ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চুলকালে আরাম লাগে কেন?

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

চুলকালে আরাম লাগে কেন?

ছোট-বড় সবারই নানা কারণে চুলকানি হয়ে থাকে। এর কারণ যে শুধু চর্মরোগ তা কিন্তু নয়। চর্মরোগ ছাড়াও মানুষ গা চুলকায়। শুষ্ক-রুক্ষ ত্বক, মশার কামড়, অ্যালার্জি ইত্যাদি নানান কারণে চুলকানি হয়ে থাকে। আর চুলকালে বেশ আরামও অনুভূত হয়।

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ডার্মাটোলজি’র ত্বক বিশেষজ্ঞ অ্যালিক্স জে. চার্লস বলেন, চুলকানির কারণ খুঁজের বের করার বিষয়টি জটিল। কখনো তা খুবই সহজ আবার কখনো প্রচণ্ড দুর্বোধ্য।

কেন চুলকানি হয়, এর সাধারণ কারণ, কেনো চুলকানো এতটা স্বস্তিদায়ক এবং কীভাবে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইত্যাদি এসব প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দেয়। এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট। চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

চুলকানির কারণ

ত্বকে থাকা স্নায়ুগ্রন্থি ‘প্রুরিসেপ্টরস’ হলো চুলকানি প্রধান কারণ। এই গ্রন্থিগুলো উদ্বেলিত হলে চুলকানোর প্রবল ইচ্ছা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে ভূমিকা রাখে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও, নিঃসরণ করে ‘হিস্টামিনস’ নামক উপাদান যা চুলকানির অনুভূতির সুত্রপাত ঘটায়, জানান নিউ ইয়র্কের ত্বক বিশেষজ্ঞ মেলেনি গ্রোসম্যান।

শরীরের ভেতরের অংশ আর বাহ্যিক পৃথিবীর মধ্যকার সুরক্ষা দেয়াল ত্বকে কোনো ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি আপনাকে জানানোর মাধ্যমটি হলো এই চুলকানি।

জৈব রাসায়নিক উপাদান থেকে চুলকানি

ডা. গ্রোসম্যান বলেন, অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরীন জৈব রাসায়নিক উপাদান চুলকানির কারণ হতে পারে। যেমন ‘ওপিওয়িডস’ ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুলকানি দেখা দেয়। যার কারণ হলো ব্যথা আর চুলকানি এই দুটোতেই সাড়া দেয় এমন স্নায়ু। আবার বৃক্ক ও যকৃতের রোগে আক্রান্তদের মধ্যেও চুলকানি দেখা দেয়, যার কারণ শরীরে অত্যধিক বিষাক্ত উপাদান।

মনোস্তাত্ত্বিক চুলকানি

‘সেরোটনিন’ ও ‘নোরেপিনেফ্রিন’ নামক রাসায়নিক উপাদানের নিঃসরণের কারণে চুলকানির সৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে আরো দেখা দিতে পারে মানসিক অস্বস্তি, হতাশা ও মানসিক চাপ।

ডা. চার্লস ব্যাখ্যা করেন, বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রিয়জনের মৃত্যু ইত্যাদি শোকাবহ মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিকে অনেকসময় চুলকানির শিকার হতে দেখা যায়। আবার অতিরিক্ত তাপ বা গরমের কারণেও চুলকানি হয়।

স্নায়বিক চুলকানি

এই ঘটনা বিরল। এক্ষেত্রে ত্বকের কোনো সমস্যাই থাকে না। তবে মস্তিষ্ক এমন সাড়া দেয় যে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে চুলকানো প্রয়োজন। মস্তিষ্কের কোনো সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে।

শুষ্ক-রুক্ষ ত্বক

ডা. চার্লস বলেন, ময়েশ্চারাইজারের অভাবে শুষ্ক ত্বকের চুলকানি দেখা দেয়।

একজিমা, সিরোসিস ইত্যাদি ত্বকের রোগেও চুলকানি হয়।

চুলকানোর সময় সন্তুষ্টির কারণ

এমনটা হওয়ার প্রধান কারণ হলো, যখন আপনি চুলকাচ্ছেন তখন ওই স্থানে প্রাথমিক যে অস্বস্তি অনুভব করছিলেন তা থেকে অন্যমনষ্ক হয়ে যান নতুন সংবেদনশীলতার কারণে।

গ্রোসম্যান বলেন, চুলকানোর সময় আপনি ত্বকের ভিন্ন ধরনের সংবেদনশীলতার সৃষ্টি করছেন। চুলকানোর মাত্রার উপর নির্ভর করবে ব্যথার মাত্রাও। আর সেটাই সাময়িক সময়ের জন্য প্রশান্তি দেয়। এই চুলকানোর কারণেই ওই স্থানে নতুন ক্ষত সৃষ্টি হয়, সংক্রমণ বাড়ে। আর এভাবেই যত বেশি চুলকানি ততই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

করণীয়

ডা. গ্রোসম্যান বলেন, চুলকানি প্রধান নিরাময় হলো তার কারণ দূর করা। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে যেসব স্থানে বেশি চুলকানি হয় সেসব স্থানে সাবান ব্যবহার কমাতে হবে। সেই সঙ্গে ওই স্থানগুলোতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে বেশি।

পোকামাকড়ের কামড়ে চুলকানির ক্ষেত্রে সবার আগে পোকামাকড় দমন করতে হবে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ‘১% হাইড্রোকর্টিসোন অ্যান্টি-ইচ ক্রিম’ কিংবা ‘ক্যালামাইন লোশন’ ব্যবহার করতে হবে। অ্যালার্জিজনীত চুলকানির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ‘অ্যান্টিহিস্টামিন’ ধরনের ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

অন্যান্য সব ধরনের চুলকানির জন্য আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক কারণ চিহ্নিত করার পরই তা নির্মূলের উপায় নিয়ে কাজ করা যাবে।

গাজীপুর কথা