মহামারি করোনার সময়েও থেমে নেই শত বছরের ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পের অগ্রগতির কাজ এগিয়ে চলছে। বদ্বীপ পরিকল্পনা ইংরেজিতে ‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত ২৯ জুন উচ্চ পর্যায়ের কাউন্সিল গঠন করে সরকার। ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’ শীর্ষক এ কাউন্সিলের চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০০ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের পানি ব্যবস্থাপনা ও নদী অববাহিকাকেন্দ্রিক টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের কৃষি, জীবন-জীবিকা তথা অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের আশা করা হচ্ছে। এতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বদ্বীপ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে বিশ্বের আরেক বদ্বীপ দেশ নেদারল্যান্ডস।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শতবর্ষী এ পরিকল্পনা নেয় সরকার। এর সঙ্গে ২০৩০ সালের এসডিজি এবং রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে পরিকল্পিত বিষয়গুলোও সমন্বয় করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ পাস হয়। ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে। সদস্য হিসেবে আছেন আটটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল বলেন, ‘করোনার জন্য অন্য উদ্যোগগুলো থামিয়ে রাখার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন। মহামারি মোকাবেলার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কাজও এগিয়ে নিতে হবে।
একটি বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না।’ শত বছরজুড়ে এ পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যা, নদীভাঙন, নদী শাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামের পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নানামুখী কৌশল থাকছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে ৫০ হাজারের মতো পরিবার নদীভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীতে বিলীন হয় পাঁচ হাজার হেক্টরের মতো জমি। বিদ্যমান বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস ৬০ বছর মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছে। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচু এলাকায় অবস্থিত। ডেল্টা পরিকল্পনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলাবদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ছয় হাজার কিলোমিটারের মতো নতুন ভূমি পেয়েছে, যা পর্যটন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছে তারা। তাই বাংলাদেশের বদ্বীপ পরিকল্পনায় দেশটি কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে। একনেকে পাস হওয়া বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল, নগরাঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল এবং বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল।
গাজীপুর কথা