টিনা, লালু আর বনি তিন বন্ধু। টিনা কচ্ছপের ছানা, লালু খরগোশের ছানা ও বনি কাঠবেড়ালির ছানা। ওদের মধ্যে খুব ভাব।
সেদিন ওরা বনের একটি শালগাছের নিচে বসে খেলছিল। কখনও ছোঁয়াছুঁয়ি, কখনও লুকোচুরি বা শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা।
বিকেল যখন শেষের পথে ওরা দেখল একটা হরিণ দৌড়াতে দৌড়াতে যাচ্ছে। টিনা বলল, “ও হরিণ ভাই, কী খবর? কোথায় যাও?”
“বাসায়, আজ আমার ছোটমেয়ের জন্মদিন। কাজে আটকে গিয়েছিলাম। আজ সময় নেই, অন্যদিন কথা হবে।” বলল হরিণ।
টিনা দেখল, হরিণের শরীর থেকে কী যেন একটা ধুপ করে পড়ে গেল। কিছু বলার আগেই হরিণ উধাও।
টিনা পাতায় মোড়ানো জিনিসটা তুলে রাখল। এর মধ্যে রাত হয়ে এল। এবার বাড়ি ফেরার পালা।
টিনা বলল, “চল, জিনিসটা হরিণের বাসায় দিয়ে আসি।”
লালু হাই তুলল, “আমার ঘুম পাচ্ছে।”
বনি বলল, “আমি মার কাছে যাব, খিদে পেয়েছে।”
টিনা একা একাই গেল হরিণের বাসায়। গিয়ে দেখে, হরিণ গোমড়া মুখে বসে আছে।
“ওমা! তোমার হাতে তো সেই জিনিসটা। ওটা আমার মেয়ের জন্য কেনা উপহার।” খুশিতে ডগমগ করে উঠল। সাথে সাথে বাসার সবাই।
পাতায় মোড়ানো জিনিসটা খোলা হল। চমৎকার একটি পুঁতির মালা।
পরদিন বিকেলে ঠিক সময়ে টিনা খেলতে চলে এল শালগাছের নিচে। কিন্তু লালু, বনি কেউ এল না।
টিনা লালুর বাসায় গেল। ওর খুব জ্বর। খবর এল বনিরও খুব অসুখ। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
চুপচাপ একা বসে আছে টিনা। একটু দূরে বিশাল পাহাড়। ও ছলছল চোখে সেই দিকে তাকায়।
হঠাৎ গমগমিয়ে বলে উঠল পাহাড়, “কী হয়েছে তোমার? মন খারাপ কেন?”
“আমার বন্ধুদের খুব অসুখ, পাহাড় ভাই। ওরা কবে ভালো হবে?
“ও এই কথা, আমার চূড়ায় দারুণ একটা ঔষধি গাছ আছে। এই গাছের পাতা পিষে রস বানিয়ে ওদের খাওয়াও। দেখবে একদিনে ভালো হয়ে যাবে।”
“কিন্তু আমি তো তোমার চূড়ায় উঠতে পারব না।”
মনটা খারাপ করে বসে রইল টিনা।
এমন সময় ওদিক দিয়ে বাসায় যাচ্ছিল সেই হরিণটা। “কী খবর টিনা, কী হয়েছে?”
পুরো ঘটনাটা শুনল হরিণ।
“ও এই ব্যাপার ! তুমি কাল আমার মেয়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছ, আজ তুমি হাসবে।” এই বলে এক লাফে পাহাড়ের চূড়ার দিকে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর মুখে করে নিয়ে এল সেই গাছের পাতাসহ একটি ডাল।
টিনা ফিক করে হেসে দিল। তারপর দুজনে মিলে চলে গেল লালু আর বনির বাসায়।
পরদিন তিনজনই একসাথে হল শালগাছের নিচে। নানান খেলায় মেতে উঠল।
ওদের মুখে হাসি আর শেষ হয় না।
গাজীপুর কথা