ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গোপাল ভাঁড়কে যে কারণে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২৭ জুলাই ২০২০

গোপাল ভাঁড়কে যে কারণে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা

যিনি ভাঁড়, আমাদের কাছে তিনিই তো গোপাল। ভাঁড়ের অবয়ব মনে এলে তাই অবধারিতভাবে টাক মাথায় টিকিওয়ালা পেট মোটা দারুণ এক রগুড়ে লোকের চেহারাই ভেসে ওঠে বাঙালির চোখে। তার নাম অবশ্যই গোপাল ভাঁড়। হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড়ের নাম শুনেননি, বিশ্বে এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

গোপাল ভাঁড় ছিলেন মধ্য যুগে নদিয়া অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত মনোরঞ্জনকারী। তার আসল নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়া জেলার প্রখ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ সভায় নিযুক্ত ছিলেন। রাজা তাকে সভাসদদের একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভা ও জনগনের যাবতীয় বিনোদনের আস্ত এক ভাণ্ডার ছিলেন বুদ্ধিমান গোপাল। কিন্তু এত প্রিয় মানুষ হয়েও বাংলাতে তার ঠাঁই হয়নি; বরং দেয়া হয়েছিল ফাঁসির আদেশ!

তখন ছিল ১৭৫৭ সাল। তরুণ সিরাজ-উদ-দৌলা তখন বাংলা প্রেসিডেন্সি (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ), বিহার ও উড়িষ্যার নবাব ছিলেন। তখন মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎ শেঠ, রায় দূর্লভ, উমিচাঁদসহ অনেকেই নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই তাদের হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শর্তসাপেক্ষে ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ঠিক এই সময় কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নবাব বিরোধী এই ভয়ংকর বলয়ে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করেন। কৃষ্ণচন্দ্রের এই পরিকল্পনায় রাজসভার সবাই সমর্থন করলেও শুধু একজন ব্যক্তি ‘না’ করলেন। আর তিনি হলেন গোপাল ভাঁড়।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে গোপাল বললেন, ইংরেজরা গায়ে সুচ হয়ে ঢুকে কুড়াল হয়ে বের হবে। তাদের স্বার্থ-বিরোধী কাজ করলে সব উপকারের কথা ভুলে আপনাকে শূলে চড়াতে পিছপা হবে না।

সর্বোপরি বাংলার এমন সর্বনাশ না করতে গোপাল বার বার অনুরোধ করলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে। কিন্তু রাজা তার কথায় কর্ণপাত করলেন না বরং তার সভাসদদের নিয়ে গোপালকে বিদ্রুপ করতে লাগলেন। কৃষ্ণচন্দ্র গোপালকে শর্ত দিলেন, গোপাল যদি নবাবকে মুখ ভেংচি দিয়ে আসতে পারে তবেই তিনি নবাবের বিরুদ্ধে যাবেন না।

কৃষ্ণচন্দ্রের শর্ত শুনেই গোপাল হাঁটা শুরু করলেন মুর্শিদাবাদের দিকে। কিন্তু তাকে ভাগিরথী নদীর তীরে গড়ে ওঠা হীরাঝিল প্রাসাদে ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না কিছুতেই। গোপাল বুদ্ধি করেই এক প্রহরীর হাতে কামড় বসিয়ে দিলেন। ফলশ্রুতিতে বিচারের জন্য নবাবের কাছে নেয়া হলো গোপালকে।

পুরো ঘটনা শুনে নবাব বললেন, ‘তুমি কে, কেন এসেছো?’ গোপাল কোনো কথা না বলে নবাবকে মুখ ভেংচি দিলেন। নবাব রেগে গোপালকে আটক করলেন। বললেন, আগামীকাল তোমার বিচার হবে।

এরইমধ্যে গোপাল মীরজাফরকে চুপি চুপি বললেন, ‘আমি এসেছিলাম তোমাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিতে। কিন্তু কিছু বলবো না। কারণ এসব কথা ফাঁস করে দিলে কৃষ্ণচন্দ্রও ফেঁসে যাবে। নবাব তাকে সরিয়ে অন্যজনকে ক্ষমতায় বসাবেন। আমি চাই না কৃষ্ণচন্দ্র তার ক্ষমতা হারাক। তিনি যে আমার অন্নদাতা।’

মীরজাফর তার এমন কথা শুনে রীতিমত ঘাবড়ে গেল। মীরজাফর ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে গোপলের ফাঁসির ফাঁসির ব্যবস্থা কর করলেন। কিন্তু গোপালের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। নবাব গোপালের মুখের দিকে তাকাতেই গোপাল আবার ভেংচি দিলো। এবার নবাব রীতিমত ভাবনায় পড়ে গেলেন।

নবাব ভাবলেন, এ তো পাগল! তাকে ফাঁসি দেয়া ঠিক হবে না। নবাব গোপালকে মুক্ত করে দিলেন।

দেশপ্রেমিক গোপাল ফিরে এলেন কৃষ্ণনগরে। যখন জানতে পারলেন কৃষ্ণচন্দ্র তার সিদ্ধান্তে অটল গোপাল ঠিক করলেন রাজসভায় আর যাবেন না। এমকি রাজ্যেই আর থাকবেন না। অত্যন্ত ব্যথিত মন নিয়ে কাউকে কিছু না বলে রাতের অন্ধকারে পরিবার নিয়ে রাজ্য ত্যাগ করলেন গোপাল ভাঁড়।এরপর থেকে সদা হাস্যময় গোপাল ভাঁড়কে বাংলায় আর দেখা মেলেনি।

গাজীপুর কথা