ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পাখাওয়ালাদের বাতাসে বাঁচত বড়লোকেরা

প্রকাশিত: ০৮:০০, ৮ জুলাই ২০২০

পাখাওয়ালাদের বাতাসে বাঁচত বড়লোকেরা

ব্রিটিশরা নানা ছলে কৌশলে ভারতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তবে ভারতে এসে কোনো দিন তারা যে ব্যাপারে অভ্যস্ত হতে পারেনি তা হলো এখানকার জলবায়ু। ভারত তথা এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই বছরের প্রায় অর্ধেক সময় থাকে গরম। 

এখানকার রক্ত চোষা মশা, মশলাদার খাবার, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার প্রায় সব কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পেরেছিল। তবে শীতের দেশের এই মানুষগুলো গরমটাতে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি নিজেদের। আমাদের দেশ এবং এখনকার ভারত কিন্তু একটা সময় পুরোটাই ভারতবর্ষই ছিল। সেই সময়কার কথাই বলছি। 

 

মাথার উপর পাখা

মাথার উপর পাখা

এশিয়ার এই দেশে এপ্রিল থেকে শুরু করে প্রায় অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল ধরা হয়। এসময় পানির সংকট যেন তা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এর মাঝে বর্ষা গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি দেয় বটে। তবে তাতে ব্রিটিশদের আরাম হতো না। এখন ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা বা এয়ারকন্ডিশনার থাকলেও সেসময় এগুলো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। 

মানুষ গাছের ছায়ায় বা ঘরের বারান্দায় ঘুমাতো। অন্য জায়গার তুলনায় এই জায়গাগুলো ছিল ঠাণ্ডা। সেসময় ব্রিটিশরা আগেকার রাজাদের মতো হাতের টানা পাখা ব্যবহার করত। সেসময় যাদের আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্য ছিল তারাই এটি ব্যবহার করত। সিলিংয়ের সঙ্গে শীতল পাটি বা কাপড় দিয়ে টানা পাখা তৈরি করা হত। একজন লোক রাখা থাকত যে কিনা ঘরের বাইরে থেকে এই পাখার দড়ি ধরে টানতে থাকবে। এতে কাপড় দুলতে থাকত এবং ঘরের ভেতরটা ঠাণ্ডা হত। 

 

ডাইনিং টেবিলের ‍বুপর পাখা

ডাইনিং টেবিলের ‍বুপর পাখা

এই পাখাগুলো ছিল আয়তক্ষেত্রাকার আকারের। যা বেত থেকে তৈরি করা হত বা কাপড়ের। একটি সমতল কাঠের ফ্রেম বাঁধা হত। যে লোকগুলো কিংবা দাস বা ক্রীতদাসদের দ্বারা এই টানা পাখা চালানো হত তাদের বলা হত পুনক-ওয়ালাহ। তাদের পরিশ্রমেই এক মৃদু বাতাস বইত। যাতে ব্রিটিশ প্রবাসী এবং ধনী ভারতীয়দের কাজ করতে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাতে দেয়।   

এখনো ঐতিহাসিক কিংবা রাজাদের আমলের কোনো নাটক সিনেমা তৈরি হলে এই অংশটা রাখা হয়। এই পাখাগুলো খুবই বিলাসবহুল ছিল। চাইলেই যে কেউ এগুলো ব্যবহার করতে পারত না। কেবলমাত্র প্রাসাদ বাড়ি, সরকারি বাংলো এবং অফিসগুলোতে পাওয়া যেত পাখাগুলো।  

 

সব জায়গাতেই ছিল এমন পাখা

সব জায়গাতেই ছিল এমন পাখা

একজন ব্রিটিশ তার ভারত বর্ণনায় বলেছিলেন, আপনার বিছানার ওপরে, আপনার বাথ-টবের ওপরে, অন্যটি আপনার ড্রেসিং-ব্যুরোতে, আপনার ডাইনিং টেবিলের উপরে এবং অন্যটি আপনার ডেস্কের উপরে। সব জায়গায় একটি করে পাখা রাখুন। আপনি যখন এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাচ্ছেন আপনার পুনক-ওয়ালাহকেও স্থানান্তরিত করুন। এতে আপনি যেখানেই থাকুন আরামে থাকবেন। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না একদমই।    

পাখা-ওয়ালা ঘরের কোণায় বসে ফ্যানটি সচল রাখতে দড়ি টানতে থাকত। যেহেতু তিনি সর্বদা ঘরেই থাকতেন কিংবা ঘরের বাইরে। ঘরে বসেই মালিক আলোচনা করত নানা বিষয়ে। এজন্য বেশিরভাগ সময় নিয়োগকর্তা বধির পাখা-ওয়ালাদের বেছে নিতেন। এতে করে তিনি নিজেকে নিরাপদ ভাবতেন। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয়ে আলোচনা করতে পারতেন। 

 

সারাদিন রাত তারা পাখার দড়ি টানত

সারাদিন রাত তারা পাখার দড়ি টানত

কখনো দড়িটি সিলিং থেকে ঘরের দেয়ালের একটি ছোট গর্ত দিয়ে চলে যেত ঘরের বাইরে। আবার অনেকের তো বাড়ির সীমানার বাইরে ছিল পাখা-ওয়ালাদের বসার জায়গা। যাতে ঘরের কোনো আলোচনা শুনতে এবং দেখতে না পারে। এই পাখাওয়ালারা সবাই সমাজের দরিদ্রতম গোষ্ঠীর মানুষ ছিল। তারা তাদের এই পরিষেবার জন্য সামান্য অর্থ পেত। তবে তারা কিন্তু নিজেদের ঠিকই ভারতের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে মানিয়ে নিয়ে ছিল। 

এরপর ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরেও অনেক জায়গায় পাখাওয়ালাদের দেখা যেত। আমেরিকার দক্ষিণ রাজ্যগুলোতে বহু বাড়ির মালিকদের নিজস্ব পাখাওয়ালা ছিল। ১৯ শতকের শেষদিকে বিদ্যুতের আগমন এবং বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যানের বিকাশ এই পেশায় জড়িতদের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে। যা তাদের আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়।  

সূত্র: অ্যামিউজিংপ্লানেটস

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন