ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আধুনিকতায় চিরবিশ্রামে ‘হ্যাজাক’

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

আধুনিকতায় চিরবিশ্রামে ‘হ্যাজাক’

এই তো দুই থেকে তিন দশক আগের কথা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা আজকের মতো উন্নত ছিল না। মশাল, তেলের প্রদীপ, কেরোসিন কুপি, কেরোসিন লন্ঠন ও হ্যারিকেন দিয়ে রাতের আলোর প্রয়োজন মেটাতেন মানুষ। ঠিক তখন বেশি আলোর প্রয়োজনে নিশীথ সূর্যের মতোই ব্যবহার হতো একটি বাতি। যার নাম ‘হ্যাজাক’।

দেখতে বড়সড় হ্যারিকেনের মতো হলেও, হ্যারিকেনের থেকে শতগুণ জোরালো আলো ছড়িয়ে দেওয়া লণ্ঠনটির পোশাকি নাম ছিল ‘পেট্রোম্যাক্স’। যা পরবর্তীকালে বাংলায় বিখ্যাত হয়েছিল হ্যাজাক নামে।

লণ্ঠনটির নিচে থাকা ট্যাঙ্কে কেরোসিন ভরে দেওয়া হতো। ট্যাঙ্কের সঙ্গে লাগানো থাকত পাম্প। ট্যাঙ্কটির ওপরে থাকা পাতলা কাচের ঘেরাটোপে ঝুলত রেশমের সুতা দিয়ে বোনা বেলুন আকৃতির একটি ম্যান্টেল। তেলের ট্যাঙ্কে পাম্প দিলে কেরোসিন উঠে এসে ভিজিয়ে দিত হ্যাজাকের ম্যান্টেল। হ্যাজাকের বিশেষ জায়গায় জ্বলন্ত দেশলাই ধরলে দাউ দাউ করে জলে উঠত ম্যান্টেল। পুড়ে লাল হয়ে যেত কিন্তু ছাই হয়ে যেত না। এরপর তেলের ট্যাঙ্কে আবার পাম্প করা হতো।

 

হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি হ্যাজাক বাতি। ছবি : সংগৃহীত

হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি হ্যাজাক বাতি। ছবি : সংগৃহীত

ম্যান্টেলের রং প্রথমে লাল, তারপর নীল, সব শেষে উজ্বল হলুদ হয়ে উঠত। তখন অন্ধকারের স্পর্ধা থাকত না হ্যাজাকের ত্রিসীমানায় দাঁড়ানোর। তেলের ট্যাঙ্কের ভেতর বায়ুচাপ কমে গেলে হ্যাজাকের আলোর উজ্বলতা কমে যেত। পাম্প দিলেই আবার আগের উজ্বলতায় ফিরে আসত হ্যাজাক।

পূজা-পার্বণ, ধর্মসভা, মেলা, পুতুল নাচ, যাত্রা নাটক,  রাজনৈতিক সমাবেশের কাজে ব্যবহার হতো হ্যাজাক। এ ছাড়াও বিয়ে থেকে শ্রাদ্ধ, শোভাযাত্রা থেকে শ্মশানযাত্রা শুরু করে বাইজি নাচের আসর, যেখানে বেশি আলোর প্রয়োজন সেখানেই মুস্কিল আসান হয়ে দেখা দিত হ্যাজাক। তবে দাম ছিল সাধারণ মানুষের আয়ত্বের বাইরে। তাই নিজেদের প্রয়োজনে তারা ভাড়া নিতেন। তবে উচ্চবিত্তরা হ্যাজাক কিনে রাখতেন এবং বাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতেন।

 

হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি হ্যাজাক বাতি। ছবি : সংগৃহীত

হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি হ্যাজাক বাতি। ছবি : সংগৃহীত

আজ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও বাতি শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও বিক্রি হয় বিভিন্ন ওয়াটের বালব, টিউব লাইট, সোডিয়াম ল্যাম্প। যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে পৌঁছে গিয়েছে ব্যাটারি লাইট, সূর্যবাতি ও জেনারেটার।

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ক্রমশ পিছিয়ে গিয়েছে হ্যাজাক। বর্তমানে খুব কম গ্রামেই কর্মক্ষম হ্যাজাক খুঁজে পাওয়া যাবে। কারণ যে কোম্পানিগুলো দেশে হ্যাজাক তৈরি বা আমদানি করত, তারা চলে গেছে অন্য ব্যবসায়। আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে চিরবিশ্রামে চলে গেছে হ্যাজাকগুলো। 

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন