ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ইমরানের মহাজনী সুদে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শ্রীপুরবাসী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩০ এপ্রিল ২০২১

ইমরানের মহাজনী সুদে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শ্রীপুরবাসী

শ্রীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের শিমলাপাড়ার বাসিন্দা ইমরান সরকারের উচ্চসুদের ফাঁদে পড়ে ভিটেমাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে শ্রীপুরের অনেক অসহায় মানুষ। পিতার রাজনৈতিক প্রতিপত্তিকে পুজিকরে এরই মধ্যে গড়ে তুলছে তার সুদের ব্যবসার সিন্ডিকেট। ইমরান মানুষকে টাকা ধার দিয়ে ব্ল্যাংক চেক জমা নেন। পরে নিজের ইচ্ছেমত অংক বসিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করেন। এতে ঋণের অর্থ পরিশােধ করতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ইমরানের পিতা মােঃ নজরুল ইসলাম সরকার মাওনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। যার প্রেক্ষিতে প্রতারিত হয়েও এলাকায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। পিতার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় শুধু সুদের ব্যবসা নয় মাদক; অবৈধ অস্ত্রবহন, মোটরসাইকেল ও গরু চুরি চক্রের সাথেও জড়িত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানায়। 

গত ২০১৮ সালে বদনী ভাঁঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা দেলােয়ার হােসেনের পুত্র মোঃ আমিনুল ইসলাম তিন ধাপে ১৮ লক্ষ টাকা (৭ লক্ষ ৪ লক্ষ ও ৭ লক্ষ) প্রতি মাসে লাখ প্রতি ১৮ হাজার টাকা সুদে ধার নেয়। উক্ত ঋণের বিপরীতে ইমরান আমিনুলের কাছ থেকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মাওনা শাখার ৪০৩৪১১১০০০০০৯৮৩ নং একাউন্টের ৪টি ব্ল্যাংক চেক (SIBL/ACD ০০০০০৫৪,০০০০১২২, ০০০০০৭১, ০০০০১১৪) নেয়। পরবর্তীতে আমিনুল ৭ মাসে ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশােধ করে আর্থিক অনটনে পরবর্তী দুই বছর কোন অর্থ পরিশােধ করেনি। এরই মধ্যে ইমরান আমিনুলের নিকট সুদাসলে ৫৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। আমিনুল দাবীকৃত অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইমরান পূর্বের গ্রহণকৃত ৩টি চেকে ১ কোটি টাকার অধিক দাবী করে চেক ডিজঅনার করিয়ে গত ২৪ মার্চ ২০২১ তারিখে আমিনুল কে লিগ্যাল নােটিশ পাঠায়।

ইমরানের আরেক হয়রানির শিকার মাওনা শিরিষগুড়ি গ্রামের বাদল মিয়া (পিতা-হাজী মুহম্মদ চাঁন মিয়া, গ্রাম শিরিযগুড়ি, পােস্ট-মাওনা, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুর) গত ২০১৯ সালে বাদল মিয়া ইমরান সরকারের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেয়। পরবর্তীতে ইমরান সরকার চক্রবৃদ্ধি সুদ সহ ০৬ লক্ষ টাকা দাবি করলে বাদল নিজ জমি বিক্রি করে সমুদয় অর্থ পরিশােধ করে। 

গত ২০১৮ সালে মান্না ওরফে মনু (পিতা-আব্দুল জলিল মােড়ল, গ্রাম-শিমলাপাড়া, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুর) ইমরান সরকার এর নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেয়। ইমরান গত ২০২০ সালে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ মােট ১২ লক্ষ টাকা দাবি করলে মনু ১০ লক্ষ টাকা পরিশােধ করে। 

শ্রীপুর উপজেলার বদনী ভাঙ্গা, মাওনা এলাকার বাসিন্দা জামাল ইমরানের নিকট থেকে ২৫ হাজার টাকা ধার নিলে ইমরান চক্রবৃদ্ধি সুদসহ ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। তাকে নানা ভাবে লাঞ্ছিত করতে থাকলে নিরুপায় হয়ে জামাল নিজের ০২ বছরের সন্তান বিক্রয়করে পরিশােধ করে বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। 

গত ২০১৮ সালে শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজিদ মুন্সীর ছেলে জামাল হােসেন ইমরানের নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নেয়। ০২ বছর পর ইমরান সুদাসলে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করলে জামাল নিজের সর্বশেষ সম্বল ০৬ কাঠা জমি বিক্রি করে সমুদয় টাকা ইমরান কে দিতে বাধ্য হয়।

শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফজলু মিয়ার ছেলে শবদুল'কে ইমরান সরকার ১৫ হাজার টাকা ধার দিয়ে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ ০৮ লক্ষ টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে শবদুল নিরুপায় হয়ে তার নিজের মালিকানাধীন ০৫ কাঠা জমি বিক্রয় করে ইমরান কে টাকা পরিশােধ করে। 

ইমরানের অপরাধ জগত শুধু সুদের ব্যবসাতে সীমাবদ্ধ নয়। সে ইয়াবা, মদ ও গাঁজা একই সাথে সেবনকারী ও খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নিজ এলাকায় পরিচিত। বিগত ২০১৮ সালে গাজীপুর ডিবি পুলিশের একটি টিম মাদক বিক্রির অপরাধে শ্রীপুর উপজেলার শিমলা পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। 

ইমরানের পিতা-নজরুল সরকার মাওনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এলাকায় তারা বেশ প্রভাবশালী। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার জন্য অবৈধ ভাবে লাইসেন্সবিহীন এ ১টি পিস্তল বহন করে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমরানের এক ঘনিষ্ঠ সহচর প্রতিবেদক কে জানায় ।

এমন কোন অপরাধ নেই যা ইমরান করেনা। সে গরু চুরি ও মােটরসাইকেল চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে জড়িত। শুধু কি তাই, শ্রীপুরে মাওনা এলাকায় ইমরান ইয়ামাহা এফজেডএস মডেল এর ও ১ টি মােটরসাইকেল ব্যবহার করে, সেটিও চুরিকৃত বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় গরু চুরির অভিযােগে ইমরানের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে।

প্রশ্নহলাে একজন সরকার দলীয় লােকের পরিচয় ধারীর কত অত্যাচার আর সাধারণ জনগণ সহ্য করবে। ইমরান আইনের তােয়াক্কা না করে মানুষকে জিম্মি করে সুদ আদায় করে যাচ্ছে। পিতার প্রতিপত্তি খাটিয়ে মাদক, চুরি সহ সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্তমানে এ সকল তথাকথিত হাইব্রিড নেতাদের কারণে সাধারণ জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

একজন ইউনিয়ন ওয়ার্ডের নেতার পরিবারের সদস্য পরিচয় বহনকারী কোন অপরাধী কি আইনের ঊর্ধ্বে? সরকারের উচ্চ মহল ভেবে দেখবেন কি?

আরও পড়ুন: আরো বেপরোয়া শ্রীপুরের সুদের কারবারী ইমরান

গাজীপুর কথা