ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যে দুটি আমলেই মিলবে আল্লাহর সাক্ষাৎ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১১ জানুয়ারি ২০২২

যে দুটি আমলেই মিলবে আল্লাহর সাক্ষাৎ

শিরকমুক্ত ইবাদত ও নেক আমল দ্বীনের ভিত্তি। আবার এ আমল দুটির বিনিময়ে ঈমানদার বান্দা মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ পেয়ে ধন্য হবেন। যে কারণে মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ মর্মে ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন যে-
فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
সুতরাং যে তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)

পরকালের সেরা প্রাপ্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থী বান্দার জন্য আয়াতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজেই তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দুটি আমল করার কথা বলেছেন। তাহলে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ চায়, তার করণীয় কী?

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার ঈমানদারদের সুসংবাদ দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ করতেই হবে। আর যারা ঈমানদার তাদের সুসংবাদ জানিয়ে দাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২৩)

আল্লাহ তাআলা দিদার পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়; তাও তিনি কোরআনে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মানুষ! তোমাকে তোমার পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, এরপর তার সাক্ষাৎ ঘটবে।’ (সুরা ইনশিকাক : আয়াত ৬)

সুতরাং আল্লাহর দিদারের জন্য প্রয়োজন-
১. নেক আমল।
২. শিরকমুক্ত ইবাদত।

এ আয়াতের উপর আমল প্রসঙ্গে তাফসিরে এসেছে, আয়াতটি দ্বীনের ভিত্তি। এখানে এমন দুটি শর্ত বর্ণনা করা হয়েছে যার উপর সমস্ত দ্বীনই নির্ভর করছে। তাহলো-
প্রথমত : কার ইবাদত করা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত : কীভাবে ইবাদত করা হচ্ছে। এর উত্তর হলো-
‘একনিষ্ঠতার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। সে ইবাদত হতে হবে নেক আমলের মাধ্যমে। আবার এই নেক আমল হতে হবে একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে।’
এ আয়াতে শিরকমুক্ত ইবাদত ও নেক আমলে পরিপূর্ষ জীবনের প্রতি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিরকমুক্ত থাকার দোয়া
তাই শিরকমুক্ত জীবন পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি একটি দোয়া পড়ার দিকনির্দেশনা এসেছে হাদিসে- নবিজী বলেছেন, ‘শিরক পিপড়ার নিঃশব্দ গতির মতোই তোমাদের মধ্যে গোপনে অনুপ্রবেশ করে।’ তাই ছোট ও বড় শিরক (রিয়া) থেকে বেঁচে থাকতে এ দোয়াটি প্রতিদিন তিনবার পড়া-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকাবিকা শাইআন ওয়া আনা আ’লামু ওয়াসতাগফিরু লিমা লা আ’লামু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি যে কোনো শিরক থেকে আশ্রয় চাই। যা জানি আর যা জানিনা তা থেকে ক্ষমা চাই।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)

শিরক থেকে আরও সতর্কতা
হজরত মাহমুদ ইবনে লবিদ রাদিয়াল্লাহু রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের সম্পর্কে যে বিষয়ে সর্বাধিক আশংকা করি, তা হচ্ছে ছোট শিরক। সাহাবায়ে কেরাম নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শিরক কী? তিনি বললেন- ‘রিয়া’ (লোক দেখানো আমল-ইবাদত বা কাজ)।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যখন বান্দাদের কাজকর্মের প্রতিদান দেবেন, তখন রিয়াকার লোকদেরকে বলবেন- ‘তোমরা তোমাদের কাজের প্রতিদান নেওয়ার জন্য তাদের কাছে যাও, যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা কাজ করেছিলে। এরপর দেখ, তাদের কাছে তোমাদের জন্য কোনো প্রতিদান আছে কি না। কেননা, আল্লাহ শরিকদের শরিকানার সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ,বায়হাকি)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি শরিকদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঊর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোনো নেক আমল করে এবং তাতে আমার সঙ্গে অন্যকেও শরিক করে, আমি সেই আমল শরিকের জন্য ছেড়ে দেই।’
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আমি সেই আমল থেকে মুক্ত; সে আমলকে আমি তার জন্যই করে দেই, যাকে সে আমার সঙ্গে শরিক করেছিল।’ (মুসলিম)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুখ্যাতি পাওয়ার জন্য নেক আমল করে আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে এমনি ব্যবহার করেন; যার ফলে সে ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং যে বা যারা সর্বোচ্চ পুরস্কার বা প্রতিদান মহান প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করবে; তাদের উচিত, কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, বেশি বেশি বিশুদ্ধ নেক আমল করা এবং শিরকমুক্ত ইবাদত-বন্দেগি করা। আল্লাহর সঙ্গে ছোট-বড় কোনো কিছুকে শরিক সাব্যস্ত না করা। শিরক ও রিয়া থেকে বাঁচতে হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি প্রতিদিন ন্যূনতম তিনবার পড়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার প্রভুর সাক্ষাৎ পেতে কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী বেশি বেশি নেক আমল ও শিরকমুক্ত ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে শিরক মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

গাজীপুর কথা