ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার ড. রাবিয়া ভূইঁয়া

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১৩ মার্চ ২০২০

দেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার ড. রাবিয়া ভূইঁয়া

দেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার ডক্টর রাবিয়া ভূঁইয়া। নারী আইনজীবীদের জন্য যিনি মাইলস্টোন এবং নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। তাঁর এ পথ চলায় পরিবারের সহযোগিতা পেলেও অসহযোগিতা পেয়েছেন বেশ কিছু সহকর্মীর কাছ থেকে। তবুও থেমে থাকেননি। একটু একটু করে আলোকিত করেছেন নিজেকে, আলোকিত হয়েছে সমাজ। প্রিয় আদালত প্রাঙ্গনে তাঁর সেসব অনুভূতির কথা জানাচ্ছেন শাকেরা আরজু।

ব্যারিষ্টার রাবিয়া ভূঁইয়া। ১৯৪৪ইং সনের ১লা মার্চ ঢাকা জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল হামিদ একজন নাম করা এবং নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছিলেন। মা ফিরোজা খাতুন একজন সুশিক্ষিত গৃহিনী ছিলেন।  রাবিয়া ভূইয়া ঢাকার বাংলাবাজার গার্লস স্কুল থেকে ১৯৫৮ সনে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৬০ সনে ইডেন গার্লস কলেজ থেকে লজিক এ ডিস্টিংশন নিয়ে ইন্টারমিডিয়েট ৯ম স্থান অধিকার করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সনে ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে অনার্স এ প্রথম এবং ১৯৬৪ সনে এমএ (মাস্টার্স) দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৬৬ সনে আইন পাশ করেন। তিনি ১৯৬৮ সনে ডিষ্ট্রিক বার এবং ১৯৬৯ সনে সুপ্রীম কোর্টে সনদ প্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ সনে বার-এট-ল পাশ করে বাংলাদেশে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।

ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন উঁচু মাপের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাবিয়া ভুঁইয়া। আদালত প্রাঙ্গন তার প্রিয় জায়গা। আইনী পোশাকও তার প্রিয়। তাইতো ভালোবেসেই কালো ছাড়া কখনোই অন্য রংয়ের পোশাক পড়েন না আদালতে। রাবিয়া ভূইয়ার উদাহরণ টেনে বিচারপতিরা কালো পোশাক পড়তে আইনজীবীদের উৎসাহিত করেন ।

ছোটবেলা থেকেই পড়তে ভালোবাসেন। কোন বাধাই পড়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি তাকে। আর এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা পেয়েছেন বাবা’র। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে বই পড়তেন। প্রেগন্যান্সির সময়ও বসে বই পড়তের বলে তিনি জানান। তবে এক্ষেত্রে সহযোগিতা পেয়েছেন স্বামীর। হয়েছেন দেশের প্রথম নারী ব্যারিষ্টার। 

ড. রাবিয়া ভুইঁয়া আপিল বিভাগেরও প্রথম নারী আইনজীবী। তিনি ১৯৭৩ সালে ব্রিটেনের লিংকন ইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার এট ল ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। 

১৯৮৫-৮৭ সাল পর্যন্ত সমাজকল্যাণ ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া। তিনি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্যতম আইনজীবী। সর্বোচ্চ আদালত বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী মামলা করেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জমিলা খাতুন বনাম রুস্তম আলী, ফলে মহিলারা এখন অতীত ভরনপোষন পাচ্ছে। এছাড়াও গায়িকা রুনা লায়লা, ববিতা সহ বেশ কিছু উল্লেখ যোগ্য মামলা লড়েছেন তিনি।

তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম বৃটিশ সিলেবাসের আদলে এলএলবি কোর্স (অনার্স) এর জন্য ভূঁইয়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এপর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। পাঁচশ’র বেশি শিক্ষার্থী বার এট ল অর্জন করে আইনাঙ্গনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন।

আপিল বিভাগের আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী ড. ব্যারিষ্টার রাবেয়া ভূঁইয়া নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক। পেয়েছেন বৃটেনের বিখ্যাত উপাধি ”ডক্টর অব লজ”।  দেশ-বিদেশে নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানস্বরূপ তাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি এশিয়ার দ্বিতীয় এবং দেশের প্রথম নারী হিসেবে এ সম্মান অর্জন করেন।

এত সাফল্যের পথ একেবারে মসৃন ছিলো না তার জন্য। পড়াশুনায় শ্বশুর বাড়ির বাধা থাকলেও স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন। সেসময় আদালতে পুরুষের পাশাপাশি কোন নারী আইনজীবী প্রায় দেখাই যেতো না। যুদ্ধ করেই নিজের জায়গা করে নিতে হয়েছে তাকে।  প্রথম যেদিন আদালতে গেলেন, সেদিন সহকর্মীরা বিষ্ময়ে আর অবহেলা ভরে তাকাচ্ছিলেন। রাবিয়া বসার জায়গা না পেয়ে পিছনে গিয়ে বসলেন। এবং পিছন থেকে আওয়াজ তুলে বলেছিলেন “মাই লর্ড আমার একটি মামলা আছে কার্যতালিকায় ”। সেদিন এ আওয়াজ তুলেছিলেন বলেই হয়ত তিনি হয়েছেন প্রতিষ্ঠান। এভাবেই শুরু আইন পেশার।  

যোগ্যতা আর পরিশ্রম দিয়ে একটু একটু করে আগাচ্ছিলেন রাবিয়া। একাগ্রতা আর পরিশ্রম থাকলে সফলতা আসতে বেশিদিন লাগে না বলেই জানান তিনি। বর্তমান নারী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নারী নির্যাতন মামলা গুলোর প্রতি যেন তাদের দায়িত্ব থাকে। ধর্ষন মামলার বিচারপ্রার্থীদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। নারী ও শিশু নির্যাতন বর্তমানে আশংকাজনক হারে বাড়ছে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

১৯৭১ সনে তিনি ইংল্যান্ডের লিংকনস ইন স্টুডেন্ট ইউনিয়নে নির্বাচন করে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি এবং তহবিল সংগ্রহ কাজ করেছেন তিনি। লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মিটিং ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।  সেসময় তার পড়াশুনায় অনেক বাধা নেমে আসে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন