ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আল্লাহ যে ৩ কাজ অপছন্দ করেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

আল্লাহ যে ৩ কাজ অপছন্দ করেন

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। যে তিন কাজ তিনি পছন্দ করেন তা হলো, ক. তাঁর ইবাদত করা, খ. তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করা, গ. আল্লাহর রজ্জুকে দলবদ্ধ হয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা—পরস্পর বিছিন্ন না হওয়া। আর যে তিন কাজ তিনি অপছন্দ করেন তা হলো—ক. অনর্থক কথা বলা, খ. মানুষের কাছে বেশি বেশি চাওয়া অথবা প্রশ্ন করা, গ. সম্পদ ধ্বংস করা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭১৫)

আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করেছেন এবং তাঁর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির তিনটি করে কারণ বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ যে তিন কাজ পছন্দ করেন

হাদিসের বর্ণনা মতে, আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদত, শরিক না করা ও ঐক্যবদ্ধভাবে আনুগত্য করার দ্বারা সন্তুষ্ট হন। তিনটি বিষয়ের মধ্যে দুটি ব্যক্তিগত এবং একটি সামগ্রিক বিধান। তিনটি বিষয়ের সমর্থনে একাধিক আয়াত রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে, সালাত কায়েম করতে এবং জাকাত দিতে—এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)

মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রশিকে শক্ত করে ধরো এবং পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৩)

মহানবী (সা.) বলেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার মুসলমান ভাইয়ের ওপর অবিচার করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না, তার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলবে না এবং তাকে অবজ্ঞা করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)

আল্লাহ যে তিন কাজ অপছন্দ করেন

হাদিসের দ্বিতীয় অংশে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন তিনটি কাজের বর্ণনা দিয়েছেন, যা আল্লাহ অপছন্দ করেন।

১. অনর্থক কথা বলা : ইসলাম সর্বাবস্থায় অর্থহীন কথা ও কাজ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থহীন কথা-কাজ পরিহারকে মুসলমানের সৌন্দর্য বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

আর যেসব বাক্যব্যয়কে মানুষের মন্দ স্বভাবের অংশ মনে করা হয় তা পরিহার করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০১৩)

২. বেশি বেশি চাওয়া : মানুষের কাছে বেশি বেশি হাতপাতা তথা ভিক্ষাবৃত্তির মনোভাব ইসলামে নিন্দনীয় কেননা ইসলাম সবল, সামর্থ্যবান ও স্বনির্ভর মানুষ পছন্দ করে এবং নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে বলে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘নিচের হাত অপেক্ষা উপরের হাত উত্তম। প্রথমে তাদের দেবে যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তুমি বহন করো। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে দান করা উত্তম। যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা থেকে) পবিত্র থাকতে চায় আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বাঁচতে চায় আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪২৯)

তবে কেউ কেউ হাদিসে ব্যবহৃত ‘কাসরাতুস সুওয়াল’ দ্বারা ধর্মীয় বিষয়ে অনর্থক প্রশ্নের অবতারণা করা উদ্দেশ্য নিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন কোরো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ হলে তা তোমাদের কষ্ট দেবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১০১)

৩. সম্পদ ধ্বংস করা : ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। পৃথিবীতে মানুষ তার তত্ত্বাবধায়ক মাত্র। সুতরাং মানুষ সম্পদ অপচয় ও অপব্যয় করবে না। এমনকি সম্পদ অনুৎপাদনশীল অবস্থায় ফেলে রাখতে নিরুৎসাহ করেছে ইসলাম এবং সেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে যার কারণে সম্পদহানির আশঙ্ক তৈরি হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও; খাও ও পান করো, অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী কাজ করার এবং অপছন্দের বিষয় পরিহার করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

গাজীপুর কথা