ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ক্ষমার দশকে রোজাদারের দোয়া ও করণীয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ এপ্রিল ২০২১

ক্ষমার দশকে রোজাদারের দোয়া ও করণীয়

রমজানের দ্বিতীয় দশক চলছে। রোজাদারের জন্য এটি মাগফেরাত তথা ক্ষমার দশক। ক্ষমার দশকে রোজাদারের জন্য রয়েছে কিছু বিশেষ দোয়া, ইবাদত ও করণীয়। যার মাধ্যমে রোজাদার নিজেকে গোনাহমুক্ত করে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

রমজানের রহমতের প্রথম দশক ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করার পর রোজাদার নিজেকে গোনাহ থেকে মুক্তির প্রার্থনায় নিয়োজিত আছে। তাদের লক্ষ্য একটাই, যেন বিগত জীবনের গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে। জাহান্নাম আগুন থেকে নাজাত পেতে পারে। তাই মাগফেরাত ও নাজাতের দশকে বিশেষ এ দোয়া, ইবাদত ও করণীয়গুলো মেনে চলা জরুরি। তাহলো-

- গোনাহ থেকে ফিরে আসতে তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া-

اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْم

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।

- اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِى وَ دُنْيَاىَ وَ اَهْلِىْ وَ مَالِىْ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনিয়ায়া ওয়া আহলি ওয়া মালি।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)

- اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’

- اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

- اَللَّهُمَّ اَنْتَ رَبِّىْ لَا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِى وَ أَنَا عَبْدُكَ وَ أَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَ وَعْدِكَ مَااسْتَطَعْتُ - أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ - أَبُوْءُلَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ و أَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ - فَاِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাত্বাতু। আউজুবিকা মিন শার্রি মা ছানা’তু। আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি। ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

রোজাদারের করণীয় হলো

> তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করা। তাকে বেশি বেশি ভয় করা। ক্ষমা ও রহমত সম্পর্কে একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তাআলা। কুরআনে এসেছে-

- '(হে নবি আপনি) বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম (গোনাহ) করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।' (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)

- 'তারা আল্লাহর কাছে তওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন ? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল দয়ালু।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭৪)

- 'তোমরা তোমাদের প্রভূর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নূহ : আয়াত ১০)

> গোনাহ না থাকলেও ক্ষমা প্রাথনা করা

কোনো রোজাদার দেখতে গোনাহ না করলেও আল্লাহর কাছে সব সময় ক্ষমা প্রার্থনা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা আল্লাহর একান্ত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যায়। যার প্রমাণ মেলে সুরা ফাতহ-এর দ্বিতীয় আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণায়। হাদিসে এসেছে-

- হজরত মুগীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত অধিক নাাজ আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, আল্লাহ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সব ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (তাহলে আপনি এত নামাজ পড়েন কেন?) তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?' (বুখারি ও মুসলিম)

- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে এত অধিক নামাজ আদায় করতেন যে, তাঁর দুই পা ফেটে যেতো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন তা (এত ইবাদত) করছেন? তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহ্‌র কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করব না? তাঁর মেদ বেড়ে গেলে তিনি বসে নামাজ আদায় করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছে করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়তেন, তারপর রুকু করতেন।' (বুখারি)

- অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ১০০ বার ইসতেগফার করতেন। (তাবারানিঃ)

- হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আমার বান্দারা, তোমরা দিনরাত গোনাহ করে থাক। আমি তোমাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেব। তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।' (মুসলিম)

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সব রোজাদার ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। যারা রমজান মাস পেলো কিন্তু নিজেরে গোনাহ থেকে মুক্ত হতে পারলো না।' (তিরমিজি)

- হাদিসের এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‌যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, অথচ গোনাহমুক্ত হতে পারলো না, তবে তার জন্য অকল্যাণ।' (মুসতাদরাকে হাকেম)

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ কথা প্রমাণিত যে, ইসতেগফার আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। যারা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের সেরা সময় হলো রমজান মাস। বিশেষ করে দ্বিতীয় দশকের এ সময়টিতে নিজেদের গোনাহমুক্ত করার সেরা সময়। রমজানে রোজা অবস্থায় নিজেদের গোনাহ মাফ করাতে না পারলে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা অনুযায়ী সেসব রোজাদার হয়ে যাবে অভিশপ্ত। (নাউজুবিল্লাহ)

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত রমজানের দ্বিতীয় দশকে নিজেদের গোনাহ মাফে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা। করা। নিজেদের আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ স্বীকারকারী বান্দা হিসেবে তৈরি করা। আল্লাহর কাছে নিজেদের গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের দ্বিতীয় দশকে নিজেদের নিষ্পাপ করে নেয়ার তাওফিক দান করুন। গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

গাজীপুর কথা