ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কোরবানির হাট কাঁপাবে সেই ‘ভাগ্যরাজ’

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৯ জুলাই ২০২০

কোরবানির হাট কাঁপাবে সেই ‘ভাগ্যরাজ’

ভাগ্যরাজ, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের খাইরুল ইসলাম খান্নুর পালিত ষাঁড়। এ বছর দেশের সর্ববৃহৎ কোরবানির পশু বলেই ধরা হচ্ছে একে। খামারির মেয়ে ইতি আক্তার আদর করে ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘ভাগ্যরাজ’। গত বছর একটি পত্রিকায় ‘ভাগ্যরাজ’কে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সারাদেশে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ওই বছর মৌলভীবাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লাখ টাকায়ও বিক্রি করা হয়নি ষাঁড়টিকে। তবে এ বছর করোনার সময়ে ভাগ্যরাজকে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারি। তবে ন্যায্য দামে ভাগ্যরাজকে বিক্রি করতে পারলে বিক্রির একটি অংশ করোনা তহবিলে দান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন খামারি ইতি আক্তার।

তিনি জানান, আট ফুট লম্বা, ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতা, বুকের বেড় ১২০ ইঞ্চি আর ওজন ২ হাজার ৯৪ কেজি! নাম তার ভাগ্যরাজ! বেশ জামাই আদরেই রাখা হয়েছে ৩ বছর ৮ মাস বয়সী ভাগ্যরাজকে।
জানা গেছে, বৃহদাকার এই ষাঁড়ের জন্য প্রতিদিনের বাজেট প্রায় ২ হাজার টাকা। খাবারের মেন্যুতে থাকে কলা, মাল্টা, কমলালেবু, চিড়া, আঙুর ফল, আখের গুড়, ইছব গুল, খৈল ও বেলের শরবতসহ অন্যান্য দামী দামী খাবার দাবার। শুধু আদর যত্নেই নয় ভাগ্যরাজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রাখা হয়েছে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক। নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে পুলিশ টহল দেয় বাড়ির চারপাশের রাস্তায়। এতো উন্নত আড়ম্বরপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা যার, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সেই ভাগ্যরাজের মালিক গত বছর ২০ লাখেও বিক্রি করেনি। ভাগ্যরাজই আকার, আকৃতি ও ওজনের দিক থেকে দেশের সবচাইতে বড় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদেরও।

ভাগ্যরাজকে দেখতে প্রতিদিন ওই খামারির বাড়িতে ভীড় করেন ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোর, মানিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ভুল করেন না।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ মনির হোসেন বলেন, ‘ভাগ্যরাজকে দেখতে দেলুয়া গ্রামের খায়রুল ইসলাম খান্নুর বাড়ি গেলে আমি জানতে পারি ভাগ্যরাজের বর্তমান বয়স ৩ বছর ৮ মাস। ৪ দাঁতের ভাগ্যরাজ গরুটিই আমার জানা মতে বর্তমানে দেশে আকার ও ওজনে সবচেয়ে বেশি।’

খামারি খাইরুল ইসলাম খান্নুর সাথে আলাপ কালে জানা যায়, ২০১৮ সালে কোরবানির ঈদের পর সাটুরিয়া উপজেলার কামতা এলাকার কৃষক মজিবর রহমানের থেকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ক্রয় করেছিলেন ২৫ মণ ওজনের এই হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি। করোনায় মহামারির মধ্যে গরুটি বিক্রি করতে না পারলে পথে বসে যাব বলে জানান খান্নু মিয়া।

দুই বছর লালন-পালনের পর এই সময় গরুটির বর্তমান ওজন হয়েছে ৫২ মণ। খামারি খাইরুল ইসলাম খান্নুর স্ত্রী পরিস্কার বিবি জানালেন যে, বিশাল আকারের এ গরুটির পরিচর্যা করা খুবই কঠিন। দিনে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ বার গোসল করাতে হয়। সারাদিন চারটি বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে হয়। বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধ থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। সারাদিনই প্রায় গরুটির যত্ন করতে হয়। এক ভাগ্যরাজের যত্ন করতে করতে খামারে বাকি ১০টি গরুর যত্ন নেয়ার ফুরসতই পাওয়া যায় না। বাড়ি থেকেই যেনো ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন ভাগ্যরাজকে সেই ব্যবস্থা করতে সরকারি সহায়তাও প্রার্থনা করেছেন তিনি। করোনায় অর্থ সঙ্কটে ঋণ করে ভাগ্যরাজের সেবা যত্ন করতে হচ্ছে।

খামারির মেয়ে ইতি আক্তার বলেন, ২০১৭ সালে সাভার শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গবাদি-পশু, হাস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক ৩ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তিনিই এখন খামারের গরুর সার্বিক দেখাশোনা করেন।

তিনি আরো জানান, ‘গরুটিকে ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিয়েছি। তাই গরুটির নাম রেখেছি ‘ভাগ্যরাজ’। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টাকার খাবার খায়।’

কেউ গরুটি ক্রয় করতে চাইলে সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন বলে জানান ইতি আক্তার।

সাটুরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘শত্রুতা করে কেউ এর ক্ষতি করতে পারে। কিম্বা চুরিও হয়ে যেতে পারে। সে কারণে আমরা ভাগ্যরাজের প্রতি নজর রাখছি। বিশেষ করে রাতে টহল পার্টিকে সতর্ক রাখা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘রাজা বাবু’ নামের এক গরু সুনামগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছে সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে সারাদেশে আলোচিত হন ওই খান্নু পরিবার।

গাজীপুর কথা