ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দেশের ওষুধ শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৫ জুন ২০২০

দেশের ওষুধ শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে

বর্তমান সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের ফলে অনেকটা আড়ালে আবডালেই বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পখাত তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উৎপাদন, বিদেশে রফতানি-সবখানেই ওষুধ শিল্পখাতের সাফল্য এখন আকাশছোঁয়া। 
জানা গেছে, প্রতি বছরই ওষুধ শিল্পখাতে নতুন নতুন উদ্ভাবন আর বিস্ময়কর সব সাফল্য আসছে। ওষুধ রফতানির দেশের সংখ্যাও একের পর এক বেড়ে চলেছে। ওষুধ আমদানিও কমে আসছে। এসবই সম্ভব হয়েছে এই খাতের মেধাবী উদ্যেক্তা, ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, বায়োকেমিস্ট, বায়োটেকনোলজিস্ট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের নিরলস পরিশ্রম এবং সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ধারাবাহিক সহযোগিতার কারণে। 

একসময় কারো কল্পনাতেও ছিল না যে ইউরোপ, আমেরিকার মতো উন্নত দেশ বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ কিনে খাবে। অথচ সত্যটা হলো-বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ এখন আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। সেদেশের মানুষ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ ব্যবহার করছে। ওষুধ শিল্পখাতের জন্য এটি নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় সাফল্য।

সম্প্রতি এ খাতের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো-গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে আমেরিকাসহ বিদেশের বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করা। বিদেশের বাজারে প্রতিনিয়ত আমাদের উৎপাদিত ওষুধ রফতানি হচ্ছে, যার পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গর্বের সঙ্গেই উল্লেখ করতে হয় আগে অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া যেত না, বাইরের দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো, কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। দেশে এখন অনেক উন্নত মানের ও উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধ তৈরি হচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে বহুবিধ পরিবর্তন ও নতুনত্বও আসছে। ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো এখন শুধু ওষুধ উৎপাদনেই নিজেদের সম্পৃক্ত রাখেনি, আন্তর্জাতিক বাজারকে সামনে রেখে নিজেদেরকে বিভিন্নভাবে বিস্তৃত করছে। 

ওষুধ শিল্পখাতের এসব সাফল্য ও গল্প আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত করছে। একসময় জীবনরক্ষাকারী যেসব ভ্যাকসিনের জন্য মানুষকে মাথা কুটতে হতো, এখন সেই সব ভ্যাকসিন উৎপাদন করে দারুণ সক্ষমতা দেখিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি। 

ওষুধ শিল্পখাতের পেছনের ইতিহাস খুবই করুণ বললে ভুল হবে না। তথ্য বলছে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে কমপক্ষে ৭০ ভাগ ওষুধ দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হতো। ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি দেশের এই খাতকে কুক্ষিগত করে ফেলেছিল। কিন্তু আশির দশকে এই খাতের এক নবযাত্রা শুরু হয়। নতুন নতুন ওষুধ কোম্পানি খুলতে এগিয়ে আসেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে প্রতি বছর ওষুধের বাজারের পরিধি ১৭ হাজার কোটি টাকার উপরে। আর এখন পর্যন্ত প্রতিবছর রফতানি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।

ওষুধ শিল্পখাতের সার্বিক বিকাশ এবং অগ্রযাত্রায় অনেকগুলো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেশ আগেই ওষুধ প্রশাসন পরিদফতরকে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। এতে ওষুধের মান বৃদ্ধির সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হয়। সরকারি পর্যায়ে ওষুধের পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে ডিজিটাইজড করায় তথ্য আদান-প্রদানের অপার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনগণ যাতে করে সব ধরনের তথ্য পেতে পারে সেজন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওয়েবসাইটকে অ্যাকটিভ রাখা হয়েছে এবং সেখানে সব ধরনের তথ্য সন্নিবেশ করা রয়েছে।

ওষুধ শিল্পকে সামগ্রিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টস বা এপিআই শিল্পপার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির নামে প্লট বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই পার্ক পরিপূর্ণভাবে চালু হলে ওষুধ শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ঔষুধের কাঁচামালের জন্যে আর বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। উল্টো এই পার্ক পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে দেশি কোম্পানিগুলো কাঁচামাল বিদেশে রফতানি করে দেশের জন্যে আয় বাড়াতে পারবে।

এই খাতের আরেকটি বড় সাফল্য হলো-ইতিমধ্যেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগাইনাইজেশন(ডব্লিউটিও) আগামী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্তে ছাড় দিয়েছে। যার ফলে আগামীতে আমাদের ওষুধ রফতানির সুযোগ আরো অবারিত হয়েছে। ফলে দামি ওষুধগুলো আমাদের দেশেই তৈরি হবে।

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প খাত মূলত বেসরকারি পর্যায়ে একটি দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পখাত, যা দেশের জাতীয় উৎপাদন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এ খাত থেকে প্রতিবছর আমরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি, যা আমাদের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া এ খাত প্রতিনিয়ত দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চলেছে। যা দেশের বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মোচনেও প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।

এটি সত্য যে ওষুধ আর ১০টা ভোগ্যপণ্যের মতো নয়। যেনতেন করে বা ইচ্ছেমতো উৎপাদন করা যায়। ওষুধ উৎপাদন করতে সবসময় ডাব্লিউ এইচও’র গাইড লাইন এবং অপরাপর নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয়। সেই নির্দেশনার বরখেলাপ হলে কোথাও ওষুধ গ্রহণযোগ্য হবে না। বিদেশে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে সে দেশের নিয়মনীতি সুনির্দিষ্টভাবে পূরণ করতেই হবে।

বিশেষ করে সেসব দেশের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থাসমূহের শর্ত সঠিকভাবে পালন করা না হলে সেদেশের বাজারে ওষুধ রফতানি করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। ওষুধ শিল্পখাত বিশ্ব বাজারে আরো সফলতা অর্জন করুক, এই খাত থেকে আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হোক- আমরা এই প্রত্যাশা করছি।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন