মাছ ধরা বা মাছ শিকার করা বিলাঞ্চলের মানুষদের আজন্ম শখ। বিশেষ করে চলন বিল এলাকায় বর্ষা মৌসুমে নিম্নাঞ্চলের খাস বা সরকারি জলাভূমিতে পানি অল্প থাকাকালে মাছ শিকারিরা দল বদ্ধ হয়ে পলো, ছোট জাল নিয়ে একটি নিদিষ্ট দিনে মাছ শিকার করে থাকে। এলাকায় এটি পলো উৎসব বা বাউত উৎসব নামের পরিচিত।
শনিবার পাবনার ভাঙ্গুড়ার উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউপির বিল রুহুলে এমনই এক শৌখিন মাছ শিকারিদের মিলন মেলা হয়েছে। এতে সবার কাছে মাছ ধরা পড়ুক বা না পড়ুক এক সঙ্গে বছরের এই দিনে মাছ ধরতে আসার মজাই যেন অন্য রকম।
পাবনার ভাঙ্গুড়ার উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউপির বিল রুহুলে পলো উৎসবে মেতেছে শৌখিন মাছ শিকারিরা
সরেজমিন শনিবার উপজেলার বিল রুহুল এলাকা ঘুরে দেখা যায় , পাবনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে শৌখিন মাছ শিকারিরা ভোর বেলার কুয়াশা ভেদ করেই বিভিন্ন যানবাহন বাস, নছিমন, আটো ভ্যান, ভটভটি যোগে এই বিল পাড়ে আসতে থাকে। তাদের হাতে পলো, জাল ঠেলাজাল, ধর্মখরাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বিলের পাড়ে এসে হাজির হয়ে এক সঙ্গে মাছ ধরতে পানিতে নামে। তারা মাছ ধরার সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। কেউ মাছ পেলে সবাই মিলে তাকে আরো উৎসাহ দিতে থাকে।
পাবনার ভাঙ্গুড়ার উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউপির বিল রুহুলে পলো উৎসবে মেতেছে শৌখিন মাছ শিকারিরা
এদিনে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিলপাড়ে বিস্কুট রুটি ও চায়ের দোকান নিয়েও বসেছে। মাৎস শিকারিদের কেউ কেউ পেয়েছে সোল, বোয়াল, রুই, গজার । আবার অনেকেই মাছ পায় নি। তবে প্রায় সবার মুখেই ছিল মাছ ধরতে আসতে পারায় আনন্দের ছোয়া।
শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ সব ধরণের হাজার হাজার শৌখিন মৎস শিকারিদের আনা গোনায় রহুল বিল ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
জানা গেছে, ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউপি ও পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউপির কিছু অংশ নিয়ে কয়েক হাজার একর জমি নিয়ে রয়েছে রুহুল বিল। বিশেষত বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর কয়েক শ’ একর জমিতে বিভিন্ন গভীরতায় পানি থাকে। সেখানে বর্ষার পানিতে আটকে থাকা বোয়াল, সোল, গজার, পুঁটি, সিং সহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।
পাবনার ভাঙ্গুড়ার উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউপির বিল রুহুলে পলো উৎসবে মেতেছে শৌখিন মাছ শিকারিরা
বছরের একটি নিদিষ্ট দিনে একে অন্যেরে সঙ্গে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল থেকে বাস, ভটভটি, নছিমন যোগে ভোরে এই বিলে মাছ ধরার জন্য এসে হাজির হয়। এদিনে তাদের হাতে ধরা পড়ে নানা ধরণের মাছ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছ শিকারির সংখ্যাও কমতে থাকে।
মাছ ধরতে আসা নাটোরের পঞ্চাশোর্ধ আলম হোসেন বলেন, এই দিনটিতে রহুল বিলে মাছ ধরার জন্য প্রতি বছর অপেক্ষা করে থাকি। লোক মুখে খবর পেয়ে মাছ ধরতে এসেছি।
টাঙ্গাইলের বাছের উদ্দীন বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মাছ ধরার খবর পেয়ে তারা একাধিক বাস রিজার্ভ করে পলো ও মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে কয়েকশ শৌখিন মাৎস শিকারি মাছ ধরতে এসেছেন।
গাজীপুর কথা