ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরের টঙ্গীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৫ দিনে মৃত্যু ২৪ জনের

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১৬ জুন ২০২০

গাজীপুরের টঙ্গীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৫ দিনে মৃত্যু ২৪ জনের

রাজধানীর নিকটতম শিল্পশহর টঙ্গীতে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। হুইসেল বাজিয়ে মহল্লায় অ্যাম্বুল্যান্স এলেই শোনা যাচ্ছে কান্নার রোল। অনেকে ঘরেই মারা যাচ্ছে। একজনের দাফন শেষ না হতেই পাওয়া যাচ্ছে নতুন মৃত্যু সংবাদ। আবার কেউ কেউ আক্রান্ত স্বজনকে নিয়ে ছুটছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য হন্যে হয়ে দিগ্বিদিক ছুটছে রোগীরা। ১৫ দিনে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুই শিক্ষক, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাসহ ২৪ জন। এর মধ্যে ১২ জুন এক দিনে মারা গেছেন সাতজন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জনই টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং শিক্ষক ও তাঁদের স্বজন। সব মিলিয়ে টঙ্গী যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, ৩০ মে বিকেলে মারা যান টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম ফারুক (৫০) কুর্মিটোলা হাসপাতালে এবং রাতে নিজ বাসায় মারা যান টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আনিসুর রহমান (৫২)। টঙ্গীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের নমুনা পরীক্ষায় শিক্ষক ফারুক করোনা পজিটিভ হন এবং আনিসুর করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। ৩১ মে করোনা উপসর্গ নিয়ে টঙ্গীর আরিচপুর ও বোর্ডবাজার এলাকার দুজনই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন আউচপাড়ার সুরতরঙ্গ সড়কের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত আনসার অ্যাডজুট্যান্ট মমিনুল হকের স্ত্রী (৫৫) কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান। পরদিন ১ জুন মারা যান টঙ্গীর বড় দেওড়া এলাকার গৃহবধূ র্ঝণা আক্তার (৪২)। ২ জুন রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন টঙ্গী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইমলাম (৬০) ও টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিনের মা হোসেন বানু (৭৬)। তাঁরা সবাই জ্বর-ঠাণ্ডা, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। হোসেন বানু বার্ধক্যেও ভুগছিলেন।

৩ জুন রাতে মারা যান টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের কলেজ সমন্বয়কারী মো. মাহবুব উল আলমের শ্বশুর মধুমিতা সড়কের বাসিন্দা আবদুর রশিদ (৮৫)। পরদিন বৃহস্পতিবার কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কাজী জামাল উদ্দিন মাসুমের বড় ভাই কাজী জহির উদ্দিন আহম্মেদ জহির (৬৫)।
৮ জুন সকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান টঙ্গীর সুরতরঙ্গ সড়কের বাসিন্দা হাজী হোসেন আলী (৫৩)। তিনি এলাকার সাবেক কমিশনার আবুল হোসেনের ছোট ভাই। আবুল কমিশনারও রাজধানীর কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই দিন মারা যাওয়া আরো দুজন হলেন টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দত্তপাড়ার কাজিম উদ্দিন (৭৫) ও উত্তর আইচপাড়ার হোসেন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা ছাত্তার মোল্লার চাচাতো ভাই কামাল হোসেন মোল্লা (৬০)। ১০ জুন দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে (করোনা ডেডিকেটেড) মারা যান টঙ্গীর মিরাশপাড়া নিবাসী গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সিরাজ মিয়া (৫৩)।

টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস রূপ পরিবর্তন করেছে। আগে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পর রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিত। এখন পরীক্ষায় দেখা গেছে এ ভাইরাস ভেতরে গিয়ে দ্রুত রক্ত জমাট বেঁধে ফেলছে। এতে রোগী হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। করোনায় মৃত্যুকে অনেকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ভেবে ভুল করছে।

গাজীপুর কথা