ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মেয়ে বাড়ির ইফতার এক জঘন্য কুসংস্কার

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২৬ এপ্রিল ২০২২

মেয়ে বাড়ির ইফতার এক জঘন্য কুসংস্কার

ইফতার। এক পুণ্যময় ইবাদত। ইফতার রোজাদারের জন্য পরম আনন্দের। ইফতার করায় যেমন রয়েছে আনন্দ ও সওয়াব, তেমনি ইফতার করানোতেও রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। রোজাদার তার পার্শ্ববর্তী রোজাদার কিংবা কোনো আত্মীয়স্বজনের কাছে ইফতার হাদিয়া পাঠাবেন এটিও নিশ্চয় সওয়াবের কাজ। কিন্তু কেউ যদি অন্যকে এ ‘উপহার’ প্রদানে বাধ্য করে তা হবে জুলুম। দুঃখজনক, আমাদের দেশে শ্বশুরবাড়ি থেকে কনের স্বামীর বাড়িতে পাঠানো এক জঘন্য কুসংস্কারে রূপ নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে সময়মতো ইফতার পাঠানো না হলে স্বামীর বাড়িতে মেয়েকে শিকার হতে হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। ‘সন্তোষজনক’ ইফতার না পাঠালে মানসিক নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এর কারণে আত্মহত্যা ও ডিভোর্সের মতো ঘটনাও ঘটে যায়। বিত্তশালী পরিবারগুলোতে যেমন চলে ইফতার পাঠানোর প্রতিযোগিতা, কে কত বেশি ইফতার পাঠাল, কে কত টাকা খরচ করল এর হিসাব-নিকাশ তেমনি ভয়ংকর। এ ইফতার প্রথার কারণে মধ্যবিত্ত ও গরিব পরিবারগুলোতে রমজান এক বাড়তি আতঙ্কে পরিণত হয়। রমজান আসার আগে থেকেই ‘ইফতার পাঠানো’র প্রস্তুতি নিতে হয় তাদের। অনেক সময় দরিদ্র পিতামাতা মেয়ের সুখের জন্য শতকষ্ট বুকে চেপে হাসিমুখে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ইফতার পাঠান। সামাজিকতার এই নিয়মের চাহিদা মেটাতে কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করেন, সুদে টাকা নেন, কেউ নিজের ওষুধ না কিনে চিকিৎসার টাকা জমিয়ে ইফতারসামগ্রী পাঠান। এমনকি মেয়ে বাড়ির ইফতার পাঠানোর জন্য ভিক্ষা পর্যন্ত করেন দরিদ্র বাবা-মা। 
একে অন্যকে হাদিয়া (উপহার) প্রদান করার ব্যাপারে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবেশী, আত্মীয়, মেয়ে-জামাইকে আদর আপ্যায়ন করা ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু নিছক সামাজিক নিয়ম তৈরি করে ইচ্ছা ও সামর্থ্যরে বাইরে কাউকে এ ধরনের ইফতার কিংবা ঈদ উপহার প্রদানে বাধ্য করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব প্রথা হাদিয়া কিংবা ইফতারকে চরমভাবে অপমান করে। কোনো ধরনের সামাজিকতার চাপে কাউকে উপহার বা ইফতার প্রদানে বাধ্য করলে তা কখনো উপহার থাকে না বরং হারাম হয়ে যায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে উপহার খুশি মনে প্রদান করা হয় সেটাই শুধু বৈধ’ (মুসনাদে আহমাদ)। যে উপহারের পেছনে উপহারদাতার সন্তুষ্টি থাকে না, থাকে সামাজিক চাপ তা উপহার থাকে না আবার যে ইফতারের পেছনে অদৃশ্য চাপ থাকে তাও ইফতার থাকে না, পরিণত হয় যৌতুকে। ঈদ উপহার কিংবা ইফতারের নামে কাউকে কোনো কিছু দিতে বাধ্য করা হারাম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম হারাম’ (মুসলিম)। সামাজিকতা, উপহার বা যে নামেই হোক, ইফতারির বোঝা স্ত্রীর পরিবারের ওপর চাপানোর চেষ্টা করবে তা আল্লাহর দরবারে জুলুম বলেই বিবেচিত হবে এবং কেয়ামতের দিন এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না’ (সুরা বাকারা-১৮৮)। এভাবে ঈদ-উপহার কিংবা ইফতার গ্রহণও জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সামান্য আত্মতৃপ্তির জন্য কনে পক্ষকে ঈদ-উপহার কিংবা ইফতার প্রদানে বাধ্য করে তাদের পাঠানো ইফতার গ্রহণ করে পরকালে নিজেকে জাহান্নামের শাস্তির মুখোমুখি করা কিছুতেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

লেখক :  যুবায়ের আহমাদ
 খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।

গাজীপুর কথা