ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

১৪ বছর পর আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৩০ মে ২০২৩

১৪ বছর পর আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

ছবি: সংগৃহীত

সময়টা এক যুগেরও বেশি। হিসাব কষলে দাঁড়ায় ১৪ বছর। টুর্নামেন্টের শুরুতে ধুঁকতে থাকা মোহামেডান ধীরে ধীরে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে পৌঁছে। প্রতিপক্ষ দল যখন ঢাকা আবাহনী, তখনতো কোনো কথাই নেই। ‘ঢাকা ডার্বিতে’ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আবাহনীর কাছে ধাক্কা খেতে হয়েছে ঢাকার সাদা-কালো বাহিনীকে।

এবারের বড় মঞ্চে ধাক্কা খেতে হলো না মোহামেডানকে। ফেডকাপের ফাইনালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ট্রাইবেকারে আবাহনীকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে দলটি। এতে দীর্ঘ ১৪ বছর ফেডারেশন কাপের শিরোপা ঘরে তুলল ঢাকার সাদা-কালোরা।

মঙ্গলবার কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ম্যাচের শুরু থেকেই মোহামেডানের রক্ষণভাগে আক্রমণ চালায় আবাহনী। একের পর এক আক্রমণে সাদা-কালোদের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে ঢাকার আকাশি-নীলরা। ম্যাচে যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা আশা করছিল উপস্থিত দর্শক, সেটি হয়নি। উল্টো আবাহনী মোহামেডানের ওপর চড়াও হয়।

ম্যাচের ২ মিনিটেই আরিফ হোসেনের লম্বা থ্রো ইন হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিল মোহামেডান ডিফেন্ডাররা। ফিরতি বলে রাফায়েল আগুস্তোর হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। খেলার ৭ মিনিটে ডি বক্সের ডান প্রান্ত ধরে এগিয়ে এসে শট করেছিলেন এমেকা। তবে তার বাঁকানো শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। এরপর কয়েক দফা আক্রমণের পর মোহামেডানের রক্ষণভাগ ভাঙতে সময় নেয়নি আবাহনী।

ম্যাচের ১৬ মিনিটে আবাহনীকে এগিয়ে নেন ফাহিম। এমেকার ডিফেন্স ক্রসে ডি-বক্সে বল পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তার গ্রাউন্ডেড শ্ট গোলরক্ষক সুজনের পায়ে লেগে বল জালে জড়ায়। এতে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। গোল হওয়ার পর আবাহনীর সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠে। গ্যালারিতে নীল-হলুদ ধোয়ার মশাল জ্বালিয়ে উদযাপন করে তারা।

এরপর খেলার ২৯ মিনিটে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে কলিনদ্রেসের ক্রস বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান এমেকা। এরপর দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল পেয়ে যায় বাঁ প্রান্তে থাকা ফয়সাল। তার শট রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক। খেলার ৩৬ মিনিটে ফ্রি-কিক পায় আবাহনী। বক্সের ডান প্রান্ত থেকে কলিনদ্রেস সরাসরি গোলে শট নেন। তবে সরাসরি গোলরক্ষকের কাছে আসে বল।

খেলার ৪৩ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান হৃদয়। পরে বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান ড্যানিয়েল কলিনদ্রেস। দ্রুত গতির শটে ফারপোস্টে বল জালে জড়িয়ে দলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন তিনি।

যোগ করা সময়ে (৪৫+২) ফ্রি-কিক থেকে দলকে এগিয়ে দিতে পরতেন কলিনদ্রেস। তার শট ক্রস বারে লাগলে ব্যাবধান বাড়েনি। পরে লিড রেখে বিরতিতে যায় আবাহনী (২-০)।  বিরতির পর আবাহনীর রক্ষণভাগে চেপে ধরে মোহামেডান। এর সুফল পায় বেশিক্ষণ দেরি করতে হয়নি ঢাকার সাদা-কালোদের। খেলার ৫৮ মিনিটে মোহামেডানের হয়ে সমতায় ফেরায় মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতে (২-১)। কামরুলের মাথা ছুঁয়ে আসা বল ডি-বক্সে ঢুকে গোল করেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর মোহামেডানের হয়ে আবারো দিয়াবাতের ঝলক দেখেন ফুটবলপ্রেমীরা।

ম্যাচের ৬০ মিনিটে নিজের জোড়া গোল করে মোহামেডানকে সমতায় ফেরান দিয়াবাতে ( ২-২)। এবার বলের যোগান দাতা জাফর ইকবাল। খেলার ৬৫ মিনিটে আবাহনী হয়ে আবার লিড এনে দেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ওগবা (৩-০)। ফাহিমের বাড়ানো বলে ডি-বক্সে ঢুকে গোল করেন এই নাইজেরিয়ান। তার গোলে আাবাহনীর গ্যালারিতে থেকে উল্লাসে ফেটে পড়ে।

তবে ম্যাচের মোড় নেয়া তখনও বাকি। খেলার ৭৫ মিনিটে মোহামেডানেকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল দিয়াবাতে। জাফরের ক্রস হেডে সুলেমান দিয়াবাতের শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়।

অবশ্য খেলার ৮৩ মিনিটে মালির ফরোয়ার্ডকে ধরে রাখতে পারেনি আবাহনী। এই গোলটি করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মোহামেডানের মধ্যমণি সুলেমান দিয়েবাতে। এই হ্যাটট্রিকে ফেডারেশন কাপের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার করলেন তিনি।

বাকি সময়ের গোল না হওয়ায় ৩-৩ স্কোরলাইনে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। পরে দুই দলই জয়ের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। এই মুহূর্তে অতিরিক্ত সময়ে প্রথম শট নেয় মোহামেডান। তবে ইমানুয়েলের শট ঝাপিয়ে পড়ে তালুবন্দী করেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম।

ম্যাচের ১০৫ মিনিটে ভুল করে বসেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল ইসলাম। মোহামেডানের মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতেকে ডি-বক্সে ফেলে দেন। এতে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি আলঙ্গীর সরকার। পেনাল্টি থেকে দলকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে (৪-৩)। এই গোলে ফেডারেশন কাপে তার গোলসংখ্যা দাঁড়ালো ৮টি। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয়ার্ধে আবারো ১১৭ মিনিটে গোল করেন রহমত মিয়া। তাতে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ( ৪-৪)। বাকি সময়ে গোল হওয়ায় ম্যাচটি গড়ায় ট্রাইবেকারে।