ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

স্মার্ট দেশের চালিকাশক্তি হবে শেখ কামাল আইটি পার্ক: পলক

প্রকাশিত: ১৩:০২, ২ জুন ২০২২

স্মার্ট দেশের চালিকাশক্তি হবে শেখ কামাল আইটি পার্ক: পলক

জুনাইদ আহমেদ পলক

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ‘বর্তমানে আইটি সেক্টর থেকে রফতানি আয় এক দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে সেই আয় বৃদ্ধি করে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩১ সালের মধ্যে নিম্ন আয়ের বাংলাদেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার টার্গেট দিয়েছেন। তার সততা ও সাহসিকতায় ২০৪১ সাল নাগাদ একটি জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’

মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম উপস্থিত ছিলেন।

দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ দিনাজপুরবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক অনন্য উপহার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এবং স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। মাত্র ১৩ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এর নেতৃত্বে প্রযুক্তি শিল্প থেকে রপ্তানি আয় দাড়িয়েছে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চাই। আমরা আশা করছি দ্রুত এই আইটি ট্রেনিং সেন্টার এর নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে এবং দুই বছরের মধ্যে এখানে আমরা কার্যক্রম শুরু করবো। এখান থেকে প্রতি বছর এক হাজার তরুণ-তরুণি প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। এই তরুণ-তরুণীরা দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ডলার আয় করবে; ডলার আয়ের জন্য আর বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজন নাই। এই তো শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ ।

প্রতিমন্ত্রী পলক আরো বলেন, বাংলাদেশে টেকসই হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময়, যেখানে হাই-টেক পার্ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক যে মন্দার ঝুঁকি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শ্রম-নির্ভর অর্থনীতি যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব দেশ জ্ঞান-ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে তারাই এফডিআই (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) আকৃষ্ট করতে সমর্থ্য হবে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে, প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারীকালে তথ্য-প্রযুক্তির স্থানীয় বাজার অকল্পনীয় প্রসার লাভ করেছে। এই মহামারীকালে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম বলেন, বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের বাজার উন্মুক্ত করেছে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার সমস্যা সমাধানে তথ্য ও যোগোযাগ প্রযুক্তি বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আমাদের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আইসিটি শিল্পের প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে দিনাজপুরে আজ শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু হলো। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে আমাদের তরুণরা স্বাবলম্বী হবে।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৬৪টি জেলায় আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে দিনাজপুরে আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। দিনাজপুর ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় আরো ১০টি জেলায় (নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, জয়পুরহাট, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বান্দরবান, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ ও মেহেরপুর) শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সেনাবহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১১টি জেলায় প্রায় ৭৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম; শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১ জেলা) প্রকল্পের পরিচালক একেএম আব্দুল্লাহ খান; দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী; পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রকল্পের পরিচালক মো. হুমায়ূন কবীর; দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু বকর সিদ্দিক এবং দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।