ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

প্রকাশিত: ২০:১৪, ১৯ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ২০:১৫, ১৯ আগস্ট ২০২২

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

আমেরিকা বিশ্বের সবথেকে শক্তিধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা রাশিয়ার হামলার আতঙ্কে ভোগে। পৃথিবীর পাঁচ মহাসাগরই আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ গুলো দাপিয়ে বেড়ায়। একই ভাবে ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকা সবখানে রয়েছে মার্কিন সেনা ঘাঁটি। কিন্তু এগুলো কিছুই আমেরিকাকে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। কেননা রাশিয়ার কাছে এমন কিছু অস্ত্র আছে যেগুলোকে ঠেকানোর শতভাগ প্রযুক্তি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। আবার এসব অস্ত্রের মাধ্যমে আমেরিকার বিশাল অংশ কিংবা পুরো দেশকে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করা সম্ভব। স্পষ্টতই রাশিয়ার এসব অস্ত্র তৈরি করেছে কেবলমাত্র আমেরিকার মত প্রবর শক্তিধর রাষ্ট্রকে চাপে রাখতেই।

আজকের এই বর্ণনায় এমনই পাঁচটি অস্ত্রের বর্ণনা তুলে ধরা হবে যা এই প্রবল শক্তিধর আমেরিকাকে মুহূর্তের মধ্যেই মরুভূমি বানিয়ে দিতে পারে।

আজ আমরা জানবো আমেরিকাকে আতঙ্কিত করা এসব অস্ত্র সম্পর্কেঃ

ট্রোজেটিক হেভি বোম্বারঃ

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

রাশিয়া কাছে বর্তমানে তিন ধরনের বোম্বার আছে। এগুলো হচ্ছে তুপোলেভ Tu22M,Tu95 এবং বিশ্বের সবথেকে বড় বোম্বার Tu160, তবে এই বোম্বার গুলো যে কেবলমাত্রে পারমাণবিক হামলার জন্য ব্যবহার করা হয় তেমনটা নয় বরং পারমাণবিক বোমা হামলা পাশাপাশি এগুলো গতানুগতিক বোমা হামলাও করতে পারে। মূলত কোল্ড ওয়ারের পর থেকে এগুলো কখনোই পারমানবিক বোমা বহন করেনি। আর কোল্ড ওয়ারের সময় এই বিমানগুলো দিয়েই সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের বিভিন্ন পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালাতো। বর্তমানে রাশিয়ার বহরে থাকা তুপোলেভ Tu22M  বিশ্বের সবথেকে দ্রুতগতির বোম্বার। ঘন্টায় এই বোম্বার ২৩০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। অর্থাৎ একটি ফাইটার বিমানের চেয়েও দ্রুতগতিতে ছুটে পারমাণবিক হামলা করতে সক্ষম। আর দ্রুতগতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিকে রাশিয়ার তুপোলেভ Tu95 হচ্ছে রাশিয়ার বহরে থাকা সবথেকে পুরনো বিমান। আমেরিকায় পারমাণবিক হামলার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম দিকের তৈরী বোম্বার গুলোর এটি একটি বিমান। প্রায় ৭০ বছর পরও এগুলো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো একটানা ৪৩ ঘন্টা উড়ার  রেকর্ড রয়েছে।

এখন পর্যন্ত এটা কোন বিমানের সর্বোচ্চ  উড়ার রেকর্ড । বিমানটির আরো একটি সুবিধা আছে, এগুলোর বর্তমান মূল্য খুব বেশি নয় ,তাই বড় ধরনের হামলা করতে গিয়ে ধ্বংস হলেও খুব বেশি ক্ষতি নেই। অর্থাৎ এক প্রকার আত্মঘাতী হামলা করতে পারে। এদিকে বিশ্বের সবথেকে বড় বোম্বার Tu160 বিমানটি বিপুল পরিমান বোমা বহন করতে সক্ষম। এক একটি বিমান প্রায় ৪৫ হাজার কেজি বোমা বহন করতে সক্ষম। এই পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আমেরিকার উপড়ে ফেললে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। বিমানটির গতিও মারাত্বক, তবে Tu22M এর থেকে কিছুটা কম। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরো নতুন করে এগুলো উৎপাদনের আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চিতভাবে এটা আমেরিকার জন্য দুশ্চিন্তার খবর।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইলঃ

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল । কেবলমাত্র উত্তর কোরিয়ার কাছে থাকা ব্যালাস্টিক মিসাইলের ভয়েই আমেরিকা আতংকিত থাকে। যেখানে রাশিয়ার তৈরী মিসাইল গুলো আরো অনেক বেশি শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর। বাস্তবিক পক্ষে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল তৈরীতে আমেরিকা থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। কোল্ড ওয়ারের পর বা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে আমেরিকা নতুন করে কোনো ব্যালাস্টিক মিসাইল তৈরি করেনি। কিন্তু রাশিয়া উত্তরাধিকারসূত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের সবগুলো ব্যালেস্টিক মিশাইল হাতে পেয়েছে। সেই সাথে পুতিনের আমলে নতুন নতুন ব্যালেস্টিক মিশাইল উৎপাদন করেছে। বর্তমানে আমেরিকা এবং ন্যাটো মিত্রদের জন্য রাশিয়ার মিসাইল গুলো বিরাট এক হুমকি। বর্মানে রাশিয়ার কাছে থাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল গুলো হচ্ছে   ৪৬টি R36 , ৪৫টি RT 2PM Toplo, ৭৮টি RT2 Topol M এবং প্রায় ১৫০টি RS24 Years, রাশিয়ার কাছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল আছে ৩০০টির উপরে। যেখানে আমেরিকাতে মোট অঙ্গরাজ্যই মাত্র ৫০টি। অর্থাৎ রাশিয়া যদি সবগুলো মিসাইল একত্রে নিক্ষেপ করে তাহলে গোটা আমেরিকা এবং ইউরোপীয় মিত্রদের ধ্বংস করা সম্ভব। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়ার কাছে যতগুলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল আছে এগুলোকে ঠেকানোর জন্য আমেরিকার কাছে ততগুলো এন্টি ব্যালাস্টিক মিসাইলও নেই।

বর্তমানে রাশিয়ার কাছে থাকা সবচেয়ে আধুনিক ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল RS24 Years, এগুলো ২০১০ সালে প্রথম প্রকাশ করা হয়। তবে ২০১৮ সালে রাশিয়া RS28 Saramat নামের আর একটি শক্তিশালী মিসাইলের কথা বলে। গতবছর এ মিসাইলটি টেষ্ট করা হয়। ২০২১ সালে সার্ভিসে আসলে এটাই বিশ্বের সব থেকে দূরপাল্লার এবং সব থেকে দ্রুতগামী মিসাইলে পরিনত হবে।

পারমানবিক ব্যুরেভেস্টনিক ক্রুইজ মিসাইলঃ

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

ব্যুরেভেস্টনিক ক্রুইজ মিসাইল তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে। এটা আনলিমিটেড রেঞ্জের মিসাইল। কেননা এটা পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত অর্থাৎ এটাতে কোন ফুয়েল বা জ্বালানী লাগে না। আবার মিসাইলটি অনেক নিচে দিয়ে ছুটে চলে, তাও আবার সুপারসনিক গতিতে। তাই এটা সহজে রাডারেও  ধরা পড়ে না। মিসাইলটি এখনও সার্ভিসে আসেনি। সার্ভিসে আসলে আমেরিকা এটাকে ঠেকাতে কি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ব্যালাস্টিক মিসাইল সাবমেরিনঃ

রাশিয়ার ভয়ংকর ৫ টি অস্ত্র

এটি তালিকার চতুর্থ  স্থানে আছে। এগেুলো আগের যে কোনো অস্ত্রের চেয়ে ভয়ংকর। কেননা দূরপাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল নিয়ে এগুলো পানির নিচে গোপন থাকে। তাই সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে গুলো আমেরিকার সমুদ্রসীমায় ঢুকে থাকতে পারবে। আর যে কোনো সংকট দেখা দিলেই হামলা করে কয়েক মিনিটেই খতম। কিউবার মিসাইল ক্রাইসিসের সময় এমনিই এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমেরিকার সমুদ্রসীমা আত্মগোপনে থাকা সোভিয়েত সাবমেরিন ক্রুরা ভুলবশতঃ সময় ধরে নিয়েছিল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাই তারা আমেরিকায় হামলার জন্য পুরোপুরি হয়।বর্তমানে রাশিয়ার বহরে ১৪টি সাবমেরিন এক্টিভ আছে। প্রতিটি সাবমেরিনে ১৬ থেকে ২৪টি ব্যালাস্টিক মিসাইল আছে।

এ্যাভানগার্ হাইপারসনিক মিসাইলঃ

এ্যাভানগার্ হাইপারসনিক মিসাইলঃ

এ্যাভানগার্ হাইপারসনিক মিসাইল তালিকার পঞ্চম স্থানে আছে।রাশিয়ার সবথেকে ভয়ঙ্করতম অস্ত্র এখনো নির্মাণাধীন। এ্যাভানগার্ হাইপারসনিক মিসাইলটি সম্পূর্ণ নতুন কনসেপ্টের নতুন প্রযুক্তির অস্ত্র। এমন অস্ত্র বিশ্ববাসী আগে কখনো দেখেনি। এটা যে দ্রুতগতির শুধু তাই নয় বরং বুদ্ধিমান ও বলা যেতে পারে। কেননা এরদিকে কোন এন্টিব্যালাস্টিক মিসাইল ছুটে আসলে এটা দিক পরিবর্তন করতে পারে। আবার এটা রাডার এড়িয়ে বিমানের মতো করে ছুটতে পারে। এটাকে ঠেকাতে  তাই নতুন প্রযুক্তির খোঁজ করছে আমেরিকা। যতক্ষণ খুঁজে পাচ্ছ না ততক্ষণ তারা এর আতঙ্কে কাটাবেন। বর্তমানে রাশিয়ার কাছে ৬৮ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড অস্ত্র আছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। অধিকাংশ মানুষ মনে করে কখনোই পারমাণবিক যুদ্ধ হবে না। তাহলে রাশিয়া কেন এত বিপুলসংখ্যক পারমাণবিক ওয়ারহেড অস্ত্র রেখেছে আর কেনইবা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে এই জাতীয় মিসাইল সহ অন্যান্য অস্ত্রগুলো বানাচ্ছে।