ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আর্থ্রাইটিস কি, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১২ অক্টোবর ২০২০

আর্থ্রাইটিস কি, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়

আজ ১২ অক্টোবর সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। ১৯৯৬ সাল থেকে ‘ওয়ার্ল্ড আরথ্রাইটিস ডে’ দিবসটি ‘আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউমেটিজম ইন্টারন্যাশনাল’-এর তত্ত্বাবধানে উদ্যাপিত করে আসছে।
বহু প্রাচীনকাল থেকে এই রোগটির অস্তিত্ব থাকলেও ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই এটি পুস্তক বা নথিভুক্ত হওয়া শুরু করে এবং আকারে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়তে এবং সংক্রমিত হতে শুরু করে। ১৮৫৯ সালের দিকে রোগটিকে তার বর্তমান ‘আর্থ্রাইটিস’ নামকরণ করা হয়।  

‘আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন’ আটল্যান্টা’-এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে মানুষের অক্ষমতার প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো আর্থ্রাইটিস। বর্তমানে শুধু আমেরিকাতেই সাত মিলিয়নের বেশি মানুষ আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। আমাদের দেশে প্রায় পঁচিশ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বাত ও জটিল বাতরোগে আক্রান্ত।  

তবে দুঃখের বিষয় এখনো অনেকে এই বিষয়ে অজ্ঞই থেকে গেছে। আর্থ্রাইটিস বলতে সাধারণত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহকেই বোঝানো হয়। এটি নির্দিষ্ট একটি রোগ নয়। সবচেয়ে বেশি হয় অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।  

জেনে নিন অস্টিওআর্থ্রাইটিস কি

সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস ধীরে ধীরে হয়। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করলে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধি ফুলে যায় ও ব্যথা করে, অস্থিসন্ধির জড়তা দেখা দেয় (সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘসময় বসে থেকে ওঠার সময়), ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমের পর অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধিতে কড়মড় শব্দ হয়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস বেশি হয় হাঁটুর জয়েন্টে। উঁচু কোথাও উঠতে গেলে হাঁটুতে বেশি চাপ লাগে। হাতে যদি ভারী কোনো বোঝা থাকে, তবে তা বহন করা কষ্টকর হয়। হাঁটু ফুলে যায়। কোমরে হলে নড়াচড়া কঠিন হয়। বিশেষ করে শরীরের নিচের অংশ। ব্যথা কোমরের সঙ্গে সঙ্গে কুঁচকি, উরু এমনকি হাঁটুতেও হতে পারে। হাতের মধ্যে বৃদ্ধাঙুলে বেশি হয়। আঙুলে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, ঝিমঝিম করে, জয়েন্টের আশপাশে গোটার মতো গুটি হয়। মেরুদণ্ডে হলে ঘাড় ও কোমরে উভয় স্থানে ব্যথা হতে পারে। কখনো কখনো হাত-পা ঝিমঝিম করে। 

যাদের এটি বেশি হয়  
> যাদের বয়স বেশি, যেমন বয়স ৬৫-র বেশি হলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। 

> ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের এবং ৪৫ পরবর্তী নারীদের এটি বেশি হয়। 

> অস্থিসন্ধিতে যেকোনো ধরনের আঘাত পেলে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এ কারণে যারা পেশাগত কারণে শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন বা আঘাতের ঝুঁকিতে থাকেন তাদের ঝুঁকি বেশি। 

> যাদের ওজন বেশি, অস্টিওআর্থ্রাইটিস তাদের বেশি হয়। সাধারণ স্থূল শরীরের মানুষের হাঁটুতে রোগটি বেশি দেখা দেয়।

> কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে দেখা যায়।

রোগ নির্ণয়
রোগের ইতিহাস ও রোগের ধরন দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যেমন এক্স-রে, জয়েন্ট অ্যাসপিরেশন ইত্যাদি। 

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কি

এটি অটোইমিউন অসুখ। এতে শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কারণেই কিছু টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অস্থিসন্ধির বহিরাবরণীতে প্রদাহ হয়। এ কারণে অস্থিসন্ধি ও এর আশপাশে ব্যথা হয়, জড়তা তৈরি হয়, ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং শরীরে জ্বরজ্বর অনুভূতি হয়। এতে অস্থিসন্ধির আকারের বিকৃতিও ঘটে। সময়ের সঙ্গে এটি তীব্র হতে থাকে। মাঝেমধ্যে ব্যথা ও ফোলা আপনিতেই কমে যায়, আবার বাড়ে।

লক্ষণ 
রোগটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক। তাই কখনো কখনো লক্ষণ প্রকাশ পায়, আবার কিছুদিন কোনো লক্ষণই থাকে না। 

সাধারণ লক্ষণ

> ঘুম থেকে ওঠার পর অস্থিসন্ধিসহ শরীরের কিছু অংশে ব্যথা ও জড়তা থাকে।

> হাতের আঙুল, কনুই, কাঁধ, হাঁটু, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় বেশি সমস্যা হয়।

> সাধারণত শরীরের উভয় পাশ একসঙ্গে আক্রান্ত হয়। যেমন- হাতে হলে দুই হাতের জয়েন্টই একসঙ্গে ব্যথা করে, ফুলে যায় ইত্যাদি।

> শরীর দুর্বল লাগে, জ্বরজ্বর অনুভূতি হয়। ম্যাজম্যাজ করে।

> কারো কারো ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে এক ধরনের গুটি দেখা যায়, যা ধরলে ব্যথা পাওয়া যায় না।

প্রতিরোধের উপায় 

> শারীরিক তৎপরতা বাড়ানো। যেমন- বহুতল ভবনে ওঠার সময় মাঝেমধ্যেই লিফট ব্যবহার না করে সিড়ি ব্যবহার করা এবং যানবাহনে ওঠার আগে অন্তত ৫০০ মিটার পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া।

> মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

> মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশনের মতো কাজের চর্চা করা।

> শরীরের জয়েন্টগুলোকে নতুনভাবে জখম হতে না দেয়া এবং ইতোমধ্যেই জখমে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তা দ্রুত সারিয়ে তোলা।

> প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া। ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া। 

> যে কোনো ছোটখাটো জখমের চিকিৎসা করানো। 

> ধূমপান না করা। মদপান না করা। কারণ মদ হাড়ের স্বাস্থ্য ও কাঠামো দূর্বল করে দেয়।

> নিয়মিত দুধ পান করুন। তবে ল্যাকটোজ জাতীয় খাদ্য উপাদান হজমে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ক্যালসিয়াম ও ব্রোকোলি জাতীয় খাবার বেশি খান।

> মেনোপোজ পরবর্তী নারীদের জন্য হরমোন প্রতিস্থাপন, অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

> সঠিক সাইজের ও নরম জুতা পরতে হবে।

> প্রদাহসৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রায়ই দেখা যায় যে, লবন, চিনি, মিষ্টি, মদ, ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস, সাধারণ রান্নার তেল, ট্রান্স ফ্যাট ও লাল মাংস ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ অসংখ্য রোগের জন্ম দেয়।

> ঠান্ডায় আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ও সমস্যা বেড়ে যায়, তাই ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। কুসুম গরম পানির সেঁক ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী। কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে।

চিকিৎসা  
আর্থ্রাইটিস জোড়ার রোগ ও বিভিন্ন প্রকার আর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদি কারও এ জাতীয় সমস্যা হয় তা হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক এ ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন। যেমন- রক্ত পরীক্ষা, সেরোলজি পরীক্ষা, এক্সরে। আর্থ্রাইটিসের প্রকারভেদ অনুযায়ী কিছু ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। যেমন-ব্যথানাশক এনএসএআইডিএস, ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম। আর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা। এতে অনেকাংশে রোগীর সমস্যা ব্যথা-বেদনা দূর হয় এবং রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে পারে। 

ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশনে, আল্ট্রাসাইন্ড থেরাপি, ইন্টারফেরেন সিয়াল থেরাপি, বিভিন্ন নিয়মমাফিক কৌশলগত ব্যায়াম, মেনুয়াল থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা বহুলাংশে লাঘব ও অস্থিসন্ধি স্বাভাবিক হয় এবং রোগী কর্মক্ষমতা ফিরে পায়।

গাজীপুর কথা