ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ ‘পিএলআইডি’, জেনে নিন করণীয়

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ২৪ জুলাই ২০২০

কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ ‘পিএলআইডি’, জেনে নিন করণীয়

প্রলাপসড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক বা পিএলআইডি হলো এমন একটি কন্ডিশন যার কারণে প্রাপ্ত বয়স্কদের কোমর ব্যথা এবং পায়ে ব্যথা হয়ে থাকে। বাইরের দিকে এনুলাস ফাইব্রোসাস এবং ভিতরের দিকে নিউক্লিয়াস পালপোসাস নিয়ে গঠিত ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক যখন দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থান থেকে বের হয়ে আসে তখন তা কোমর ব্যথার সাথে সাথে নার্ভেও চাপ সৃষ্টি করে। এতে পায়ের দিকে ব্যথা যেতে পারে এবং ঝিন ঝিন করা, অবশ লাগা, পা ভারী হয়ে যাওয়া, পায়ের শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ৪র্থ এবং ৫ম লাম্বার ভার্ট্রিব্রাগুলোর মাঝখানের ডিস্কটি বাইরের দিকে বের হয়ে আসার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে। সারা বিশ্বের প্রায় ৬০-৮০ ভাগ মানুষ জীবনের কখনও না কখনও পিএলআইডি সমস্যায় ভোগে।

রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তার পূর্ণাঙ্গ এসেসমেন্ট করে থাকেন। রোগের কারণ, রোগীর অবস্থা, বয়স, প্রতিক্রিয়ার উপর বিবেচনা করে রোগীকে ডিরেকশনাল এক্সারসাইজ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। সাধারণত এক্সটেনশন প্রটোকলে পিএলআইডি রোগীদের সুস্থ হওয়ার হার বেশি, তবুও ব্যতিক্রম অবস্থায় একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এক্সারসাইজ প্রটোকলে পরিবর্তন আনতে পারেন। সাথে সাথে মাস্কুলার ইমব্যালেন্স কারেকশন করে রোগীকে ব্যথামুক্ত করে তোলা সম্ভব।

এছাড়া যদি রোগীর পায়ের দিকে ব্যথা যায় এবং অবশ বা ঝিঁ ঝিঁ ভাব থেকে থাকে তাহলে  স্ট্রেচ ম্যানিপুলেশন খুবই কার্যকর। এজন্য ব্যথাযুক্ত অংশ উপরের দিকে রেখে রোগীকে কাত করে শুইয়ে কোমড় এবং কাঁধকে একটি কল্পিত সরলরেখা বরাবর রাখা হয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর পেছনের দিক থেকে ম্যানিপুলেশন করে থাকেন (চিত্র-০১)। এতে রোগীর কোমর ব্যথা কমার সাথে সাথে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক আগের জায়গায় ফিরে যেতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে রোগীর পায়ের দিকের সমস্যাগুলোও কমে আসতে থাকে ধীরে ধীরে।

এই সমস্যার জন্য মেরুদণ্ড, পিঠ এবং কোমর সংলগ্ন মাংসপেশিগুলো শক্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে কোমরের শক্তি কমে গিয়ে লাম্বার ইনস্ট্যাবিলিটি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে লাম্বো-পেলভিক স্ট্যাবিলাইজেশন, হিপ ফ্লেক্সর ও হ্যামস্ট্রিং এর স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হিসেবে সমাদৃত। বিভিন্ন মাংসপেশীর অস্বাভাবিক সংকোচন বিবেচনা করে স্ট্রেচিং ও স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ করানো হয়ে থাকে। এই অস্বাভাবিক সংকোচন কমানো এবং ব্যথা সাময়িকভাবে কমানোর জন্য রোগীকে থার্মাল থেরাপি হিসেবে হিট এবং কোল্ড থেরাপি দেওয়া হয়।

কোমর ব্যথা সমূলে উৎপাটনের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার্যকর উপায়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতির ম্যাকেনজি, মালিগান, সিরিয়াক্স ইত্যাদি এপ্রোচের মাধ্যমে কোমর ব্যথার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট সঠিক চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সঠিক এক্সারসাইজ প্রোগ্রাম প্রেসক্রাইব করতে পারেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণে একজন রোগী বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যেতে পারেন এবং পুনরায় কর্মক্ষম হিসেবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারবেন।


লেখক:
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট,
সি আর পি, সাভার।

গাজীপুর কথা