ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

তুরস্কের কিছু বিখ্যাত অটোমান বা মুসলিম স্থাপত্য কর্ম

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২১ মে ২০২০

তুরস্কের কিছু বিখ্যাত অটোমান বা মুসলিম স্থাপত্য কর্ম

তুরস্ক, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ। দেশটির অলিগলিতে ছড়িয়ে রয়েছে অপূর্ব সব ইসলামি স্থাপত্য। দেশটির অসাধারণ সব মসজিদ তৈরি হয় অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে। সুলতানেরা মানুষের মনে স্থান পাওয়ার জন্য তৈরি করে অপূর্ব সব মসজিদ। এই মসজিদগুলো তুরস্কে অটোমান বা মুসলিম স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে। সেখানকার কিছু স্থাপত্যকে হার মানাতে পারেনি আজকের আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যা। তাই চলুন জেনে নেই তুরস্কের এমন কিছু বিখ্যাত অটোমান বা মুসলিম স্থাপত্য কর্ম সম্পর্কে।


সুলতান আহমেদ

এই মসজিদের ভেতরে সুলতান আহমেদের সমাধি, পান্থনিবাস, হাসপাতাল ও মাদ্রাসা রয়েছে। মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে ধূসর বর্ণের। কিন্তু ছাদের উপর দিকটা নীল টালির মোড়কে আবৃত। আর তাই এটির অপর নাম ‘নীল মসজিদ’। নীল ছাড়াও এই মসজিদের নির্মাণকার্যে সবুজ রঙের টালিও ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি টালির উপরে রয়েছে মূলত ফুল, লতা-পাতার কারুকার্য। মুসলিম গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতীক এই মসজিদকে ১৯৩৪ সালে জাদুঘর ঘোষণা করা হয়। এটিতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। প্রতি বৎসর প্রায় অর্ধ কোটি পর্যটক এই স্থাপত্যকর্ম দেখতে ভিড় করে। তবে প্রবেশের সময় কিছু ড্রেস কোড মেনে চলতে হয়।

আয়া সফিয়া

সুলতান আহমেদ মসজিদের কিছু দুরেই রয়েছে আয়া সফিয়া মসজিদ। মসজিদটির প্রকৃত ইতিহাস জানতে ইতিহাসের পাতা ধরে যেতে হবে অতীতে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান। তিনি ৫৩৭ খ্রীস্টাব্দে আয়া সফিয়া গীর্জা নির্মাণ করেন। এই গির্জাটি তখন খ্রীস্টানদের কাছে পরম শ্রদ্ধার উপাসনাক্ষেত্র ছিল। দীর্ঘ ৯১৬ বছর ধরে এই গীর্জার রমরমা ছিল। পরে সুলতান দ্বিতীয় ফাতিহ দখল করে একটি ডিক্রী জারির মাধ্যমে গীর্জাকে মসজিদে পরিণত করেন।

সুলতান সুলেমান

ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। মসজিদের সুউচ্চ ও সুরম্য চারটি মিনার মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণে। মসজিদের মেহরাবের অভ্যন্তর ইসলামী ঐতিহ্যের স্মারক ও বিভিন্ন কারুকার্যের উপাদানে পরিপুষ্ট। বৈচিত্র্য ও বহুবিধ রং তুলিতে আঁকা লতা গুল্ম, হরেক রকম দৃশ্য, কোরআনের আয়াত অন্য রকম এক আবহ কাজ করে। সেইসাথে মসজিদের আঙিনার চারপাশ ঘিরে রয়েছে সবুজাবৃত সজীব একটি উদ্যান। শ্যামল নিসর্গের আবহ ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে সুলাইমানিয়া মসজিদ সমধিক পরিচিত। তুরস্কের পর্যটকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বিখ্যাত সুলাইমানিয়া মসজিদ।

শেহজাদে মেহমেদ

হাঙ্গেরির অভিযান থেকে ফেরার পথে সুলতান সুলেমান ও হুররাম সুলতানের ছেলে শেহজাদে মেহমেদ গুটিবসন্তে মারা যান। সুলতান তার প্রিয় সন্তানের শোকে প্রায় ৪০ দিন ছেলের কবরের পাশে কাটিয়ে দেন। আর তখন তিনি প্রকৌশলী সিনানকে শাহজাদার নামে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ তৈরি করার দায়িত্ব দেন। যা শেহজাদে মসজিদ হিসেবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। নির্মাণের সময় মসজিদের সাথে একটি ধর্মীয় স্কুল, লজিং হাউজ ও দরিদ্র মানুষের খাবারের জন্য রান্নাঘরও নির্মাণ করেন।

কামি মসজিদ

সাফিয়ে সুলতান ছিলেন সুলতান তৃতীয় মুরাদের মা। তিনি ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী। তার নির্দেশে এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৫৯৭ সালে। কিন্তু মসজিদটির নির্মাণকাজ মাঝ পথে থেমে যায়। পরবর্তীতে ১৬৬৩ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বর্তমানে এটি তুরস্কের অন্যতম বিখ্যাত মসজিদ হিসেবে স্থান পেয়েছে। মসজিদের ভিতরের কাজ অসাধারণ। সেইসাথে দেয়ালে ব্যবহৃত অটোমানদের চিরাচরিত ইজনিক টাইলস, যা অটোমান স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে।

রুস্তম পাশা

রুস্তম পাশা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৫৬১ সালে, আর ১৫৬৩ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় বলে জানা যায়। মসজিদটির ইজনিক টাইলসের কারুকার্য ইস্তাম্বুলের সকল মসজিদের মধ্যে সেরা। এমন টাইলসের ব্যবহার অটোমানদের প্রায় সকল স্থাপত্য কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায়। সেইসাথে এই ইজনিক টাইলসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহও জড়িয়ে আছে।


এর বাইরে অটোমানদের আরও অসংখ্য স্থাপত্য রয়েছে তুরস্ক জুড়ে। সত্যিকার অর্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জুড়ে। এই ফিচারটি তৈরি করতে গিয়ে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন