ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং

যার পরতে পরতে রচিত হয়েছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এবং দেশভাগের দূর্লভ ইতিহাস; পাহাড়, সাগর বেষ্টিত পূর্ববঙ্গের সৌন্দর্যের রাণী চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান বরাবরই বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলোর কাছে ছিলো গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রিটিশরা তাদের সামরিক এবং বাণিজ্যিক পরিকল্পনা মাথায় রেখে ১৮৯৯ সালে ইংরেজ ও মুঘল স্থাপত্যের সমন্বয়ে অপূর্ব শোভামণ্ডিত সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং বা (সি.আর.বি) নামে চট্টগ্রামে বিশাল ইমারত নির্মাণ করে।

কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ইমারত টি ছিলো সর্বব কর্মচঞ্চল, সরকরের লাট বাহাদুর, আমলা, পাইক পেয়াদা, কেরানী, চাপরাশি, মালী, কুলির পদচারণায় কর্মমুখর।

এই রেলওয়ে ভবন সংলগ্ন ছিলো ফিরিঙ্গি অফিসারদের ক্লাব। ব্রিটিশ সাহেবরা অবসরের সময়টুকু এখানে আমোদ-প্রমাদ করে কাটাতেন, আড্ডা দিতেন, নিজ দেশে ফেলে আসা আত্মীয়স্বজনের গল্প করতেন।

চিত্ত বিনোদনের জন্য ছিল কাঠের পাটাতনের নাচ ঘর। নর্তকীর নূপুরের ঝংকার আর সুরের মূর্ছনায় আন্দোলিত হত কাঠের পাটাতনের সাথে সাহেবদের হৃদয়। যা আজ রূপকথার গল্পের মতো শোনায়।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং

১৮ এপ্রিল, ১৯৩০ সালে এই রেলস্টেশনকে ভারতবর্ষের সাথে সম্পূর্ণ অচল করে দিয়ে রচিত হয়েছিল এক অসীম সাহসিকতার উপাখ্যান। চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি ধুম রেলস্টেশনে হঠাৎ করে লাইনচ্যুত হয়ে যায় একটি মালবাহী ট্রেন।

কারা যেন রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে রেখেছিল। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে পুরো ভারতবর্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই একই রাতে অন্য একটি দল হামলা চালায় চট্টগ্রামের টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিসে।

সব যন্ত্রপাতি গুড়িয়ে দিয়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয় ভবনটিতে। ফলে এবার সম্পূর্ণরূপে বিকল হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা।সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে মাত্র ৬৫ জন তরুণ, যুবকের একটি দল।

পরাক্রমশালী ব্রিটিশ শক্তির হাত থেকে চট্টগ্রামকে স্বাধীন করার অসম্ভব এক স্বপ্ন বুকে লড়াইয়ে নেমেছিল সেদিন।সকল বিপ্লবীদের বিশ্বাসের পালে হাওয়া লাগিয়ে সেদিন চট্টগ্রামে উড়েছিল ভারতবর্ষের পতাকা।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং

অনেক রথি-মহারথিদের আগমনে ধন্য হয়েছিল এই রেলস্টেশন। ১৯০৭ সালের ১৭ ই জুন এই স্টেশনের পদপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রামবাসীর অভিবাদন গ্রহণ করেছেন।

আর এই স্টেশন থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি কর্ণফুলী নদী অবলোকন করেছেন এবং তৎকালীন লায়ন সিনেমা হলে কবিকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করে হয়েছিল। এগুলো আজ ইতিহাস।

অতি সম্প্রতি জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় অভিনীত কবিগুরুর “হঠাৎ দেখা” গল্প অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রের শুটিং চট্টগ্রামে সম্পন্ন হয়। শুটিং শেষে দেবশ্রী রায় গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় রেলওয়ে বিল্ডিং (সি.আর.বি)-এ।

দেশভাগের পূর্বে দেবশ্রী রায়ের দাদুও এখানে চাকুরী করতেন, এতবছর পরেও দাদুর স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে ভুল করেননি অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন