ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মাত্র ৩২টি বই নিয়ে চিত্তরঞ্জন সাহা শুরু করেছিলেন বইমেলা

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

মাত্র ৩২টি বই নিয়ে চিত্তরঞ্জন সাহা শুরু করেছিলেন বইমেলা

ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে বিপ্লবের মাস। ভাষাকে আঁকড়ে ধরে থাকার মাস। তাইতো ফেব্রুয়ারিতে বেজে ওঠে বইমেলার ঘণ্টাও। গোটা ফেব্রুয়ারি জুড়ে রাজধানী ঢাকায় চলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর এই মেলার জন্যই সেজে ওঠে ঢাকা।

বাংলাদেশের সৃষ্টি, তার সংগ্রাম আর ইতিহাসের সঙ্গে প্রবলভাবে জড়িয়ে আছে এই একুশে বইমেলা। ১৯৭১-এ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। তার পরের বছর, ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বটতলায় ৩২টি বই সাজিয়ে বসেন চিত্তরঞ্জন সাহা। দিনটি ছিল ৮ ফেব্রুয়ারি। যত ছোটোই হোক না কেন, সেই দিনটি থেকেই অমর একুশে বইমেলার সূচনা ধরা হয়। বাংলাদেশ শরণার্থীদের লেখা এই ৩২টি বই চিত্তরঞ্জনবাবু ছেপেছিলেন তারই প্রকাশনা ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ থেকে। আজ যা সমস্ত পাঠকমহলের কাছে পরিচিত ‘মুক্তধারা প্রকাশনা’ নামে।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬— টানা পাঁচ বছর এই ছোট্ট মেলা প্রায় একা হাতে চালান চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ থেকে এর পরিধি বাড়তে থাকে। ঠিক এর পরেই, ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এবং ১৯৭৯ সালে চিত্তরঞ্জন সাহারই ‘বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশনা সমিতি’ যোগ দেয় এর সঙ্গে। মেলার পরিসর আরো বড় হয়।

যত সময় যায়, ততই এর জাঁকজমক বেড়েছে। লেখক, পাঠক, প্রকাশক— প্রত্যেকের ত্রিবেণী সঙ্গমে সমৃদ্ধ হয়েছে এই বইমেলা।

 

প্রতি বছরের মতো এ বছরও আয়োজিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ফাইল ছবি

প্রতি বছরের মতো এ বছরও আয়োজিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ফাইল ছবি

শুধু বাংলাদেশের মানুষদের কাছেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের পাঠক-লেখকদের কাছেও এই মেলার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। বলা যেতে পারে, দুই বাংলার মিলনের আরো একটি মঞ্চ এই অমর একুশে বইমেলা। তবে এই ‘অমর একুশে’ নামটি শুরু থেকে ছিল না। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলা এই নামটি ঠিক করেন। কিন্তু সে বছর বইমেলা হয়নি। সে সময় ছাত্রদের একটি মিছিলের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। এতে মারা যায় দুজন ছাত্র। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, বন্ধ রাখা হয় বইমেলা।

পরের বছর, ১৯৮৪ সাল থেকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামেই শুরু হয় মেলা। আজও থামেনি সেই যাত্রা। এক সময় বইমেলা ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলত। এখন গোটা ফেব্রুয়ারি মাসই বই পার্বণে মেতে ওঠে বাংলা।

প্রতি বছরের মতো এ বছরও আয়োজিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। একটা সময় কেবল বাংলা একাডেমি চত্বরেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হত। ২০১৪ থেকে পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সম্প্রসারিত হয়েছে এটি। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকাশনা, লিটল ম্যাগাজিনসহ বহু সম্ভার নিয়ে হাজির থাকবেন প্রকাশক-সম্পাদকরা।

বাংলাদেশের শরণার্থীদের লেখা মাত্র ৩২টি বই নিয়ে একদিন শুরু হয়েছিল এই মেলার। আজ সেই বইয়ের পরিমাণও যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে বইমেলার পরিসরও। বাংলাদেশের প্রকাশনার ইতিহাসে চিত্তরঞ্জন সাহা অমর হয়ে থাকবেন। তেমনই অমর হয়ে থাকবে এই একুশে বইমেলাও। এখন শুধুই পর্দা ওঠার অপেক্ষ‍া।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন