ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

করোনা মোকাবেলায় ১৫ কোটি টাকা সহায়তা বেক্সিমকোর

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ২৮ মার্চ ২০২০

করোনা মোকাবেলায় ১৫ কোটি টাকা সহায়তা বেক্সিমকোর

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারীতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষায় পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট), ওষুধ ও টেস্ট কিট সরবরাহে ১৫ কোটি টাকা বা ১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। 

এ উপলক্ষে শনিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে প্রথম ধাপের উপকরণ হস্তান্তর করেন বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি। 

কর্পোরেট খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান বলেন, যে কোনো ধরণের জাতীয় দুর্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বেক্সিমকো গ্রুপ সবসময়ই বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই আক্রান্ত হচ্ছে, তখন এই মহামারীর প্রভাব মোকাবিলায় আমরাও এক নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে।”

তিনি আরও বলেন, “পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট প্রাপ্তি (পিপিই) নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে একটি অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। আর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের এই প্রয়োজনের সময় সাড়া দিতে পেরে আমরা গর্বিত। দায়িত্বশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা এই সাংঘাতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারকে আন্তরিকভাবে সহায়তা প্রদান করা অব্যাহত রাখবো।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এমপি বলেন, বাংলাদেশের কর্পোরেট খাত তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে ভীষণভাবে সচেতন। এ ধরণের যেকোনো সংকট মোকাবিলায় তারা সবসময়ই জাতীয় উদ্যোগে সামিল হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তৃতায় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে যুদ্ধ ও মানবতার জন্য মহাপরীক্ষা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি খাত উভয়কে সম্পৃক্ত করে সকল দিক থেকে এই যুদ্ধ লড়তে হবে।” 

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি বেক্সিমকো গ্রুপের এই উদ্যোগ অন্যান্য ছোটবড় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের সাধ্যমত এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো, আইসিডিডিআর,বি’র সংক্রমণশীল রোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক অধ্যাপক অ্যালেন রস, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ডা. বর্দন জং রানা, সিডিসি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাইকেল ফ্রিডম্যান, আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদা সাব্রিনা ফ্লোরা ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।

এসময় নাজমুল হাসান এমপি বলেন, এই বৈশ্বিক সংকটের সময় বাংলাদেশের এখন জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য ওষুধ, রোগ শনাক্তকরণের কিট ও সম্মুখভাগে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষায় পিপিই প্রয়োজন। 

তার ভাষ্য, “ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং হাসপাতালের কর্মকান্ড যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক রাখতে পিপিই সরবরাহ অব্যাহত রাখবে বেক্সিমকো। এছাড়াও, কভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ ও সহায়তা কর্মসূচিতে বেক্সিমকো ফার্মা সম্পৃক্ত থেকেছে।”

তিনি বলেন, বেক্সিমকো ফার্মার নেয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সঙ্কটাপন্ন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিদেশ থেকে অতিপ্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করা, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন একটি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করা, নতুন আধুনিক পরীক্ষাগার স্থাপনে ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য হাসপাতালের সুবিধা বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, ইত্যাদি। 

জানা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত খুবই উচ্চমানের ‘টিওয়াইভিইকে প্রোটেকটিভ কাভারঅল’, মুখ বন্ধনী, গ্লাভস, প্রোটেকটিভ গগলসসহ এই পিপিই দুই ধাপে বিতরণ করবে বেক্সিমকো ফার্মা। প্রথম দফায় দুই পরীক্ষা কেন্দ্র অর্থাৎ আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি এবং কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল অর্থাৎ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কমলাপুর বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, নয়াবাজার মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর বিএভিএস মেটারনিটি হাসপাতাল, কামরাঙ্গিচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, জিঞ্জিরা ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় এসব পিপিই সরবরাহ করা হবে।

দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশজুড়ে ১৫০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালে এই পিপিই সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪৮ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এই রোগে মারা গেছেন ৫ জন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে থাকা অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন