ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পশু জবাইয়ে যে ভুল করলে কুরবানি হবে না

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৩১ জুলাই ২০২০

পশু জবাইয়ে যে ভুল করলে কুরবানি হবে না

কুরবানি মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম। আত্মত্যাগের অনন্য ইবাদত সামথ্যবানদের জন্য ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কুরবানি ও নামাজের নির্দেশ দেন এভাবে-
'সুতরাং (আপনি) আপনার প্রভুর জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।' (সুরা কাউসার : আয়াত ২)

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এ ইবাদত পালনের সময় সামান্য ভুলেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে কুরবানি। সে কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করা।

অনেকেই পশু জবাইয়ের সময় সামান্য একটি ভুল করে থাকেন। যে ভুলের কারণে কুরবানির পরিবর্তে তা হত্যায় পরিণত হয়। জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে গিয়ে এ ভুলটি করা হয়। তাহলো-

পশু জবাই করার পর পশু নিস্তেজ হওয়ার জন্য ছুরি বা চাকুর ধাঁরালো আগা দিয়ে জবেহ করার স্থানে (মেরুদণ্ডে) আঘাত করে। দ্রুত পশুটি নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার জন্যই অনেকে এ কাজটি করে থাকেন। এ কাজটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। এতে পশুটি কুরবানি না হয়ে হত্যায় শামিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

পশু জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই পশুটি নিস্তেজ হয়ে যায়। রক্তশূন্য হয়ে স্বাভাবিকভাবে মারা যায়। যা চামড়া ওঠানো ও গোশত প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।

আঘাতের ক্ষতি
জবাইয়ের ওই স্থানে মেরুদণ্ডে ছুরির আগা দিয়ে আঘাত করলে, অনেক সময় পশু স্বাভাবিক মৃত্যুর আগেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। তখন এটি আর কুরবানি হয় না বরং তা হত্যায় পরিগণিত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতেও তা পশু জবাইয়ের সঠিক পদ্ধতি নয়।

যদি কোনো পশু ওই আঘাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় তবে ওই ব্যক্তির কুরবানি আদায় হবে না। ১০/১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে ছোট্ট একটি ভুলের জন্য কুরবানিই বরবাদ হয়ে যায়। তাই কুরবানির সময় কোনোভাবেই এ ভুলটি করা যাবে না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে এর ক্ষতি ও অপকারিতা
পশু জবেহের যে স্থানে তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়, সেটি মূলত- ‘মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড’-এর অংশ। ছুড়ির আঘাতে পশুর স্পাইনাল কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেই পশুর দেহ থেকে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পশুটি হার্ট অ্যাটাক করে এবং মারা যায়। তখন এটি জবাই সাব্যস্ত না হয়ে হত্যায় পরিগণিত হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও পশু জবাইয়ের এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত গর্হিত এবং বিপদজনক কাজ। কেননা স্পাইনাল কর্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সব রক্ত পশুর দেহ থেকে বের হতে পারে না। পশুর দেহের মাংশপেশিতেই রক্ত জমাট বেঁধে যায়। পশু শিরা উপসিরা থেকে পুরোপুরি রক্ত বের হতে না পারলে গোশত দুষিত হয়ে যায়।

কুরবানি করা পশুর এ দুষিত গোশত খেলে অনেক সময় ক্যান্সার, এইচবিএএসসহ অন্তত ১৮ ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে কুরবানি ও স্বাভাবিক জবাই সম্পন্ন করা জরুরি।

পশু জবাই করার সঠিক পদ্ধতি
কুরবানির পশুসহ যে কোনো পশু জবাই সম্পন্ন হওয়ার জন্য পশুর মূল ৩টি রগ কেটে দিতে হয়। ৩টি রগ কেটে দেয়া হলে পশুর দেহ থেকে সব রক্ত বের হয়ে যায়। রক্ত বের হয়ে যাওয়ার ফলে পশু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মারা যায়। আর এভাবে পশু জবাই করা উত্তম। যাতে কুরবানি বা জবাই বাতিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

সুতরাং নিরাপদ ও বিশুদ্ধ কুরবানি আদায় করতে পশু কুরবানি বা স্বাভাবিক জবাইয়ের পর পশুর দেহ থেকে রক্ত বের হওয়া পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা জরুরি। তাতে কুরবানি হবে বিশুদ্ধ। আর কুরবানি পশুর গোশতও হবে খাওয়ার উপযুক্ত এবং ঝুঁকিমুক্ত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক উপায়ে কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। পশুকে অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় ক্ষতি ও রোগ-বালাই থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

গাজীপুর কথা