ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

টেস্ট কিট কি? কিভাবে করোনা ভাইরাসের টেস্ট করা হয়?

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৩০ মার্চ ২০২০

টেস্ট কিট কি? কিভাবে করোনা ভাইরাসের টেস্ট করা হয়?

টেস্ট কিট (Test Kit) শব্দটা খুব পরিচিত হয়েছে করোনা যুগে। কিন্তু জানেন কি এই টেস্ট কিটে কী আছে, আর এ দিয়ে কিভাবে করোনা টেস্ট করা হয়? টেস্ট কিট আসলে কিছুই না, এর ভেতর কান পরিস্কারের কটন বাডের মতো একটা জিনিস আছে যার নাম ’সোয়াব’। আর আছে লেবেল আঁটা একটা ছোট শিশি (ভায়াল), হয়তো একটা জিপলক ব্যাগ।

যার টেস্ট করাতে হবে, প্রথমে সোয়াবটা তার নাকের ভেতর দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে সেখান থেকে ভাইরাসের নমূনা সংগ্রহ করতে হয়। গলার এই অংশটার নাম ন্যাসোফ্যারিংক্স, সেই জন্য এই সোয়াবটিকে বলা হয় ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব। সোয়াবটি ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘারিয়ে ন্যাসোফ্যারিংক্সের নমূনা সংগ্রহ হয়ে গেলে সোয়াবটি ভায়ালে ঢুকিয়ে রোগির সনাক্তকরণ আইডি লেবেলে লিখে ব্যাগে ভরে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়। ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই সোয়াবটি কোন একটি ল্যাবে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। যদি ৭২ ঘন্টায় সোয়াবটি ল্যাবে পৌঁছানো সম্ভব না হয় বা ল্যাবে পৌঁছার পরও দীর্ঘ জটের কারণে পরীক্ষায় দেরী হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সোয়াবটিকে শুরুতেই -৭০ (মাইনাস) ডিগ্রী তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু নাক থেকে এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সর্দি সংগ্রহ করলেও কাজ হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।

এর পরের কাজটাই হলো আসলে করোনাভাইরাসের টেস্টিং। এটি করার জন্য ল্যাবরেটরীতে একটি পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশান) যন্ত্র লাগবে। প্রথমে সোয়াবটির স্যাম্পল থেকে একটি জলীয় দ্রবণ বানানো হয়। এই স্যাম্পলে যদি ভাইরাস থাকে তা জলীয় দ্রবনেও আসবে। বিস্তারিত পদ্ধতি বলছি না, প্রথমে ভাইরাসের RNA র একটি প্রতিরূপ DNA বানানো হয়, তারপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে পিসিআর-এ এই ডিএনএ থেকে অসংখ্যা ডিএনএ তৈরী করা হয়, প্রক্রিয়াটির নাম অ্যাম্পলিফিকেশান – অনেকটা ফটোকপি করার মতো ব্যাপার। অসংখ্য কপি তৈরী হবার ফলে ডিএনএ-টিকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। ডিএনএ-র বৈশিষ্ট থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় এটি করোনাভাইরাসের, নাকি অন্য কিছুর। অল্প কথায় এটিই হলো করোনার টেস্ট। এখন প্রশ্ন হলো যে কেউ, যে কোন ল্যাব কি এই কাজটি করতে পারবে? উত্তর: না। এর জন্য যথেষ্ঠ প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন টেকনোলজিস্ট অবশ্যই লাগবে। (উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এই পদের নাম মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট)। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাহীন মানুষের কাছে সব ডিএনএ-ই দেখতে একই লাগবে। অনেকটা আপনাকে এক্স-রে বা আল্ট্রাসনোগ্রামের সামনে বসিয়ে দিলে আপনি যেমন বুঝতে পারবেন না কোনটা কী জিনিস, এর জন্য প্রশিক্ষিত রেডিওলজিস্ট ও মেডিক্যাল ইমেজিং স্পেশালিস্ট লাগবে।

কখনো কখনো টেস্টে ফলস-নেগেটিভ ফলাফল আসতে পারে, অর্থাৎ কভিড-১৯ থাকার পরও তার কোন ট্রেস পাওয়া না-ও যেতে পারে। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্ষেত্রে পিসিআর পদ্ধতিতে ৫০-৭০% নির্ভূল ফলাফল পাওয়া গেছে, এক্ষেত্রেও অ্যাকুরেসী অনুরূপ হতে পারে।

করোনাভাইরাস টেস্টের দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো রক্ত পরীক্ষা বা সেরোলজিক্যাল টেস্ট – এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডির অস্তিত্ব সনাক্ত করা হয়। এমন একটি পদ্ধতি সম্প্রতি বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং চীনের কোন কোন প্রতিষ্ঠান সফলতার সাথে উদ্ভাবন করেছে বলে জানা গেছে। চীনে ইতিমধ্যে তা বাজারজাত শুরু হয়েছে বলে জানা যায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রও সরকারী অনুমোদন পেয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তারাও উৎপাদনে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি-ও একই পদ্ধতির উপর গবেষণা করছে, শীঘ্রই তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিও বাজারে আসবে বলে ধারনা করা যায়। এই পদ্ধতিগুলোয় টেস্ট কিট দেখতে কেমন হবে তা নির্ভর করবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উপর। এতে কম পক্ষে একটি টেস্ট স্ট্রিপ (প্রেগনেন্সি টেস্ট করার স্ট্রিপের মতো) ও একটি ক্যামিকেল রিএজেন্ট থাকবে। সামান্য রক্ত স্ট্রিপে নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে তার সাথে রিএজেন্ট মেশালে যে দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে, তা থেকে বোঝা যাবে রক্তে অ্যান্টিবডি আছে কিনা। থাকলে প্রমান হবে এই ব্যাক্তির শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করেছে, তাই তার শরীরের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসকে মোকাবেলা করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরী করে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই পদ্ধতির অ্যাকুরেসি সম্পর্কে এখনো জানা যায় নি।

দুটি পদ্ধতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ তফাৎ হলো, প্রথমটি রোগির শরীরে ভাইরাস প্রবেশের পরপরই তা সনাক্ত করতে সক্ষম হবে, কিন্তু পরের পদ্ধতিতে কমপক্ষে কয়েকদিন সময় অতিবাহিত হতে দিতে হবে যাতে রক্তে অ্যান্টবডি তৈরীর প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।

গাজীপুর কথা