামিডটি মনুষ্যসৃষ্ট এবং অন্যদলের ধারণা সেটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি। মনুষ্যসৃষ্টির পক্ষে মত দেয়া গবেষকরা জানায়, স্থাপনাটি তুষার যুগের শেষ দিকে আনুমানিক ১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ রবার্ট সোচ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, সমুদ্র গর্ভে বিলীন হওয়া স্থানটিতে টেকটোনিক প্লেটের সক্রিয়তা রয়েছে। সেগুলোর স্থানচ্যুতির কারণেই হয়তো শহরটি তলিয়ে গেছে।

দ্বারকা, গলফ আব কাম্বে, ভারত 

 

দ্বারকা মন্দির

দ্বারকা মন্দির

প্রাচীন শ্রীকৃষ্ণের শহর একসময় নিছক একটি পৌরাণিক কাহিনী হিসেবে বিবেচিত হত। তবে ২০০০ সালে সমুদ্র তলে প্রাচীন কিছু নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ার পর ভারতীয় এই পৌরাণিক কাহিনী সত্যি বলে মনে করেন অনেকেই। আধুনিক ভারতের দ্বারকা উপসাগরের ১৩১ ফুট নিচে বেশ কিছু স্থাপনা পাওয়া যায়। প্রাচীন এ স্থাপনাগুলো বেশ নজরকাড়া। যেগুলো অনুমানিক ৭৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল।  

সিটি অব লায়ন, চীন

 

সিটি অব লায়ন

সিটি অব লায়ন

চীনের নিমজ্জিত শহর লায়ন সিটি, স্থানীয়রা যাকে ‘শি চ্যাং’ নামে অভিহিত করে। শহরটি ‘উ শি’ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত কিয়ানডাও হ্রদের পানির নিচে প্রায় অক্ষত রয়েছে। প্রাচীন চীনে হানদের রাজত্বের সময় আনুমানিক ২৫-২০০ খ্রিষ্টাব্দে শি চ্যাং শহরটি গড়ে উঠেছিল। ১৯৫৯ সালে চীন সরকার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কিয়ানডাও হ্রদ তৈরি করে। ফলে শি চ্যাং প্রায় ১৩১ ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। স্থানটি প্রায় ৬২টি ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের। 

ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ, আলেকজান্দ্রিয়া মিশর  

 

ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ

ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ

প্রাচীন মিশরের একজন বিখ্যাত ফারাও ছিলেন রানি ক্লিওপেট্রা। আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলবর্তী সমুদ্র তলে ক্লিওপেট্রার প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। ধারণা করা হয়, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে এটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন, সেখানে ক্লিওপেট্রার প্রাসাদের পাশাপাশি দেবী আইসিস এর মন্দিরও আছে। সেখান থেকে এ পর্যন্ত ১৪০ টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেখনে তারা ক্লিওপেট্রার সমাধিও খুঁজে পেয়েছেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন