ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মেসি এখনও আছে, রোনালদো কি শেষ!

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

মেসি এখনও আছে, রোনালদো কি শেষ!

মেসি ও রোনালদো

গেল বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে যোগ দেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সিআর সেভেন সৌদিতে পাড়ি দেওয়ায় সৌদির প্রো-লিগের নাম ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র।

আরব দেশটির ক্লাবে যোগ দেওয়ার পরপরই নাসেরের জার্সিতে রোনালদোর অভিষেক হয়নি। অভিষেকের জন্য পর্তুগিজ এই সুপারস্টারকে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারী ১৯ তারিখে এক প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে সাবেক এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার অভিষেক হয়। সেটিও ঘটে নিজের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার সুপার স্টার লিওনেল মেসির ক্লাব পিএসজির বিপক্ষে। ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছিল মেসির দল। ফরাসি ক্লাবটি ম্যাচ জিতে নেয় ৫-৪ গোলের ব্যবধানে। 

ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন রোনালদো। রোনালদোর দিনে মেসিও গোল করেছিলেন। তবে ওই ম্যাচের পর আর মাঠে নামেনি মেসি। বিপরীতে ওই ম্যাচের পর টানা দুই ম্যাচ খেলেছেন রোনালদো। গোল করতে পারেনি। বরং সুযোগ মিস করছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার।

তাহলে কি বয়সভারে রোনালদো ফুরিয়ে গেল? অন্যদিকে বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে আলো ছড়াচ্ছেন লিওনেল মেসি। ক্লাব এসে করলেন গোল। পাশাপাশি গোল করিয়েছেন। বয়স কম হওয়া মেসি থাকছেন ক্লাবের আলোচনায়। 

গেল বছর কাতার বিশ্বকাপ জেতার মাধ্যমে রোনালদোকে ছাড়িয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন লিওনেল মেসি। তার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের বিপরীতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একাদশে জায়গা হারানো কিংবা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়াটা রীতিমতো ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও জমজমাট রাইভালরির সমাপ্তি এঁকে দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, মেসির এই বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে কে সেরা বির্তকের সমাপ্তিও ঘটেছে। মেসি সর্বকালের সেরার বিতর্কে পেলে-ম্যারাডোনার পাশে জায়গা পাচ্ছেন। অন্যদিকে রোনালদোকে অন্যতম সেরার মর্যাদা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

গত দেড় যুগ ধরে মেসি ও রোনালদো দুজন যেভাবে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছেন; তা ফুটবল কেন, যেকোনো খেলার ক্ষেত্রেই বিরল। এই যেমন ধরুন ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার-ব্রায়ান লারা বা রিকিং পন্টিং, টেনিসে রোজার ফেদেরার-নাদাল-জকোভিচরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও দীর্ঘসময় ধরে এমন একটানা লড়াই মেসি-রোনালদোর মতো কেউ করতে পারেননি।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়িয়েছে বেলা। মেসি-রোনালদোর ক্যারিয়ারও মধ্যগগন ছেড়ে এখন অস্তাচলে। ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো তো ইউরোপের প্রতিযোগিতার মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে নতুন মৌসুমে পা রেখেছেন এশিয়ার ফুটবলে।

অন্যদিকে ৩৫ বছর বয়সি মেসি পুরোনো ইউরোপিয়ান ক্লাব মাতাচ্ছেন। ঠিক ওয়াইনের মতো। ফুটবল রসিকদের আরো একবার দুজনের এই জমজমাট লড়াই দেখার সুযোগ মিলেছিল চলতি বছরের জানুয়ারী। 

এবার একটু পরিসংখ্যান ঘাটা যাক।

মেসি-রোনালদো দ্বৈরথে জয়ের পাল্লা কার? উত্তরটা হলো মেসির। রোনালদোর দল যেখানে জয় পেয়েছে ১১ ম্যাচ, সেখানে মেসির দলের জয় ১৬ ম্যাচে। এটা গেল জয়ের হিসাব।

গোল করতে কে এগিয়ে? এখানে দেখা যায়, গোল করার দিকেও এগিয়ে মেসি। তবে ব্যবধান মোটে ১ গোলের। রোনালদোর ২১ গোলের বিপরীতে মেসির ঝুলিতে আছে ২২ গোল। আর অ্যাসিস্ট সংখ্যায় মেসি রোনালদোর চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছেন। মেসির নামের পাশে রয়েছে ১২টি অ্যাসিস্ট। রোনালদোর অ্যাসিস্ট সংখ্যা মোটে ১টি।

আজ থেকে পনেরো বছর আগের ঘটনা। রোনালদো মাত্র কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিয়েছেন। পর্তুগালের ক্লাব স্পোটিং লিসবন থেকে পাড়ি দিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। অন্যদিকে মেসি বার্সার একাদশে কেবল জায়গা করে নিয়েছেন।

এই দ্বৈরথের প্রথম দেখা ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল। মুখোমুখি ইউনাইটেড-বার্সেলোনা। প্রথম লেগের খেলায় ক্যাম্প ন্যুতে গোলশূন্য ড্র করেছিল দুদল। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দ্বিতীয় লেগের খেলায় পল স্কোলসের একমাত্র গোলের জয়ে ফাইনালে পা রাখে রেড ডেভিলরা।

এক মৌসুম পর ফাইনালে ফের দেখা হয়েছিল বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। সে দেখায় বিজয়ীর হাসি অবশ্য ছিল মেসির ঠোঁটে। সেই ফাইনালে গোলও করেছিলেন আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর। এরপর রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার পর নিয়মিতই দেখা হয়েছে তাদের দুজনের।

তাতে এল ক্লাসিকো পায় আলাদা এক মাত্রা। মাদ্রিদ-কাতালান দ্বন্দ্বও যেন পৌঁছে যায় অনন্য মাত্রায়। সেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটল চলতি গেল বছরের ডিসেম্বরে। রোনালদো এশিয়ায় পা রাখায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আরো কমে গেছে। তবে মেসি ও রোনালদো যতদিন খেলবেন, ততদিন লড়াই চলবেই।

দুজনের মাঝে প্রতিযোগিতাটা যে কখনো শেষ হবার নয়...!