ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ৫-৭ গুণ

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৪ জুন ২০২১

করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ৫-৭ গুণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণে গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬৮ জনের। তবে এ সময়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও অনেক বেশি। প্রতিদিন বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর বড় অংশই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু।  কেউ সর্দি-কাশি-জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাচ্ছেন বাড়িতে। মৃত্যুর পর এসব মানুষের অধিকাংশের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে অজানা থেকে যাচ্ছে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। উঠে আসছে না দেশে করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার ৩৯১টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫৮ জনের। শনাক্তের হার ১৯.৯৩ শতাংশ। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর তথ্য জানানো হলেও সেখানে থাকে না উপসর্গে মৃত্যু বা মৃত্যুর পর করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর তথ্য। তবে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে, সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে ও সংবাদকর্মীদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনার উপসর্গ নিয়ে। পরীক্ষা না হওয়ায় জানা যাচ্ছে না তাদের কতজনের করোনা সংক্রমণ ছিল। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর নমুনা সংগ্রহের আগেই মৃত্যু হলে পরে আর তার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। হিসাবের খাতায় লেখা হচ্ছে উপসর্গে মৃত্যু। অনেক জায়গায় আবার উপসর্গে মৃত্যুর হিসাবও রাখা হচ্ছে না। করোনা পরীক্ষা ছাড়াই মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা হচ্ছে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ বা কিডনি বিকলে মৃত্যুর মতো বিষয়। বাগেরহাট জেলার করোনার হটস্পট মোংলার বাসিন্দা মাসুম রাসেল বলেন, গত বছর লকডাউনের সময় কোনো বাড়িতে কেউ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে আশপাশের লোকজন প্রশাসনকে জানাতেন। এরপর মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হতো। পরবর্তীতে রিপোর্ট পজিটিভ আসলে সেটা জানানো হতো। বর্তমানে উপসর্গ নিয়ে কেউ বাড়িতে মারা গেলে স্বজনরা স্বাভাবিক নিয়মেই মৃতদেহ সৎকার করছেন। মৃতের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। কোনো হিসাবের খাতায়ই তাদের নাম উঠছে না। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হটস্পট রংপুরে উপসর্গে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানতে সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায়কে ফোন করলে তিনি বলেন, উপসর্গে মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান করা হয় না। অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব উপসর্গের পাশাপাশি অন্য রোগও থাকে। নমুনা পরীক্ষার আগে তাদের মৃত্যু হলে পরে আর নমুনা পরীক্ষা হয় না। অন্য রোগে মৃত্যু হিসেবে ধরা হয়। রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে অতীতের রেকর্ড ভেঙে ৮৪৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন সাতজন। তবে উপসর্গে মৃত্যুর কোনো হিসাব সিভিল সার্জন অফিস থেকে দেওয়া হয় না।

রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ৩১ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মারা গেছেন ২৬৩ জন। এর মধ্যে ১৩৩ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। উপর্সগ নিয়ে মারা গেছেন ১২৯ জন। উপসর্গ থাকলেও একজন করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৮ জন মারা যান, যার মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন ৮ জন, উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১০ জন। তবে উপসর্গ নিয়ে কেউ হাসপাতালে আসলে তাকে ছয় ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এর মধ্যে কেউ মারা গেলে তার আর নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, পরীক্ষার পর যারা পজিটিভ হন, মৃত্যুর তালিকায় তাদের পজিটিভ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। তবে উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। ফলে তারা নেগেটিভ না পজিটিভ ছিলেন, সেটি জানা যাচ্ছে না। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তালিকাতেই তাদের নাম থেকে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বুধবার আটজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ ছিল, সাতজনই মারা যান উপসর্গ নিয়ে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকারের বরাত দিয়ে আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, করোনার শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত রোগী মারা গেছেন ৬৫ জন। এ সময়ে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৯৭ জনের। করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা বাড়িতে মারা যাচ্ছেন, তাদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। এগুলো উপসর্গে মৃত্যু হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারও নাম সেই তালিকাতেও উঠছে না।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনসহ গত আট দিনে দিনাজপুর সদরে করোনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সময়ে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৯ জন। এ ছাড়া ২৩ জুন পর্যন্ত সাত দিনে জেলায় করোনায় ১১ জন ও উপসর্গ নিয়ে ২৬ জন মারা গেছেন। বর্তমানে দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে জ্বর, সর্দি। করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন অনেকে। উপজেলা হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুর সদরে ৫১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১৩ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৬০.৭৮ শতাংশ। খুলনা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত এক মাসে (২৫ মে-২৪ জুন) করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুলনা বিভাগে ২৫৪ জন মারা গেছেন। ১৩০ শয্যা খুলনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে (মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) গত ১০ দিনেই করোনায় ৫০ জন ও উপসর্গ নিয়ে ১৬ জন মারা গেছেন। তবে এই হাসপাতালে কেউ উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে নমুনা পরীক্ষায় তার পজিটিভ আসলে তাকে করোনায় মৃত্যু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় বলে দাবি করেন খুমেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার।

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু : গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জন। মারা গেছেন ১৩ হাজার ৮৬৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৫৫ জন ও নারী ২৬ জন। সর্বোচ্চ ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ ছাড়া ২০ জন রাজশাহী, ১৩ জন ঢাকা, সাতজন চট্টগ্রাম, তিনজন বরিশাল, পাঁচজন সিলেট, সাতজন রংপুর ও তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন