ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

করোনা মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্তই সঠিক

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১৬ এপ্রিল ২০২১

করোনা মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্তই সঠিক

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন ছাড়াই বরণ করা হলো নববর্ষ। মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার জন্য দেশব্যাপী ‘কঠোর বিধি-নিষেধ’ বা ‘লকডাউন’ শুরু হয় নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর থেকেই। ফলে ঘরবন্দি সময় পার করা ছড়া কোনো উপায় ছিল না মানুষের। 

একই দিন শুরু হয় সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে মসজিদে মুসল্লিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই স্বল্প পরিসরে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এমন সিদ্ধান্ত? আমরা যদি বর্তমান অবস্থা পর্যালচনা করি তাহলে দেখতে পাবো ভয়ঙ্কর ভাবে বিস্তার লাভ করছে করোনা নামক প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করেছে করোনা। বাংলাদেশে যেন ভয়ঙ্কর ভাবে করোনা বিস্তার না হয় সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। 

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা যখন প্রায় রোজই আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে, তখন হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হরিদ্বারের কুম্ভ মেলায় অনেক মানুষের সমাগমে হলো। মানা হলোনা কোনও ধরনের কোভিড প্রোটোকল। যার ফলে কুম্ভমেলা থেকে ২০০০ এর বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে, করোনা মহামারির কারণে সৌদির দুই প্রধান মসজিদে তারাবির নামাজ ২০ রাকাতের পরিবর্তে ১০ রাকাত করার নির্দেশ দিয়েছেন সৌদি সরকার ।
সৌদির দুই প্রধান মসজিদের সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান শেখ আব্দুর রহমান আল সুদাইস বলেন, তারাবি নামাজ ২০ রাকাত থেকে কমিয়ে ১০ রাকাত করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে মসজিদের প্রেসিডেন্সি এবং ওমরাহ পালনকারীদের সেবায় নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থা যেসব পূর্বসতর্কতা ও সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

মহামারি কিংবা মারাত্মক অসুস্থতাসহ যথাযথ ওজর থাকলে মসজিদে না গিয়ে বাড়িতেও নামাজ পড়া যাবে। এতে ইসলামে কোনো বাধা নেই তা হাদিস থেকে প্রমাণিত।

হজরত নাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, প্রচণ্ড এক শীতের রাতে হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘যাজনান’ নামক স্থানে আজান দিলেন। অতপর তিনি ঘোষণা করলেন- صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ

‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ অর্থাৎ তোমরা আবাস স্থলেই নামাজ আদায় করে নাও।’

পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

আরেক হাদিসে সংক্রামক রোগ-ব্যধির কারণে জনসমাগমে না আসতে সতর্ক করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-

হজরত আমর ইবনু শারিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে এ মর্মে সংবাদ পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বায়আত করে নিয়েছি। তুমি ফিরে যাও।’ (মুসলিম)

সুতরাং প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের বর্তমান প্রেক্ষাপটেও মসজিদে না গিয়ে নামায বাড়িতে পড়তে ইসলামে কোনো বাধা নেই। এ সময়ে মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম মোটেই উচিত নয়, বরং সতর্কতা অবলম্বন করে বাড়িতে নামাজ পড়াই শ্রেয়। 

এ থেকে আমরা বলতে পারি করোনাসংকট মোকাবেলায় বর্তমান সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সঠিক ও অত্যন্ত দূরদর্শী।

গাজীপুর কথা