ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

টঙ্গীতে ময়লা আবর্জনা থেকে বৃদ্ধাকে উঠিয়ে হাসপাতালে নিলেন এস আই

প্রকাশিত: ১৪:১২, ৯ জুন ২০২০

টঙ্গীতে ময়লা আবর্জনা থেকে বৃদ্ধাকে উঠিয়ে হাসপাতালে নিলেন এস আই

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ঝুঁকি নিয়ে মাঠে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত বহু পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। 

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে ছেলে মাকে রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে, মৃত পিতা মাতার লাশ ধরছে না সন্তান, স্ত্রী স্বামীকে ফেলে চলে যাচ্ছে এমন বহু ঘটনা দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই ঘটছে। 
এমনই পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে রাস্তার ময়লা আবর্জনায় অচেতন অবস্থান পরে থাকা একজন বৃদ্ধা মায়ের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে ইতিহাসে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার এস আই আবুল হাসান।

টঙ্গী স্টেশনরোডের স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা জানায়, আজ ৮ই জুন সোমবার সকাল থেকেই টঙ্গী ফায়ার স্টেশন সংলহ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ময়লার মধ্যে ৬০/৬৫ বছরের একজন বৃদ্ধ মহিলা অচেতন অবস্থায় পরে থাকে কিন্তু করোনা ভাইরাস সন্দেহে কেউ তার কাছে যাচ্ছিল না। ময়লায় বৃদ্ধার কাপড়ের অবস্থাও খুব খারাপ ছিলো। দুপুর আড়াইটার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার একটি গাড়ি মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে আবর্জনার স্তূপের সামনে গিয়ে গাড়িটি থেমে গেলে আমরা ও এগিয়ে যাই। 

এসময় এস আই আবুল হাসান নেমে দ্রুত বৃদ্ধার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সকলকে অবাক করে দিয়ে ময়লায় পড়ে থাকা বৃদ্ধাকে দ্রুত বুকে তুলে নিয়ে দুচোখে জল ছেড়ে দিলেন হাসান। 

তিনি গাড়িতে থাকা সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে ময়লা আবর্জনা থেকে বৃদ্ধাকে ধরে গাড়িতে তুলে নিলেন এবং বৃদ্ধার জন্য দ্রুত খাবারের ব্যাবস্থা করেন। বৃদ্ধা অচেতন থাকায় তাকে দ্রুত টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাষ্টার জেনারেল হাসসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মোঃ খাইরুল কবির রাজিব বলেন, টঙ্গী পশ্চিম থানার এস আই আবুল হাসান দুপুরে আনুমানিক তিনটার দিকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে আসে। বৃদ্ধাকে ভর্তি করার পরেও তার প্রয়োজনী ঔষধ ও খাবারের ব্যাবস্থা করে দীর্ঘ সময় বৃদ্ধার পাশে থাকেন। 

জানা যায়, নিজ কর্মদক্ষতায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সেবক এস আই আবুল হাসান বহু গুনীজন ও মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নিয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ে একাধীক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। টঙ্গী এলাকার অপরাধ নির্মূলে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি।

নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কথা বললে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সেবক আবুল হাসান জানায়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন স্যারের দিক নির্দেশনা ও টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হক স্যারের মতো সাহসী অবিভাবকের পাশে থেকে টঙ্গীবাসীর শান্তি, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধে নেমেছি। সাধারণ মানুষের সেবা করবো বলেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছি। আমার নিজের নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে তবে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার কাছে সবচাইতে বড় দায়িত্ব আর সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের সহযোগীতা করতে পারাটা আমার বড় সৌভাগ্য। 

তিনি আরও বলেন, আজ যদি মায়ের মতো বৃদ্ধাকে হাসপাতালে না নিয়ে যেতাম তাহলে হয়তো রাস্তায় মরে পড়ে থাকতো। একজন অসহায় মানুষকে এমন বিপদগ্রস্থ দেখে চলে যাওয়ার মতো শিক্ষা আমাকে পুলিশবাহিনী দেয়নি। সবাই আমাদের পুলিশবাহিনীর সকল সদস্যদের জন্য দোয়া করবেন মহান আল্লাহ্ যেন আমদের সুস্থ্য রাখেন। আমরা যেন এমনি ভাবে সব সময় সাধারণ মানুষের বিপদে পাশে দাড়াতে পারি।

গাজীপুর কথা