ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জলন্ত লাভায় পুড়েও অবিকৃত ২০০০ বছরের পুরনো মৃতদেহ ও মস্তিষ্ক

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৬ নভেম্বর ২০২০

জলন্ত লাভায় পুড়েও অবিকৃত ২০০০ বছরের পুরনো মৃতদেহ ও মস্তিষ্ক

প্রকৃতির রহস্যের সমাধান করা খুবই দুষ্কর। ২০০০ বছর আগের এক পুড়ে যাওয়া মস্তিষ্ক হয়েছে কাচে পরিণত। সেই মস্তিষ্কেরই খোঁজ মিলল হারানো এক সভ্যতা থেকে।

২০০০ বছর আগে ওই সভ্যতা জলন্ত লাভায় পুড়ে ভষ্ম হয়ে গেলেও প্রকৃতি সেই প্রমাণ রেখে দিয়েছে সংরক্ষিত কাচ হওয়া মস্তিষ্ক ও মৃতদেহের মাধ্যমে।

তবে কীভাবে একটি মস্তিষ্ক কাচে পরিণত হতে পারে? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে? শুধু মস্তিষ্কের কোষই নয়, ২০০০ বছর আগের ওই দেহ থেকে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে স্নায়ু কোষ আর মেরুদণ্ডও। মস্তিষ্কের কোষের মতো এগুলোও জমাটবাঁধা অবস্থাতেই রয়েছে।

 

মস্তিষ্ক

মস্তিষ্ক

আজ থেকে ২০০০ বছর আগে ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির লাভায় চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় আস্ত এক সভ্যতা। এমন ঘটনা ইতিহাসে আর দু’টি নেই। তবে কে ভেবেছিল এই জ্বলন্ত লাভায় পুড়ে ছাই না হয়ে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে এক মানবদেহ, এমনকি তার মস্তিষ্কও। 

৭৯ খ্রিষ্টাব্দে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে হারকিউলেনিয়াম শহরটি চাপা পড়ে যায়। গত শতাব্দীতে তার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হয় দেহটি। দেহটি আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৬০ সালে।

 

মস্তিষ্কের কোষ

মস্তিষ্কের কোষ

গবেষকদের প্রতিবেদন বলছে, এক কাঠের বিছানায় মুখ নিচু করে শুয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল দেহটি। অনুমান করা হয় রাজা অগাস্টাসকে দেবতা রূপে পূজা করা হতো সে সময়ে। আর সেই কাজটি করতেন এই মানুষটি। অর্থাৎ পেশায় তিনি ছিলেন পুরোহিত। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ২৫-এর কাছাকাছি।

ইতালির নেপলস ফেদেরিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ পিয়ের পাওলো পেট্রোন ছিলেন এই দেহ নিয়ে চলা গবেষক দলের নেতৃত্বে। পেট্রোন জানান, ২০১৮ সালে যখন তারা কাজ করছিলেন এই নিয়ে, দেহের মাথার খুলির ভেতর থেকে কাচের মতো কিছু তারা দেখতে পেয়েছিলেন। তখন থেকেই আবার নতুন করে বিশদে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।

 

ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই নগরী

ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই নগরী

চলতি বছরের শুরুর দিকে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত গবেষণায় পেট্রোন এবং তার সহকর্মীরা উল্লেখ করেন, অগ্ন্যুৎপাতের কারণে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঠিক তারপরেই হিমপ্রবাহের জন্য মস্তিষ্কের কোষ কাচের মতো হয়ে গিয়েছে।

অনুমান করা হচ্ছে, এই মানুষটির মস্তিষ্ক প্রচণ্ড গরম লাভার সংস্পর্শে এসে প্রথমে নিশ্চয়ই একেবারে গলে গিয়েছিল। তার পর দ্রুত ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার ফলে কাচের মতো দেখাচ্ছে, বলছেন গবেষকরা। শুধু মস্তিষ্কের কোষই নয়, ২০০০ বছর আগের ওই দেহ থেকে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে স্নায়ু কোষ আর মেরুদণ্ডও। মস্তিষ্কের কোষের মতো এগুলোও জমাটবাঁধা অবস্থাতেই রয়েছে।

 

অনেক মানুষের মৃতদেহের সন্ধান মেলে ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী থেকে

অনেক মানুষের মৃতদেহের সন্ধান মেলে ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী থেকে

সাম্প্রতিক নতুন করে পাওয়া তথ্য নিয়ে গবেষকরা কাজ করেন, যা প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন সাময়িকী পিএলওএস ওয়ানে। অগ্ন্যুৎপাতের সময়কার ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করেও ভিট্রিফিকেশনের ফলে যে ২০০০ বছর ধরে অবিকল থাকল দেহটি, এটি বোঝার পর থেকে নৃতত্ত্ববিদদের সামনে একটি নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে।

এবার তবে জেনে নেয়া যাক হারকিউলেনিয়াম শহরটি কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল-

ভিসুভিয়াস পর্বত হলো বর্তমান ইতালির একটি বহুস্তর-বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি। যার অগ্নৎপাত ঘটে ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। এটি ইউরোপিয় ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত ও মারাত্মক অগ্নুৎপাতগুলোর একটি, যে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ ও নথিভুক্ত করেন প্লাইনি দ্য ইয়াংগার নামক এক রোমান কবি এবং প্রশাসক।

 

জ্বলন্ত লাভা মুহূর্তেই বিলীন করে দেয় এক সভ্যতাকে

জ্বলন্ত লাভা মুহূর্তেই বিলীন করে দেয় এক সভ্যতাকে

ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্নুৎপাতের কারণে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার (২১ মা) উঁচু পর্যন্ত উঠেছিলো। অতি উচ্চ তাপমাত্রার টেফরা এবং গ্যাসের মারাত্মক মেঘ, যা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ মিলিয়ন টন পরিমাণ বিগলিত শিলা, বিচূর্ণ ঝামা পাথর ও আগ্নেয়ভস্ম নির্গত হয়। এর থেকে অনুমান করা যায় যে, এই বিষ্ফোরণে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক হামলার চেয়েও এক লাখ গুণ বেশি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়েছিলো।

সুবিশাল পিওরোক্লাস্টিক স্ফীতির নিচে এবং ছাইস্তুপে বেশ কিছু রোমান জনবসতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এই লাভায়। চাপা পড়ে, যার মধ্যে পম্পেই এবং হেরকুলেনিয়াম উল্লেখযোগ্য। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে উক্ত স্থানগুলোর প্রাক্তন অধিবাসীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়, ফলে স্থানটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। একই সঙ্গে যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও ভিসুভিয়াস জাতীয় উদ্যানের অংশ।

 

দর্শণার্থীদের জন্য এখন উন্মুক্ত রয়েছে নগরীটি

দর্শণার্থীদের জন্য এখন উন্মুক্ত রয়েছে নগরীটি

উল্লেখিত দুইটি শহরের মোট বাসিন্দা ছিলো ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার জন। এখন পর্যন্ত ১৫০০ মরদেহের অবশিষ্টাংশ পম্পেই এবং হেরকুলেনিয়ামে পাওয়া গিয়েছে। যদিও সর্বমোট মৃত্যু তালিকাটি এখনো অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট। মূলত এই ঘটনা থেকেই ভিসুভিয়ান অগ্নুৎপাতের নামকরণ করা হয়েছে। 

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন