ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন জানু মিয়া জামে মসজিদ

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২১ আগস্ট ২০২২

প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন জানু মিয়া জামে মসজিদ

জানু মিয়া জামে মসজিদ

প্রচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন ‘জানু মিয়া জামে মসজিদ’। এটি প্রাচীন কারুশিল্পের মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা নগরীর মুরাদপুরে ১৮৪৯ সালে নির্মিত মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক, ইসলামী ঐতিহ্য, কালেরসাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে আজও।

মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসেন। বিশেষ করে জুমা, শবে বরাত, শবে কদরসহ বিশেষ দিনগুলোতে এখানে মুসল্লি ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিত হলেও এর প্রতিষ্ঠাতা তার দাদা খান বাহাদুর আশরাফ আলী। তিনি এই এলাকার জমিদার ছিলেন। তিনি ১৮৪৯ সালে ‘আশরাফিয়া জামে মসজিদ’ নামে এটি নির্মাণ করেন। ১৯৪৯ সালে দিল্লি থেকে কারিগর এনে অনেকটা দিল্লি জামে মসজিদের আদলে এটি তৈরি করা হয়।

পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে ১৯৯০ সালে এটি সম্প্রাসারণ করা হয়। ৭ হাজার বর্গফুটের মসজিদটি সম্প্রসারণের পর এখন এর আয়তন ১০ হাজার বর্গফুট। মসজিদটি খান বাহাদুর আশরাফ আলী প্রতিষ্ঠা করলেও তার নাতি প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের সহচর জানে আলম চৌধুরীর (জানু মিয়া) নামে কালের আবর্তনে পরিচিতি পেয়ে যায়। তার শিল্পী সত্ত্বার ফলেই এমনটি হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ১৮৪৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খান বাহাদুল আশরাফ আলী। এই প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। তৎকালীন সময়ে দিল্লি থেকে কারিগর এনে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। মসজিদের ভেতরে যত নকশা রয়েছে সবগুলো দিল্লির কারিগররাই করেছেন। পরবর্তীতে তার পুত্র আরবে রহমান মোতয়াল্লী হন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তার নামে মসজিদটিকে বলা হতো। তার মৃত্যুর পর আরবে রহমানের পুত্র জানু মিয়া মোতয়াল্লী হলে পরে জানু মিয়া মসজিদ নামকরণ হয় এবং এটাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়। জানু মিয়ার শিল্প সাহিত্যর কারণে এটা স্থায়ী হয়। জানু মিয়ার সান্নিধ্য লাভ করেছেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। গান বাজনা করেছেন। দুই দুইবার কবি নজরুল ইসলাম এসেছেন এই বাড়িতে। পরবর্তীতে এটা একটা পরিচিতি লাভ করেছে এবং এভাবেই চলছে।

মসজিদটির ভেতরে ফার্সি ভাষায় কষ্টিপাথর দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার নাম ও সন লিপিবদ্ধ রয়েছে। মসজিদটির ভেতরের টেরাকোটার অসাধারণ কারুকার্য এখনও পর্যন্ত সজ্জিত রয়েছে। পুরো মসজিদটি চুন আর পাথর দিয়ে নির্মিত। তৎকালীন যুগে প্রতিষ্ঠিত এই অপূর্ব মসজিদটির কারুকার্য এখনও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। মসজিদটি মেহেরাব অন্যান্য মসজিদ থেকে অনেক ভিন্ন। অন্যান্য মসজিদের মেহেরাব মসজিদের বাহিরের দিকে অথচ এই মসজিদের মেহেরাব মসজিদের ভেতরের দিকে আর মসজিদের দেয়াল ৫৬ ইঞ্চি প্রস্থ যার কারণে মসজিদের মেহেরাব ভেতরের দিকে আছে।

১০ হাজার বর্গফুটের এ মসজিদটির রয়েছে ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার ও ৩৬ ধরনের নকশা। মসজিদটিতে একসাথে ২ হাজার ৫শ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।

    আরো পড়ুন