ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দুই বোনের চোখে স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

দুই বোনের চোখে স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ

দেশের টেবিল টেনিসের দুই কন্যা সোনম সুলতানা সোমা ও নওরিন সুলতানা মাহি। যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস কোর্টে আলো ছড়াচ্ছেন সেরেনা ও ভেনাস দুই বোন। তাদের মত আউটডোরে নয়, ইনডোরে আপন আলোয় এগিয়ে চলছেন দুই বোন সোমা ও মাহি। ভাই মুশতাকও ছিলেন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতার ফাইনালে ছোট বোন মাহীর বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হেরেছে বড় বোন সোমার আবাহনী। ছোট বোনের কাছে হারলেও কোনো আক্ষেপ নেই বড় বোনের। বরং দু'বোন মিলে আন্তর্জাতিক আসরে দেশের হয়ে স্বর্ণ পদক জিততে চান। সোমার স্বামী কোচ মোহাম্মদ আলী স্ত্রীর প্রতিভা বিকাশে অন্তরায় নন, বরং কাজ করছেন এগিয়ে চলার প্রেরণা হিসেবে।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত টেবিল টেনিসের রোমাঞ্চকর ফাইনালে  গ্যালারীতে বসে দুই বোনের লড়াই দেখে গর্বে বুক ভরে উঠেছে মা তানজিলা বেগমের। গেল বছর ডিসেম্বরে হারিয়েছেন একমাত্র ছেলে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সাজ্জাদ হোসেন মুশতাককে। শারিরীক প্রতিবন্ধী দলের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেশ কয়েকটি পদক আছে তার। ছেলের মৃত্যুর শোক শেষ না হতেই এ বছর জুলাইয়ে হারিয়েছেন স্বামীকে। 

শহীদ তাজউদ্দিন স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে আছে ছেলে মুশতাকের স্মৃতি। যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস কোর্টে এখনও দাপিয়ে বেড়ান সেরেনা ও ভেনাস দুই বোন। মায়ের কাছে সোমা ও মাহিই বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের সেরেনা -ভেনাস। মেয়েদেন নিয়ে গর্বিত মা তানজিলা বেগম। বলেন, স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। আসতে চাচ্ছিলাম না ফাইনাল দেখতে। কারণ এখানকার প্রতিটা আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে আমার ছেলে মুশতাকের স্মৃতি। ও থাকলে অনেক দুষ্টুমি করতো। খেলতো। আমার মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই টেবিল টেনিসের প্রতি ঝোক। টিভিতে সেরেনা-ভেনাসের টেনিস খেলা দেখেছি। আমার কাছে আমার মেয়েরা দেশের টেবিল টেনিসের সেরে না ভেনাস।

দুজনের বয়সের পার্থক্য ১৪ বছর। কিন্তু খেলা দেখে বোঝার উপায় নেই। বড় বোন সোমা চারবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। এক স্বর্ণ আছে বাংলাদেশ গেমসে। এস এ গেমসেও দুইবার ব্রোঞ্জ জিতেছেন সোমা। সে তুলনায় একটু পিছিয়ে মাহী। দুই বোনের স্বপ্ন টেবিল টেনিসে বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণ জয় করা।

সোমা বলেন, কোর্টে যখন খেলি তখন মাহী আমার কাছে শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ও এখন অনেক ভাল করছে। বোনের কাছে হেরেছি। কোন দুঃখ নেই। আমার ভাইয়ের স্মৃতি নিয়ে আজ ফাইনালে খেলেছি। আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণে আলো কঠোর পরিশ্রম করতে চাই।

মাহী বলেন, আমরা আলাদা আলাদা দলে খেলি এখন। কিন্তু আমাদের ইচ্ছে আছে আপুর সঙ্গে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণ জয়ের।

স্ত্রীর প্রতিভা বিকাশে বাধা নন সোমার স্বামী। বরং তাকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন স্বামী কোচ মোহাম্মদ আলী। মাকে খেলতে দেখে খুশি সন্তানরাও।

সোমার স্বামী ও কোচ মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০০৪ সাল থেকে আমাদের বন্ধন। আমি অন্য স্বামীদের মত তাকে ঘরে আটকে রাখতে চাইনি। তার চলার পথে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছি। আমার কোচিংয়ে সে চারবার জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

গাজীপুর কথা