ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কালের সাক্ষী পাঁচ শতাব্দী আগের তৈরি খেরুয়া মসজিদ

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ১৬ মার্চ ২০২১

কালের সাক্ষী পাঁচ শতাব্দী আগের তৈরি খেরুয়া মসজিদ

বগুড়ায় কালের সাক্ষী হয়ে আছে প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে তৈরি মসজিদ। বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা শহরের অদূরে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খন্দকারটোলায় গ্রামীণ সবুজ-শ্যামল পরিবেশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। মসজিদটির নির্মাণশৈলী আজও হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থীদের হৃদয় মনে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

মোগল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের সামনের দেয়ালে একটি প্রাচীন ফারসি শিলালিপি দর্শনার্থীর চোখে পড়বে। শিলালিপিটি একটি ঐতিহাসিক দর্পণও বটে। 

এই শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতিহাসবিদ ও সাবেক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রোস্তম আলী তাঁর ‘শেরপুরের ইতিহাস’ বইয়ে লিখেছেন, ৯৮৯ হিজরির ২৫ জিলহজ সোমবার (২০ জানুয়ারি ১৫৮২ খ্রি.) মসজিদের জায়গা পরিদর্শন করা হয়। মির্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্ঠপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির ২৬ জিলহজ মঙ্গলবার ওই স্থানে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিন গম্বুজবিশিষ্ট নজরকাড়া মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এর বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট ভেতরের দিক। আর মসজিদের চারদিকের দেয়ালের পুরুত্ব ৬ ফুট। চারকোনায় চারটি মিনার ও পূর্ব দেয়ালে তিনটিসহ উত্তর-দক্ষিণে আরও দুটি দরজা রয়েছে। মাঝের দরজাটি অন্য দুটি থেকে আকারে অনেক বড়। 

আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে অর্ধগোলাকার মেহরাবগুলো স্থাপিত। মসজিদের কার্নিশগুলো বাঁকানো। মসজিদের দেয়ালে কোনো কারুকার্য চোখে পড়ে না। এর দেয়াল সাদাসিধেই বলা যায়। মসজিদের প্রবেশদ্বারের দুই পাশে দুটি শিলালিপি ছিল। ডান পাশেরটি করাচি জাদুঘরে রাখা হয়েছে। আর বাম পাশেরটি অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়। 

আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, জানালা-বিহীন মসজিদটির প্রবেশদ্বারগুলোতে কোনো খিলানের ব্যবহার নেই। মসজিদ নির্মাণে ইট, চুন ও সুরকি ছাড়াও বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।

সম্রাট আকবরের সময় নির্মিত হওয়ায় মসজিদের দেয়ালের কিছু চিহ্ন নিয়ে অসংগতি প্রকাশ পায়। প্রচলিত আছে, এই মসজিদটি জিন জাতির দ্বারা নির্মিত। কেউ কেউ বলে থাকেন, মসজিদটি রাতারাতি তৈরি হয়েছে। তবে এখন এগুলোর পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন মসজিদটি অবহেলা অযত্নে পড়ে থাকে। সেই সময় ঝোপঝাড়, গাছপালায় ঢেকে ছিল মসজিদের সামনের অংশ। চারদিকেও বেড়ে উঠেছিল অনেক জঙ্গল। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। 

এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে মসজিদ এবং এর ৪৮ শতক জায়গা দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন মসজিদটি তার হারানো জৌলুস ফিরে পায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক, দর্শনার্থীরা দেখতে আসে এই মসজিদটি। এছাড়া মাঝেমধ্যে এখানে বিদেশি পর্যটক ও গবেষকদের দেখা মিলে। তবে এখন যে মসজিদটি খুব ভালো অবস্থায় আছে তাও বলা যায় না। মসজিদের আরও কিছু সংস্কার প্রয়োজন। তবেই কালের ইতিহাস হয়ে রবে এই প্রাচীন স্থাপনাটি।

খাদেম আব্দুস সামাদ জানান, ইতিহাস সমৃদ্ধ এ মসজিদটি পরিদর্শনে প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের বহু পর্যটক ও দর্শনার্থীসহ স্থাপত্য বিশারদরা আসেন। তবে মাত্র কয়েকশ’ গজ সড়ক ঐতিহাসিক এ মসজিদটিকে কিছুটা দুর্গম করে রেখেছে। তবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কাঁচা সড়কটি পাকাকরণ করা হয়েছে। তাই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সরাসরি মসজিদটি পরিদর্শনে আসতে পারছেন। ফলে  মসজিদ পরিদর্শনে আসা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের যেমন তৃষ্ণা মিটছে সেই সঙ্গে মুসলিম স্থাপত্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছেন। 

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত আলী সেখ জানান, মুসলিম স্থাপত্যটি রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিত করাসহ সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর কথা

    আরো পড়ুন