ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

খালের পানিতে ভেসে উঠলো তিন হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা!

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ৮ জুলাই ২০২০

খালের পানিতে ভেসে উঠলো তিন হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা!

তুরস্কের তুর্কমেন কারাহয়ুক অঞ্চলের স্থানীদের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। প্রতিদিনের মতো এদিনও সেখানকার একজন কৃষক কাজ করতে গিয়ে পাশের খালে একটি পাথর ভেসে থাকতে দেখেন। পাথর থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তিনি কৌতূহলী হন পাথরের গায়ে অজানা অচেনা কিছু আঁকিবুঁকি দেখে। এটা গত বছরের ঘটনা। বিশালাকার এই পাথরের কথা তিনি জানান স্থানীয় প্রশাসনকে।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা আসতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়। প্রত্নতত্ববিদ জেমস ওসবোর্ন বলেন, তারা পাথরটি পানিতে ভাসতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে নেমে যান কোমর জলে। পাথরের উপর লেখা দেখে পরিষ্কার হল এটি লুইয়ানে লেখা। তাম্র ও লৌহ যুগে এই এলাকায় ওই ভাষার ব্যবহার হত। সে প্রায় ১২০০-৩০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কথা। 

প্রত্নতত্ববিদ্যায় প্রাগৈতিহাসিক যুগকে যে তিনভাগে ভাগ করা হয়, লৌহ যুগ হচ্ছে সেই তিন যুগের সর্বশেষ যুগ। প্রস্তর যুগ ও ব্রোঞ্জ যুগের পরে লৌহ যুগের আবির্ভাব। লৌহযুগের সময়কাল ও বৈশিষ্ট্য অঞ্চলভেদে ভিন্ন। সব অঞ্চলেই লৌহযুগ শেষে ঐতিহাসিক যুগের আবির্ভাব, যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো লিখিত সংরক্ষিত ইতিহাস। উদাহরণ স্বরুপ, ব্রিটেনের লৌহযুগ শেষ হয় রোমান বিজয় এর মাধ্যমে, যার পর হতে ব্রিটেন এর লিখিত ইতিহাস সংরক্ষণ শুরু হয়। 

 

পানিতে ভেসে ওঠে পাথর

পানিতে ভেসে ওঠে পাথর

প্রাগৈতিহাসিক যুগের যে সময়কালে কোনো এলাকার ধাতব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি মূলত লোহা দ্বারা তৈরি হত সেই সময়কালকে প্রত্নতত্ববিদ্যায় লৌহযুগ বলা হয়। লোহার ব্যবহার শুরুর সময় মানবসমাজে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যার মধ্যে কৃষিব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং শিল্পকলা অন্যতম। 

খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০-১২০০ অব্দে ভারতে এই যুগের নিদর্শন পাওয়া যায়। তবে ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই যুগের সমৃদ্ধির খুব কমই প্রমাণ মিলেছিল। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন তুরস্কের এই অঞ্চলে তাম্র ও লৌহ যুগের বেশ সমৃদ্ধি হয়েছিল। 

পাথরের উপর হায়ারোগ্লিফ সম্পর্কে জানতে অনুবাদকের সাহায্য নেয়া হয়। পাথরের উপর এই হায়ারোগ্লিফকে বলে স্টেলে। সেখান থেকে জানা যায়, ওই অঞ্চলে প্রাপ্ত হায়ারোগ্লিফে রয়েছে যুদ্ধ জয়ের বর্ণনা। প্রায় তিন হাজার বছর আগে অ্যানাটোলিয়ার ফ্রিজিয়ার পরাজয়ের কথা লেখা আছে সেই পাথরে। কিং মিডাসের সময়কারও যুদ্ধের কথা ফুটে উঠেছে বলে অনুমান প্রত্নতত্ত্ববিদদের। এই যুদ্ধে লোহার অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল বলেও জানা যায়। 

 

প্রাপ্ত শহর থেকে পাওয়া পাথর

প্রাপ্ত শহর থেকে পাওয়া পাথর

প্রাপ্ত এই পাথরের লেখা জানান দিচ্ছে, হারতাপু নামের এক রাজার থেকে এসেছিল সেই বিজয় বার্তা। অনুমান করা হচ্ছে, হারতাপুর সৈন্য মিডাসের এলাকা দখল করেছিল। সেই বার্তাই রয়েছে উদ্ধার হওয়া পাথরে। প্রাচীনকালে তুরস্ক অঞ্চলে ছিলেন রাজা কিং মিডাস। গ্রিক পুরাণ অনুসারে তার ছোঁয়াতেই না কি সব সোনা হয়ে যেত। 

ইতিহাসে এ নিয়ে অনেক কথা থাকলেও তার সাম্রাজ্যের অনেক কিছুই রয়ে গেছে। সম্প্রতি সেই সাম্রাজ্যের কিছু নিদর্শনের খোঁজই পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। হারতাপু সম্বন্ধেও ইতিহাস থেকে খুব কমই জানা যায়। তবে এই স্টেলে থেকে অনুমান করা যায়, তুর্কমেন কারাহয়ুক হারতাপুর রাজধানী হতে পারে। এই এলাকার প্রায় ৩০০ একর এলাকা জুড়ে তার রাজধানী বিস্তৃত ছিল বলে ধারণা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। 

হারতাপু নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং গবেষক ওসবোর্ন বলেছেন, তার রাজত্বের ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। তবে লৌহ যুগে মধ্য প্রাচ্য সম্পর্কে কিছু তথ্য আমরা পেতে পারি। গত বছর এই অঞ্চলে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তারপর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো খনন কার্য অনেকটাই বাকি। এর মধ্যেই তারা খোঁজ পেয়েছেন হাজার হাজার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া পুরনো সভ্যতার খোঁজ। যে সভ্যতা হারিয়ে গেছে ইতিহাস থেকেও। 

 

সেই সভ্যতা

সেই সভ্যতা

তবে বর্তমানে করোনার কারণে কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেলেও, এ বছরই আন্তর্জাতিক প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল যাবে সেখানে। চলবে খনন কার্যও। তাই ওসবোর্নের আশা, খনন কার্য আরও ব্যাপক হারে শুরু হলে এর ভিতর প্রাসাদ, স্থাপত্য, বাড়ি-ঘরের নিদর্শন পাওয়া যাবে। যদিও এরইমধ্যে তারা বিভিন্ন নিদর্শন খোদাই করা পাথরের সন্ধান পেয়েছেন। তারা আশা করছেন আরো অনেক কিছুই জানা যাবে এই বিষয়ে।

হারতাপু বিশাল এক সাম্রাজ্য ছিল বলে ইতিহাসের বিভিন্ন জায়গায় তার আভাস পাওয়া যায়। তবে এখান থেকে তার বিস্তৃতি বা সময়কার নানা অজানা আর হারিয়ে যাওয়া তথ্য জানা যাবে। যা হয়তো অতীতের অনেক সমৃদ্ধ দিক উম্মোচন করবে। ইতিহাসের পাতা ভারি হবে এই সভ্যতার বিজয়গাঁথা দিয়ে। আর আবারো হয়তোবা একবার ব্যথিত হবে বিলুপ্ত হওয়ার করুণ কাহিনীতে।

গাজীপুর কথা