ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কে এই বিতর্কিত বার্গম্যান, উদ্দেশ্যই বা কি?

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

কে এই বিতর্কিত বার্গম্যান, উদ্দেশ্যই বা কি?

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার ‘অল প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেশজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ওই প্রতিবেদন ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ইতোপূর্বেও আল-জাজিরায় প্রকাশিত খবর নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমটির বেশ সমালোচনাও করেছে দেশের বেশকিছু গণমাধ্যম। 

১ ফেব্রুয়ারি রাতে বিতর্কিত গণমাধ্যম আল-জাজিরা বাংলাদেশবিষয়ক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘অল প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে তথাকথিত এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটির ব্যাপ্তি ১ ঘণ্টার বেশি।

ভিডিওটাতে যাদের মুখ্য ভূমিকায় দেখা গেছে তাদের মধ্য অন্যতম একজন হলেন যুদ্ধাপরাধীদের এজেন্ট এবং তারেক রহমানের বেতনভুক্ত উপদেষ্টা ডেভিড বার্গম্যান। যিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম ড. কামাল হোসেনের জামাতা।

ডেভিড বার্গম্যান হলেন সেই লোক, যিনি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সাংবাদিকতা করেন এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করাই যার মূল লক্ষ্য।

বার্গম্যান মূলত নিজেকে পরিচয় দেন একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক হিসেবে, যিনি অনেক বছর বাংলাদেশ অবস্থান করেছেন এবং একটা বিশেষ শ্রেণির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িতদের বিচারের বিরোধিতা করে নিজের ব্লগে লেখালেখি করে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাসহ সব ধরনের অপকর্মে সম্পৃক্তদের বিচার শুরু হলে তা নিয়ে নেতিবাচক লেখালেখিও করেন বার্গম্যান।

তার লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা। অধিকাংশ লেখাতেই তিনি শুধু সেসব মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন, যারা বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আর এটা সবাই জানে, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান সহযোগী, যাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানিরা এ দেশে গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।

এদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই লেখালেখি শুরু করেন বার্গম্যান এবং ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর তিনি এ বিষয়ে সর্বশেষ লেখা লিখেছেন। এ বিচার প্রক্রিয়া কিন্তু এখনো চলছে। তবে বার্গম্যান আগে যেমন সক্রিয়ভাবে বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য লিখতেন, এখন আর লিখছেন না।

কিন্তু কেন? তার এত আগ্রহ-উদ্যম হঠাৎ থেমে গেল কেন? কারণটা পরিষ্কার। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বিএনপি ও জামায়াতের যেসব নেতা অভিযুক্ত ছিল, তাদের অধিকাংশেরই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তাই এরপর থেকে তিনি আর এ বিষয়ে সক্রিয় নন। এতেই বোঝা যায়, তিনি এ মুক্ত-সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছেন এবং এ জন্য তিনি বিশেষভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন।

কেন বাংলাদেশ নিয়ে বার্গম্যানের এত আগ্রহ?

নিজের লেখা এক ব্লগে বার্গম্যান এটাও দাবি করেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আসলে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়নি। তার দাবি, এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ লাখ! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বার্গম্যানের এ দাবির তুলনায় শহিদের সংখ্যা ছিল ১০ গুণ। এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।

এ চক্রটি নিজেদের ঘৃণ্য অপরাধ ঢাকার জন্য শুরু থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে শহীদের সংখ্যা কমিয়ে বলার চেষ্টা করে আসছে। ডেভিড বার্গম্যান তাদের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এবং সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছে। এমনকি বিচারাধীন বিষয়ে উসকানি ছড়ানোর দায়ে একপর্যায়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ইতিহাস বিকৃতির দায়ে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে অভিযুক্ত করে।

সোজা কথায়, আমরা যদি এই স্বঘোষিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক বার্গম্যানকে চিহ্নিত করতে চাই, তাহলে তাকে একজন ফড়িয়া বা দালাল ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শুনতে বেখাপ্পা লাগলেও এটিই সত্য। নির্মম বাস্তব এটাই, বার্গম্যান মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিয়ম একটি বিশেষ শ্রেণির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

বার্গম্যান নিজের ব্লগ ছাড়াও বিডি পলিটিকো নামে আরো একটি ব্লগ পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন পক্ষের ফুট-ফরমায়েশ হিসেবেই আর্টিকেল লেখেন। এ ব্লগে তার লেখার অন্যতম বিষয়গুলো হলো- বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে আক্রমণ করা এবং দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীকে নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো।

বার্গম্যানের পরিচয় এবং কর্মজীবন আসলে কেমন?

এই তথাকথিত সাংবাদিক নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করলেও তার ব্যক্তি ও পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে জানা প্রাসঙ্গিক। তিনি ড. কামাল হোসেনের জামাতা। আর এই ড. কামাল হলেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় জোট বিএনপি-জামায়াতের প্রধান সমন্বয়ক। এই কারণেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে দীর্ঘ সময় লেখালেখি করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বার্গম্যান।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আক্রমণাত্মক প্রচারণার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে লবিংয়ের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করা হয়েছে, বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও লন্ডনে, এসবের সঙ্গেও তিনি জড়িত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জামায়াত নেতা মীর কাসেম, যে পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ম্যানেজ করতেই ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

এই বার্গম্যানের রাজনৈতিক যোগাযোগ এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, তা চাইলেও অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গেও তাকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করতে দেখা গেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় অপেশাদার ও ঔদ্ধত্য আচরণের জন্য দ্য নিউ এজ পত্রিকা এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম থেকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে ডেভিড বার্গম্যানকে। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার এথিক্সের তোয়াক্কা না করার অভিযোগ ছিল। শুধু এ কারণেই মূলধারার গণমাধ্যমে অযোগ্য হয়ে পড়েন তিনি।

এরপর বিদেশে অবস্থান করা কিছু নামধারী সাংবাদিকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর একটি নেত্র নিউজ নামে আরেকটি গুজব সাইটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার এবং নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেন।

কী চায় বার্গম্যানরা?

বার্গম্যান প্রবাসে থাকা কিছু দেশবিরোধী ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন, যারা বিএনপি-জামায়াতের আরো ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি নিয়মিত বানোয়াট সংবাদ তৈরি করে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অপপ্রচার চালান।

সম্প্রতি এই চক্রটি ফেসবুক এবং ইউটিউবেও লাইভ বক্তব্য দিয়ে এবং ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। মানুষের আরো কাছে পৌঁছার জন্য এদের প্রচেষ্টা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ডেভিড বার্গম্যান, ক্যাডম্যান, লা কার্লিলি, ড. ঘুমডি, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়্যারসহ বেশকিছু প্ল্যাটফর্ম তাদের পক্ষে কাজ করছে।

এই চক্রের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- তাদের অর্থের জোগানদাতা বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ঘৃণ্য ভাবমূর্তি উদ্ধারের স্বার্থে কাজ করা।

তারেক-এসকে সিনহা-ড. কামালকে একত্র করা হয় যেভাবে

অর্থপাচার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ডেভিড বার্গম্যানের সহায়তায় ড. কামালের সঙ্গে সরকারবিরোধী জোট গড়ে তোলেন। ড. কামাল হোসেনের জামাতা বার্গম্যান মূলত সরকারবিরোধীদের একই প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে, সেই সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসে এখন তারেক রহমান এবং ড. কামালদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন এবং অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তনের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে কাজ করছেন।

ডেভিড বার্গম্যানই ড. কামাল, তারেক রহমান, এস কে সিনহার মধ্যে লিয়াজোঁ হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু এই ত্রয়ীর বিভিন্ন অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, এখন তারা ভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন পাবলিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, দেশের প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে মিথ্যা-বানোয়াট গুজব ছড়াচ্ছে। 

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন