ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জুমার দিনে যে ভুলগুলো থেকে বেঁচে থাকা জরুরি

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ১৭ মার্চ ২০২৩

জুমার দিনে যে ভুলগুলো থেকে বেঁচে থাকা জরুরি

জুমার দিনে যে ভুলগুলো থেকে বেঁচে থাকা জরুরি

খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব ও কথাবার্তা বলা হারাম। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে ‘জুমার নামাজ’ বলা হয়। আর সময় একই হলেও জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে।

জুমার নামাজ (আরবি: صَلَاة ٱلْجُمُعَة‎‎ সালাত আল-জুমুআহ, ‘শুক্রবারের সালাত’) ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। جُمُعَة (জুমুআহ) শব্দটি আরবি, এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া।

মুসলিম উম্মাহর কাছে সপ্তাহের পবিত্রতম এবং শ্রেষ্ঠ দিন জুমা বার। আর জুমার নামাজ প্রতিটি মুসলমানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ নামাজের সময় আমাদের কিছু ভুল হয়ে যায়। যেমন-

> পরিচ্ছন্ন না হয়ে জুমায় যাওয়া: জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা জরুরি। অনেকে এদিনে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, কোনোরকম জুমার ফরজ দুই রাকাত আদায় করে চলে আসেন। অথচ আবু সাইদ খুদ্রি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের জন্য গোসল করা ওয়াজিব (জরুরি)। আর মিসওয়াক করবে এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে।’ (বুখারি : ৮৮০) তাই সবার উচিত জুমার দিন গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সামর্থ্য থাকে, সুগন্ধি ব্যবহার করা। এ ছাড়াও ভালো ও পরিচ্ছন্ন জামা পরে মসজিদে যাওয়া। রাসূল (সা.) নিজেও এই দিন ভালো ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন।

> মসজিদে দেরি করে না যাওয়া: জুমার নামাজ শুধু দুই রাকাত নামাজ আদায়ে যথেষ্ট নয়। জুমার খুতবা শোনাও জরুরি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (সহবাস-পরবর্তীকালে) গোসলের মতো গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভি কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। (বুখারি : ৮৮১) তাই জুমার নামাজের দিন পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম। তাহলে সময়মতো ও সঠিকভাবে নামাজ আদায় সম্ভব।

> জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ না করা: জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে যাওয়া জরুরি। জুমার প্রথম আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা কিংবা অন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া অথবা নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া উচিত। ইয়াহইয়া ইবনু সাইদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পর জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো...।’ (বুখারি: ৯০৩)

> মনোযোগ দিয়ে খুতবা না শোনা: খুতবা শোনা জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ঠিকভাবে খুতবা শোনাও জরুরি। তবে যদি মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে খুতবার আওয়াজ না শোনা যায়, তবে নীরব থাকা নিয়ম। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওজু করে জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, তাহলে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করল। (মুসলিম : ১৮৭৩)। প্রসঙ্গত, আরবি ও বাংলায় দেওয়া উভয় খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি।

> খুতবার সময় কথা না বলা: খুতবা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বক্তৃতা, প্রস্তাবনা, ভাষণ, ঘোষণা, সম্বোধন ইত্যাদি। খুতবা জুমার নামাজের আগে দিতে হয়। খুতবা জুমার নামাজের শর্ত বা ফরজ। খুতবা ব্যতীত জুমার নামাজ হয় না। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

হাদিসের মাধ্যমে সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব ও কথাবার্তা বলা হারাম।

জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুটি খুতবা দিতেন, উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন। খুতবায় তিনি কোরআন পড়তেন এবং জনগণকে উপদেশ দিতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮০)

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, অতঃপর বসতেন, পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন- আজকাল তোমরা করে থাকো। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৭৯)