ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে চা চাষ করে সম্ভাবনা তৈরি করেছেন লুৎফর রহমান

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৮ নভেম্বর ২০২০

গাজীপুরে চা চাষ করে সম্ভাবনা তৈরি করেছেন লুৎফর রহমান

চা বাগান শব্দটি শুনলে মানচিত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট এলাকাকেই খুঁজবেন বেশিরভাগ মানুষ। সবুজের ঢেউ খেলানো বিশাল বিশাল চা বাগানের ছবিই হয়তো চোখে ভেসে উঠবে। বাংলাদেশে চা চাষের খোঁজখবর যারা বেশি রাখেন তারা দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু টিলা, উঁচু চালাজমিসমৃদ্ধ ভাওয়ালের গাজীপুরেও চায়ের আবাদ হচ্ছে, তা ভাবাটা একটু কঠিনই।

কাঁঠালের রাজধানীখ্যাত এ এলাকায় ফলে না এমন উদ্ভিদের দেখা মেলা ভার হলেও দীর্ঘদিন ধরেই চাষ না হওয়া ফসলের তালিকায় ছিল ‘চা চাষ’। এবার সেই অসাধ্য কাজটি সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন লুৎফর রহমান নামের এক অধ্যাপক। গাজীপুরের কাপাসিয়ার নিজের পৈতৃক বাড়ির অব্যবহৃত ৩ হেক্টর জমিতে তিনি চা চাষ শুরু করেছেন। তার আশা, অসাধ্য এ কাজটির মাধ্যমে তিনি গাজীপুরে চা চাষ করে সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া হলেও লুৎফর রহমানের বেড়ে ওঠা ছিল সিলেটে। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (৪র্থ ব্যাচ) থেকে স্লাতকোত্তর ডিগ্রিধারী লুৎফর রহমান জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন (১৯৭৩-২০০৮) সাল পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্বপালন করছেন।

পেশার তাগিদে চায়ের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের চেনা-জানার সূত্র ধরেই চা চাষের পরিকল্পনা তৈরি করেন এ অধ্যাপক। আর বেছে নেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার চিনাডুলি গ্রামের পৈতৃক সম্পত্তির পরিত্যক্ত জায়গাগুলো।

তার মতে, হাজারও উদ্ভিদের মধ্যে একমাত্র চা গাছগুলোই ব্যতিক্রম। কেননা এর বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তা আপনাকে কিছু দেবেই। অন্তত চা গাছ কারও সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা করে না। গাজীপুর যেহেতু বন্যামুক্ত এলাকা, উঁচু চালাজমিসমৃদ্ধ সে জন্যই বাড়ির আশপাশের প্রায় ৩ হেক্টর জমি নির্ধারিত করে তিনি বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে ২০১৯ সালে সিলেট থেকে ১০ হাজার চারা এনে রোপণ করেন। অল্পদিনেই তার রোপিত এ গাছগুলো বেড়ে ওঠে এর সম্ভাবনা তৈরি করায় চলতি বছর বাড়ির পাশের শীতলক্ষ্যার চরে আরও বেশ কিছু জমিতে তিনি চা গাছ রোপণ করেন। তার আশা কয়েক বছরেই তিনি এ বাগান থেকে উৎপাদনে যেতে পারবেন।

তিনি জানান, আগে আমাদের দেশে সিটিসি (অর্থোডক্স) জাতীয় চা চাষ হতো। দিন দিন এ জাতীয় চা চাষ কমে গেছে। বর্তমানে এ জাতীয় চা শুধু প্রতিবেশী ভারতের দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত হয়। অর্থোডক্স অর্থাৎ প্রাচীন চা, তিনি এ গাজীপুর থেকেই উৎপাদন করতে চান। সে লক্ষ্যেই তার পথচলা। বর্তমানে সারাদেশেই চা চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। গাজীপুরের পাশেই ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় চা চাষ হচ্ছে। সে হিসেবে গাজীপুরেও চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, যেখানে পানি জমে না থাকে, যে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি, সেচের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানেই মূলত চা চাষ হতে পারে। এমনকি সমতল ভূমিতেও। বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এ অর্থকরী ফসলের সম্প্রসারণে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি এ অধ্যাপকের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, চা দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হওয়ায় এ চাষ সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের অনেক এলাকার সমতল ভূমির পাশাপাশি গাজীপুরের পাশেই ময়মনসিংহেও চা চাষ হচ্ছে। তবে এখনো গাজীপুরের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। হয়তো পরীক্ষা করলে বলা যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, শুধু চা চাষ করলেই হবে না, এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত করা। সে বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে।

সূত্র: আমাদেরসময়

গাজীপুর কথা