ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত এই চার জন

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত এই চার জন

গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার চার জন এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত ছিল। মাদকসেবীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল। বখাটে আচরণের কারণে স্থানীয়রা তাদের এড়িয়ে চলতো। পরিবারের সদস্যরাও চেষ্টা করে তাদের ঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। অবশেষে ধর্ষণের মামলায় ২৪ জানুয়ারি ওই চার জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলো−শরীফ হোসেন (১৮), ইমরান হাসান সুজন (১৯), আহসান ওরফে হাসান (১৬) ও শরীফ উদ্দিন মোল্লা (২০)। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তার জন্য নয়নপুর গ্রামের উর্মিকেও (১৮) আটক করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রতিবেশী উর্মি ওই মেয়েটিকে সুজনের জন্মদিনের দাওয়াতে নিয়ে যায়। খাওয়ার পর এনার্জি ড্রিংকের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে মেয়েটিকে কোমল পানীয় খাওয়ায়। মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে উর্মির সহযোগিতা চার বন্ধু মিলে বাড়ি থেকে দূরের ঝোপে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনার পর চার বন্ধু মিলে ফেসবুকে লাইভে আসে। এ ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি কিশোরীর মা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায়  মামলা করেন।

নয়নপুর মোল্লাপাড়া এলাকার ইউনুস আলী মোল্লা বলেন, এলাকার মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা ও বখে যাওয়া যুবকদের সঙ্গে চলাফেরা করতো শরীফ উদ্দিন মোল্লা। তার পরিবার ও এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা বাধা দিয়েও কাজ হয়নি।

তিনি বলেন, আলাউদ্দিনের ছেলে ইব্রাহীমসহ বেশ কয়েকজন মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ইব্রাহীম বর্তমানে মাদক মামলায় জেলে রয়েছে। তার দু’ভাই বাক্কার ও হুমায়ুন একাধিকবার মাদক মামলায় জেল খেটেছে। শরীফ মোল্লা ও তার বন্ধুদের চলাফেরা ছিল এসব মাদকসেবী ও বিক্রেতার সঙ্গে।

মোল্লাপাড়া এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মোল্লাপাড়া ও নয়নপুর এলাকায় এসব তরুণের ক্যারাম বোর্ডের আস্তানা ছিল। বিভিন্ন অলিগলির সেলুনসহ বিভিন্নস্থানে একত্রে আড্ডা দিতো তারা। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ভয়ে ও অপমানের আশঙ্কায় এলাকার কেউ কিছু বলার সাহস পেতো না।

সখিনা বেগম (৬০) বলেন, ‘নিজের বংশের লোকেরাও এসব ছেলেপেলের আচরণের ভয়ে কিছু বলার সাহস পেতো না। ২০ বছর না পেরোতেই শরীফ উদ্দিন চারটি বিয়ে করেছে। বর্তমানে তার একটি স্ত্রী রয়েছে।’

শরীফ উদ্দিনের বাবা সাবাজ উদ্দিন মোল্লা পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণির পর তার ছেলে আর পড়াশোনা করেনি। এরপর থেকে সে বখে যায়। ঘটনার রাতে বন্ধুরা একাধিকবার ফোন করে তাকে ডেকে নিয়ে গেছে। ওই রাতে লিটনের ছেলে ইমরান হাসান সুজনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তারা একত্রিত হয়েছিল। শরীফকে তার মা নিষেধ করার পরও গিয়েছিল। পরে তার বন্ধুরা তাকে চেতনানাশক খাইয়ে অচেতন করে ফেলে। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে অচেতন অবস্থায় তার বন্ধু সুজনের বাড়ির কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। দু’দিন পর্যন্ত সে অচেতন ছিল।

নয়নপুর রোশওয়া স্পিনিং কারখানা গেটের বিপরীতে সেলুনের মালিক হাবিবুর রহমান জানায়, ঘটনার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ওই যুবকেরা তার সেলুনে আসে। এসময় তিনি দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তারা এসে বলে এলাকায় কীভাবে যেন নারী সংক্রান্ত একটি অপ্রীতিকর ঘটনা গেছে। সুজনের বাড়িতে সাংবাদিক ও পুলিশ এসেছে। এরপর তিনি বাথরুমে গেলে তারা আমার দোকানে বসে ভিডিও ফুটেজ তৈরি করে। আমি পরে ভিডিও ফুটেজের খবর পাই।

মেয়েটির মা ও স্বজনেরা জানায়, বখাটে চার জনকে গ্রেফতারের পর সুজনের বাবা কাঁচামাল ব্যবসায়ী লিটন তাদের হুমকি দিচ্ছে। সুজন জামিনে মুক্ত হলে আমাদের সপরিবারে শেষ করবে বলেও হুমকি দিয়েছে।

হুমকির বিষয়ে সুজনের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাসা ও দোকানে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর কথা